‘রাফির ব্যবহার আমাকে মরতে বাধ্য করেছে’

কুমিল্লা প্রতিনিধি |

‘কী অন্যায় করেছিল আমার মেয়ে, তাকে কেন এভাবে জীবন দিতে হলো। বখাটে রাফির কারণে আমার সংসার তছনছ হয়ে গেল। মেয়েকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন ছিল, কিন্তু রাফি তাকে বাঁচতে দিল না।’

বৃহস্পতিবার সকালে কুমিল্লার লাকসাম থানায় বসে এভাবেই আহাজারি করছিলেন চিরকুট রেখে আত্মহত্যা করা স্কুল ছাত্রী ফারজানা আক্তার বৈশাখীর মা জেসমিন বেগম। ঘটনার পর থেকে কান্না থামছে না তার। 

ফারজানা আক্তার বৈশাখী। ছবি : সংগৃহীত

গত ৪ এপ্রিল রাতে লাকসাম পৌরসভার হাউজিং এলাকার ভাড়া বাসায় ঝুলন্ত অবস্থায় বৈশাখীর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এসময়  মরদেহের পাশ থেকে একটি চিরকুট উদ্ধার করা হয়। পরিবারের দাবি, রাফির কারণেই বৈশাখী আত্মহত্যা করেছে।   

বৈশাখী জেলার নাঙ্গলকোট উপজেলার বাঙ্গড্ডা এলাকার গান্দাছি গ্রামের মৃত ফরিদ মজুমদারের মেয়ে ও কুমিল্লা হাইস্কুলের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী। এ ঘটনায় অভিযুক্ত রাফিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। 

পুলিশ ও বৈশাখীর পরিবারের সদস্যরা জানান, মরদেহ উদ্ধারের সময় তার পাশ থেকে একটি চিরকুট পাওয়া গেছে। ওই চিরকুটে শাহাদাৎ হোসেন রাফি নামে এক তরুণকে নিজের মৃত্যুর জন্য দায়ী করেন বৈশাখী। অভিযুক্ত রাফি নাঙ্গলকোট উপজেলার বেরি গ্রামের মিয়াজি বাড়ির জাহাঙ্গীর আলমের ছেলে। 

ওই চিরকুটে বৈশাখী তার মাকে বলে ‘মা আমি মরে যাচ্ছি, পারলে আমাকে মাপ করে দিও। বিশ্বাস কর মা আমি মরতে চাইনি। কিন্তু রাফির রোজকার ব্যবহার আমাকে মরতে বাধ্য করেছে। আমার সাথে সম্পর্কে থাকা অবস্থায় অন্য একটা মেয়ের সাথে সম্পর্কে জড়িয়েছে। সব জানার পরও আমি চুপ ছিলাম। কিন্তু ওর প্রতি আমার ভালোবাসা, আর আমার প্রতি ওর আর ওর বন্ধুদের দুর্ব্যবহার আমাকে বাঁচতে দেয়নি মা। আমার মৃত্যুর জন্য সম্পূর্ণভাবে দায়ী রাফি।’

বৈশাখীর মা জেসমিন বেগম বলেন, বাবা হারা এ মেয়েকে নিয়ে আমার অনেক স্বপ্ন ছিল। সন্তানদের ভালো লেখা-পড়া করাতে নিজ এলাকা থেকে লাকসাম হাউজিংয়ে এসে ভাড়া বাসায় থাকতাম। বৈশাখী ছিল দুই মেয়ের মধ্যে বড়। ছোট মেয়ের বয়স সাত বছর। বৈশাখী পড়াশোনা করতো লাকসাম স্কুল অ্যান্ড কলেজে। অষ্টম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় রাফি নামে ওই বখাটে রাস্তায় আমার মেয়েকে উত্যক্ত করতো। পরে জানতে পারি ছেলেটি নেশাগ্রস্ত। তখন তার কাছ থেকে রেহায় পেতে চলতি বছর মেয়েকে কুমিল্লা নগরীর কুমিল্লা হাইস্কুলে নবম শ্রেণিতে ভর্তি করি। শহরের একটি ছাত্রী নিবাসে সে থাকতো। 

তিনি আরও বলেন, রমজানের ছুটিতে লাকসামে আসার পর রাফি বিভিন্নভাবে তার মেয়ের জীবন অতিষ্ঠ করে ফেলে। এতে সে বাধ্য হয় আত্মহত্যা করে। মেয়ের অনেক স্বপ্ন ছিল। সে ডাক্তারি পড়বে, এমন স্বপ্ন নিয়ে শহরের স্কুলে ভর্তি হয়েছিল। কিন্তু বখাটে রাফি তার জীবন কেড়ে নিল।

বৃহস্পতিবার দুপুরে লাকসাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল্লাহ আল মাহফুজ বলেন, এ ঘটনায় ওই স্কুল ছাত্রীর মা বাদী হয়ে থানায় রাফির বিরুদ্ধে আত্মহত্যার প্ররোচনায় মামলা করেছেন। তাকে গ্রেপ্তার করে বুধবার দুপুরে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। গতকালই ওই ছাত্রীর মরদেহ ময়নাতদন্ত শেষে বিকালে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে আবারো ভর্তি পরীক্ষা চালু হবে - dainik shiksha জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে আবারো ভর্তি পরীক্ষা চালু হবে সরকারি-বেসরকারি স্কুলে ভর্তি: দুই দিনে আবেদন প্রায় দুই লাখ - dainik shiksha সরকারি-বেসরকারি স্কুলে ভর্তি: দুই দিনে আবেদন প্রায় দুই লাখ শিক্ষক নিয়োগেও নামকাওয়াস্তে মনস্তাত্ত্বিক পরীক্ষা হয়: গণশিক্ষা উপদেষ্টা - dainik shiksha শিক্ষক নিয়োগেও নামকাওয়াস্তে মনস্তাত্ত্বিক পরীক্ষা হয়: গণশিক্ষা উপদেষ্টা পাঠ্যপুস্তক থেকে শেখ মুজিব ও শেখ হাসিনার বিষয়বস্তু অপসারণের দাবি - dainik shiksha পাঠ্যপুস্তক থেকে শেখ মুজিব ও শেখ হাসিনার বিষয়বস্তু অপসারণের দাবি এসএসসির ফরম পূরণ শুরু ১ ডিসেম্বর - dainik shiksha এসএসসির ফরম পূরণ শুরু ১ ডিসেম্বর কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের গল্প - dainik shiksha পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের গল্প কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক পাঠ্যপুস্তকে একক অবদান তুলে ধরা থেকে সরে আসার আহ্বান হাসনাতের - dainik shiksha পাঠ্যপুস্তকে একক অবদান তুলে ধরা থেকে সরে আসার আহ্বান হাসনাতের ৬ষ্ঠ ও ৮ম শ্রেণির বাদপড়া শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ - dainik shiksha ৬ষ্ঠ ও ৮ম শ্রেণির বাদপড়া শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0054159164428711