‘ভর্তি পরীক্ষা দিতে গেলে আমাকে হলে ঢুকতেই দেয়নি’

দৈনিকশিক্ষা প্রতিবেদক |

‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিতে গিয়ে, দিতে পারিনি। আমাকে হলেই ঢুকতে দেয়নি, কারণ- আমার চেহেরায় পরিবর্তন। আমি তাদের বুঝাতে পারিনি আজকের আমি আর ছবির আমি একজনই এভাবেই বলেন লেখাপড়া করতে চাওয়া তৃতীয় লিঙ্গ জনগোষ্ঠীর একজন নওশীন আক্তার সিলভিয়া।

অনর্গল ইংরেজিতে কথা বলতে পারা সিলভিয়া বলেন ও লেভেল শেষ করেছি। হায়ার এডুকেশনের (উচ্চতর ডিগ্রি) জন্য এখন ছুটছি। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার অনেক খরচ, সরকারিভাবে কোথাও পড়তে পারলে খুব ভালো হয়।

কথা বলে জানা যায়, সিলভিয়া শুধু লেখাপড়াতেই এগিয়ে না, তিনি প্রথম বাংলাদেশি ট্রান্স সুন্দরী প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়েছেন। এ বিষয়ে সিলভিয়া বলেন, ‘বিউটিফিকেশনের অন্যান্য প্রতিযোগিতায় কত প্রচার, কত অনুষ্ঠান হয় অথচ আমরা যারা পিছিয়ে আছি তাদের নিয়ে এমন একটা বিষয় কেউ জানেই না’।

রুহী আক্তার। একজন তৃতীয় লিঙ্গ। তিনি বলেন, ‘সবার ছোট বেলাটা কতো হাসি-খুশির হয়। আমাদেরটা একদম উল্টো। আমিও স্কুলে পড়তাম। অষ্টম শ্রেণীতে উঠার পর আমার পরিবর্তন আশপাশের সবাই যখন বুঝতে পারে, তখন আমার পাশে কেউ বসতো না। কেউ কথা বলতো না। অভিভাবকরা তাদের ছেলেমেয়েকে আমার সঙ্গে কথা বলতে দিত না। সেই সময়টার কষ্ট বলে বুঝানো যাবে না।

রুহি বলেন, ‘কতো যে বুলি হতে হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে একবছর স্কুলে না গিয়ে বাসায় মায়ের সঙ্গে সময় দেই। এক সময় মাও বিরক্ত হতে থাকেন, তখন বের হয়ে আসি বাসা থেকে। যোগ দেই হিজড়াদের দলে’।

‘আমরাও লেখাপড়া করতে চাই, লেখাপড়ার পরিবেশ চাই। আমরাও পরিবার, দেশ-জাতির জন্য কাজ করতে চাই।’

বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর আজ পর্যন্ত কেন হিজড়াদের সর্বজনীন শিক্ষাব্যবস্থায় যুক্ত করার উদ্যোগ নেই? কেন হিজড়ারা মূলধারার শিক্ষা ব্যবস্থায় জায়গা পেল না, যেটুকু স্বীকৃতি আছে তা নিছক কাগজে-কলমে, কেন? পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র কেউ তাদের পাশে নেই, কী তাদের অপরাধ- এমন নানা জিজ্ঞাসার মধ্য দিয়ে এক অ্যাডভোকেসি সভা করে হিজড়া ও তৃতীয় লিঙ্গদের নিয়ে কাজ করা সংগঠন সম্ভব ফাউন্ডেশন।

গতকাল মোহাম্মদপুর রায়েরবাজারে উত্তর সিটি করপোরেশন কাউন্সিলরের কার্যালয়ে আয়োজিত ‘লিঙ্গ বৈচিত্র্যময় জনগোষ্ঠীর নিরাপদ, সুষ্ঠু ও সুন্দর শিক্ষা ব্যবস্থাই আমাদের লক্ষ্য’ শীর্ষক অ্যাডভোকেসি সভার আয়োজন করে বেসরকারি সংস্থা সংলাপ এর সহযোগিতায় সম্ভব ফাউন্ডেশন।

সমাজকর্মী ও মানসিক স্বাস্থ্যসেবা সঙ্গী রিফাত মুনমুন বলেন, এখন সময় নির্দিষ্ট বিষয় ধরে ধরে এগিয়ে যাওয়া। এজন্য পরিবার থেকে শুরু করে সমাজের প্রতিটা স্তরে জানাতে হবেÑ হিজড়া বা তৃতীয় লিঙ্গ, এরা পরিবার বা সমাজের বোঝা নয়। মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে অনেক বেশি প্রশিক্ষণ দিলেই আচরণগত সমস্যার সমাধান করা সম্ভব।

