সরকারি চাকরিতে ‘মুক্তিযোদ্ধা কোটা’ সংস্কার নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে হঠাৎ করেই রোববার রাতে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ (ঢাবি) দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ক্যাম্পাস। শিক্ষার্থীরা আবাসিক হলগুলো থেকে মিছিল নিয়ে রাজপথে নেমে আসেন। এ সময় তাদের ‘তুমি কে আমি কে, রাজাকার-রাজাকার’, ‘কে বলেছে কে বলেছে, সরকার-সরকার’, ‘রাজাকার আসছে, রাজপথ কাঁপছে’, ‘চেয়েছিলাম অধিকার, হয়ে গেলাম রাজাকার’ এমন নানা স্লোগান দিতে শোনা যায়।
এদিকে, নিজেদের রাজাকার বলায় বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশ্যে রোববার (১৪ জুলাই) দিবাগত রাত ১টা ৩৯ মিনিটে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের ভেরিফায়েড আইডি থেকে একটি পোস্ট করেছেন সমাজকল্যাণমন্ত্রী ডা. দীপু মনি।
ফেসবুক পোস্টে তিনি বলেন, ‘যারা নিজেদেরকে রাজাকার বলে পরিচয় দেয়, তাদের মুক্তিযুদ্ধের শহীদের রক্তস্নাত লাল সবুজের পতাকা হাতে নিয়ে বা সে পতাকা কপালে বেঁধে নিয়ে মিছিল করবার কোনো অধিকার থাকতে পারে না।’
ঘটনার সূত্রপাত রোববার (১৪ জুলাই) বিকেলে গণভবনে চীন সফর উপলক্ষে আয়োজিত প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনের পর থেকে। যদিও কয়েক দিন ধরে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনে রাজপথ উত্তাল করে রেখেছিলেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
সংবাদ সম্মেলনে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে এত ক্ষোভ কেন? তাদের নাতিপুতিরা পাবে না, তাহলে কি রাজাকারের নাতিপুতিরা পাবে? এটা আমার দেশবাসীর কাছে প্রশ্ন। তাদের অপরাধটা কী? নিজের জীবন বাজি রেখে, নিজের পরিবার সব ফেলে যারা মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছে, দিন-রাত খেয়ে না খেয়ে, কাদামাটি পেরিয়ে, ঝড়বৃষ্টি সব মোকাবিলা করে যুদ্ধ করে বিজয় এনে দিয়েছে। বিজয় এনে দিয়েছে বলেই তো আজ সবাই উচ্চপদে আসীন। আজ গলা বাড়িয়ে কথা বলতে পারছে। তা না হলে পাকিস্তানিদের বুটের লাথি খেয়ে থাকতে হতো।’
প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্য অত্যন্ত ‘অবমাননাকর’ দাবি করে রাত সাড়ে ১০টার পর থেকে একে একে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট), জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, যশোর বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ও বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়সহ অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ ক্যাম্পাস ও রাজপথে জড়ো হন।
শিক্ষার্থীরা বলেন, এতদিন তারা কোটার যৌক্তিক সংস্কারের দাবিতে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন কর্মসূচি চালিয়ে আসছিলেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর এমন মন্তব্য তাদের ব্যথিত করেছে। সমাধানের কোনো পথ বাতলে না দিয়ে উল্টো তিনি তাদের ‘রাজাকারের বাচ্চা’ বলে সম্বোধন করেছেন। এটি কোনোভাবেই কাম্য নয়।