‘মামুনুল হকের সঙ্গে ঝর্ণার বৈধ বিয়ে হয়েছিলো’

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি |

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ থানায় দায়ের করা ধর্ষণ মামলার আসামি হেফাজতে ইসলামের বিলুপ্ত কমিটির যুগ্ম-মহাসচিব মামুনুল হকের সঙ্গে বাদী জান্নাত আরা ঝর্ণার বিয়ে হয়েছিলো। জান্নাত আরা ঝর্ণার ছেলে আব্দুর রহমানের সাক্ষ্যের বরাত দিয়ে মামুনুল হকের আইনজীবী অ্যাডভোকেট ওমর ফারুক নয়ন প্রেস ব্রিফিংয়ে এমন দাবি করেছেন।

সোমবার (২৬ জুন) দুপুরে শহরের নতুন কোর্ট এলাকায় তিনি আব্দুর রহমানের দেওয়া সাক্ষ্যের সার্টিফাই কপি দেখিয়ে এসব কথা বলেন। সেইসঙ্গে তিনি অভিযোগ করেন, রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বরাবরই মিডিয়াতে সাক্ষ্য প্রসঙ্গে মিথ্যাচার করে আসছেন। 

অ্যাডভোকেট ওমর ফারুক নয়ন বলেন, গত ৬ জুন আদালতে জান্নাত আরা ঝর্ণার ছেলে আব্দুর রহমান বলেছেন, ‘আমার মা জান্নাত আরা ঝর্ণা ও আল্লামা মামুনুল হকের বিয়ে বৈধ। তারা দুজন স্বেচ্ছায়-স্বজ্ঞানে বিয়ে করেছেন।’ কিন্তু রাষ্ট্রপক্ষ এই মামলাটি নিয়ে বরাবরই মিথ্যাচার করে আসছে।

নারী ও শিশু আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর ওইদিন মিডিয়াতে বলেছেন, ‘দুইজন সাক্ষী বলেছেন মামুনুল হক ঝর্ণাকে এখানে এনে ধর্ষণ করেছেন। কিন্তু প্রকৃত সত্য হলো ঝর্ণার ছেলে আব্দুর রহমান কখনো বলেননি আমার মাকে ধর্ষণ করেছেন মামুনুল হক।’

মামুনুল হকের আইনজীবী আরও বলেন, ‘২০২১ খ্রিষ্টাব্দের ২৪ নভেম্বর মামলার বাদী যেদিন সাক্ষ্য দিয়েছিলেন সেদিন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মিডিয়ায় বলেছিলেন, ঝর্ণাকে নাকি আমরা ৪১ বার ধর্ষণ করেছে কিনা জিজ্ঞাসা করেছি। আর এই ৪১ বারই নাকি ঝর্ণা হ্যাঁ উত্তর দিয়েছেন। কিন্তু আমরা এদিন মাত্র দুই থেকে তিনবার এই বিষয়ে জিজ্ঞাসা করেছিলাম। এভাবে শুরু থেকেই রাষ্ট্রপক্ষ মিথ্যা তথ্য দিয়ে জাতিকে বিভ্রান্ত করছে।’

ওমর ফারুক নয়ন বলেন, গত ৬ জুন ঝর্ণার ছেলে আব্দুর রহমান আদালতের কাছে তার নিরাপত্তা চেয়েছেন। কিন্তু আদালত থেকে বের হওয়ার পর তাকে ডিবির লোকজন নিয়ে যায়। আব্দুর রহমান সেদিন বলেছেন তাকে খুলনা থেকে পুলিশ তুলে এনে ঢাকার ফারস হোটেলে রেখেছেন। যেখানে তার মা জান্নাত আরা ঝর্ণা ও তার নানাকে আনা হয়েছিলো। সরকারি টাকায় তাদের সব খরচ বহন করা হয়েছে। এসকল কর্মকাণ্ডে প্রমাণিত হয় জান্নাত আর ঝর্ণা মামুনুল হকের বৈধ স্ত্রী। আশা করি তিনি নির্দোষ প্রমাণিত হবেন। 

নিজের জীবনের নিরাপত্তা ঝুঁকিতে উল্লেখ করে নয়ন বলেন, এই মামলার আইনজীবী হিসেবে আমি নিজেকে নিরাপত্তাহীন ও ঝুঁকিতে আছি বলে আমার মতামত প্রকাশ করছি। কারণ এর আগেও নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সাত খুনের ঘটনার সময় আমাদের একজন আইনজীবীকে র্যাব সদস্যরা হত্যা করেছিলেন।

এ প্রসঙ্গে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট রকিব উদ্দিন আহমেদ বলেন, মামুনুল হকের আইনজীবী এসব মিথ্যা অভিযোগ করছেন। তার এসকল বক্তব্যের সঙ্গে বাস্তবতার কোনো মিল নেই।