সাবেক এনজিও কর্মী ও ৩৪ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আজিজুল ইসলাম বলেন, কাজ করতে হবে যৌথভাবে। হিজড়াদের মানসিক পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে বলেন, তাদের আচরণ ঠিক করতে হবে। তারা যে অঙ্গভঙ্গি করে এতে করে সাধারণ মানুষ ভয় পায়, বিরক্ত হয় তাদের এই আচরণ ঠিক করার জন্য প্রশিক্ষণ নেয়া জরুরি।

যোগাযোগ ও গণমাধ্যম বিভাগ ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অল্টারনেটিভ এর জ্যেষ্ঠ প্রভাষক মাহাদী হাসান বলেন, হিজড়া বা তৃতীয় লিঙ্গ যেই হোক তাদের প্রথম ধাক্কা আসে পরিবার থেকেই। তাই পরিবারকে আগে বোঝাতে হবে, এরা তাদেরই সন্তান। তাদের রক্ত মাংসই এদের শরীরে। এদেরকে সমাজের বোঝা না মনে করে সম্পদের পরিণত করুন।

সহযোগী সংগঠন অবয়ব ইয়ুথ সংগঠনের প্রকল্প কর্মকর্তা শোয়েব হাসান নিজেও একজন তৃতীয় লিঙ্গ মানুষ। তিনি বলেন, সঠিক পরিচর্যা পেলে আমরাও যে উন্নয়নের মূলস্রোতে অবদান রাখতে পারবো, তা আমার চেয়ে বেশি আর কে জানে। আমরা চাই সচেতনতা তৈরি হোক এজন্যই কাজ করছি রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে।

সম্ভব ফাউন্ডেশনের সভাপতি তৃতীয় লিঙ্গ অনিন্দিতা আফরা বাবু বলেন, সরকার একটা আইন করেছে, কোনো সংগঠন যদি আমাদের কাউকে চাকরি দেয় তবে ৫% ট্যাক্স মওকুফ করে দেবে। বিভিন্ন অফিস আমাদের চাকরি দেয় ট্যাক্স দেয়ার ২-৩ মাস আগে। ট্যাক্স দেয়া শেষ হলে কোনো অযুহাতে আমাদের চাকরি থেকে বের করে দেয়া হয়। এ কথা কাকে বলবো। এমন পরিস্থিতিতে কেউ কোনো চাকরিতে না গিয়ে টাকা কালেকশনে বেরিয়ে পড়ে।

তিনি বলেন, হিজড়া খারাপ আচরণ করে কারণ তারা খারাপ আচরণ পেয়ে পেয়ে ওই জায়গায় যায়। তাদের সুযোগ করে দিতে হবে নতুবা এই শ্রেণীর মানুষের মেধা কোনোভাবেই প্রকাশ পাবে না। তাদের মূলস্রোতে আনতে হলে সমাজের মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
পেছালো জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স ১ম বর্ষের পরীক্ষা - dainik shiksha পেছালো জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স ১ম বর্ষের পরীক্ষা প্রশ্নফাঁসের মামলায় ১০ জনের কারাদণ্ড, খালাস ১১৪ - dainik shiksha প্রশ্নফাঁসের মামলায় ১০ জনের কারাদণ্ড, খালাস ১১৪ শিক্ষা ভবনের সেই বিপুলকে বদলি, গ্রেফতার চান এমপিও শিক্ষকরা - dainik shiksha শিক্ষা ভবনের সেই বিপুলকে বদলি, গ্রেফতার চান এমপিও শিক্ষকরা পলাতক ফাহিমার ক্যাশিয়ার কামালকে গ্রেফতারের দাবি - dainik shiksha পলাতক ফাহিমার ক্যাশিয়ার কামালকে গ্রেফতারের দাবি দীপু মনির ক্যাশিয়ার পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের সচিব নাজমাকে বদলি - dainik shiksha দীপু মনির ক্যাশিয়ার পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের সচিব নাজমাকে বদলি ঢাকা কলেজের নতুন অধ্যক্ষ অধ্যাপক ইলিয়াস - dainik shiksha ঢাকা কলেজের নতুন অধ্যক্ষ অধ্যাপক ইলিয়াস রাষ্ট্র পুনর্গঠনে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা চাইলেন প্রধান উপদেষ্টা - dainik shiksha রাষ্ট্র পুনর্গঠনে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা চাইলেন প্রধান উপদেষ্টা শিক্ষা কমিশন কেনো হলো না - dainik shiksha শিক্ষা কমিশন কেনো হলো না ১৫ এলাকায় ৬০ কিলোমিটার বেগে ঝড় হতে পারে - dainik shiksha ১৫ এলাকায় ৬০ কিলোমিটার বেগে ঝড় হতে পারে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বন্যায় ক্ষতির পরিমাণ ও সবুজায়নের তথ্য আহ্বান - dainik shiksha শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বন্যায় ক্ষতির পরিমাণ ও সবুজায়নের তথ্য আহ্বান please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0029549598693848