এদিকে সার্টিফাই কপিতে দেখা যায়, সেখানে মামলার বাদী জান্নাত আরা ঝর্ণার ছেলে আব্দুল রহমান বলেছেন, ‘২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে আমার বাবা-মার মধ্যে বিচ্ছেদ হয়। তারপর আমার মা ঢাকা চলে আসেন। ঢাকায় আসার পর আসামি মামুনুল হকের সঙ্গে আমার মায়ের সম্পর্ক হয়। আমি যতটুকু জানি তাদের বিয়ে হয়। তাদের মধ্যে সম্পর্ক চলতে থাকে। আসামিকে পূর্ব থেকেই চিনতাম। আমার বাবার ঘনিষ্ট বন্ধু ছিলেন। আসামি কুপরামর্শ দিয়ে আমার মাকে দিয়ে আমার বাবাকে তালাক দেওয়ায় এটা সত্য নয়।’

এর আগে ২০২১ খ্রিষ্টাব্দের ২৪ নভেম্বর প্রথম দফায় মামুনুল হকের উপস্থিতিতে কথিত দ্বিতীয় স্ত্রী জান্নাত আরা ঝর্ণার সাক্ষ্য নেন আদালত। একইসঙ্গে ওই বছরের ৩ নভেম্বর মামুনুল হকের বিরুদ্ধে করা ধর্ষণ মামলায় বিচারকাজ শুরুর আদেশ দেওয়া হয়।

তার আগে ২০২১ খ্রিষ্টাব্দের ৩ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে রয়েল রিসোর্টে এক নারীর সঙ্গে অবস্থান করছিলেন মামুনুল হক। ওই সময় স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা এসে তাকে ঘেরাও করেন। পরে স্থানীয় হেফাজতের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা এসে রিসোর্টে ব্যাপক ভাঙচুর করেন এবং তাকে ছিনিয়ে নিয়ে যান।

ঘটনার পর থেকেই মামুনুল হক মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদরাসায় অবস্থান করে আসছিলেন। এ সময় পুলিশ তাকে নজরদারির মধ্যে রাখে। এরপর গত ১৮ এপ্রিল মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদরাসা থেকে গ্রেফতার করা হয় মামুনুলকে। পরে এই ঘটনায় ৩০ এপ্রিল সোনারগাঁ থানায় মামুনুল হকের বিরুদ্ধে বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণ মামলা করেন ওই নারী। তবে ওই নারীকে তার দ্বিতীয় স্ত্রী দাবি করে আসছেন মামুনুল হক।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ভিসি নিয়োগের দাবিতে এবার উত্তরবঙ্গ ব্লকেড বেরোবি শিক্ষার্থীদের - dainik shiksha ভিসি নিয়োগের দাবিতে এবার উত্তরবঙ্গ ব্লকেড বেরোবি শিক্ষার্থীদের দীপু মনি-রতন সিন্ডিকেটের ফিরোজই শিক্ষা অধিদপ্তরের এ ডি! - dainik shiksha দীপু মনি-রতন সিন্ডিকেটের ফিরোজই শিক্ষা অধিদপ্তরের এ ডি! ছাত্র আন্দোলনে নিহতদের ‘জাতীয় বীর’ ঘোষণার দাবি জামায়াতের - dainik shiksha ছাত্র আন্দোলনে নিহতদের ‘জাতীয় বীর’ ঘোষণার দাবি জামায়াতের শিক্ষক আত্মগোপনে দায়িত্বে ছাত্ররা - dainik shiksha শিক্ষক আত্মগোপনে দায়িত্বে ছাত্ররা ভারতে পাঠ্যবই ছাপানোর বিপক্ষে ৯২ শতাংশ বাংলাদেশি - dainik shiksha ভারতে পাঠ্যবই ছাপানোর বিপক্ষে ৯২ শতাংশ বাংলাদেশি পেছালো জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স ১ম বর্ষের পরীক্ষা - dainik shiksha পেছালো জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স ১ম বর্ষের পরীক্ষা ভয়ংকর বিপদের মধ্যে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা: সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী - dainik shiksha ভয়ংকর বিপদের মধ্যে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা: সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী প্রশ্নফাঁসের মামলায় ১০ জনের কারাদণ্ড, খালাস ১১৪ - dainik shiksha প্রশ্নফাঁসের মামলায় ১০ জনের কারাদণ্ড, খালাস ১১৪ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বন্যায় ক্ষতির পরিমাণ ও সবুজায়নের তথ্য আহ্বান - dainik shiksha শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বন্যায় ক্ষতির পরিমাণ ও সবুজায়নের তথ্য আহ্বান কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0039680004119873