ভারতের পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষক দীপ নারায়ণ নায়ক এক মিলিয়ন ডলার মূল্যমানের গ্লোবাল টিচার প্রাইজ ২০২৩ এর শীর্ষ ১০ তালিকায় জায়গা করে নিয়েছেন।
আসানসোলের জামুরিয়ার তিলকা মাঞ্জি আদিবাসী ফ্রি প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক দীপ নারায়ণ, কোভিড-১৯ লকডাউনের সময় “রাস্তার শিক্ষক” উপাধি অর্জন করেছিলেন তিনি। তাঁর উদ্দেশ্য প্রত্যন্ত গ্রামের খেটে খাওয়া গরীব মানুষ যাদের পড়াশোনা করার ক্ষমতা নেই তাদের ক্ষমতায়ন করা, শিক্ষার্থীদের এবং তাদের পিতামাতাদের পরামর্শ দেওয়া এবং প্রাপ্তবয়স্ক শিক্ষার্থীদের মধ্যে সাক্ষরতার হার উন্নত করা।
মহামারীর মধ্যে, তিনি মাটির দেয়ালকে ব্ল্যাকবোর্ডে এবং রাস্তাগুলিকে শ্রেণীকক্ষে পরিণত করেছিলেন।
কোভিড মহামারীর সময় যখন স্কুল বন্ধ হয়ে যায় তখন দীপ দেখতে পান তাঁর স্কলের ছাত্ররা কেউ গরু চড়াচ্ছে, কেউ বাবা মার সাথে কাজ করছে। দীপ বুঝতে পারেন শিশুরা পড়াশোনা থেকে দূরে চলে যাচ্ছে। তাই শিশুদের অভিভাবকদের সাথে দেখা করে এবং একটি স্বনির্ভর স্কুল চালু করার বিষয়ে তাদের সাথে কথা বলেন। গ্রামের প্রধান এবং অন্যান্য মানুষ জনের সাথে আলোচনার পর, তিনি গ্রামবাসীদের কুঁড়েঘরের সামনের উঠোনকে অস্থায়ী শ্রেণীকক্ষে রূপান্তর করা শুরু করেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই কুঁড়েঘরের দেয়াল ব্ল্যাকবোর্ডে পরিণত হয় যার উপরে ইংরেজি এবং বাংলা বর্ণমালা থেকে শুরু করে গাণিতিক টেবিল পর্যন্ত সবকিছু ফুটে ওঠে ।
আদিবাসী গ্রামবাসীদের জন্য দীপ আশীর্বাদ হয়ে আসেন। এমন একটি সময়ে যখন বেশিরভাগ লোক তাদের বাড়িতে থেকে কোভিড সংক্রমন এড়িয়ে চলছিল, তখন দীপ শিশুদের শেখানোর জন্য প্রতিদিন বাইরে বেরিয়েছিলেন। শিশুদের শেখানো ছাড়াও তাদের বাবা-মা দের দীপ শিশু অপুষ্টি, শিশু পীড়ন এবং পরিবেশগত মতো সমস্যা সম্পর্কেও সচেতন করেন।
মহামারী চলাকালীন সময়ে বাচ্চাদের জন্য দীপ দুপুরের খাবারের ব্যবস্থাও করতেন সাধ্যমত কেক, বিস্কুট, রুটি এবং দুধের মতো খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করে । ষিশুদের মাস্ক পরা, স্যানিটাইজার ব্যবহার এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্যবিধিও তাদের তিনি শিখিয়েছিলেন।
এ বছর গ্লোবাল টিচার অষ্টম বছরে পদার্পন করলো। ইউনেস্কোর সহযোগিতায় এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত -এর বিশ্ব জনহিতৈষী সংস্থা দুবাই কেয়ারের সাথে কৌশলগত অংশীদারিত্বে ইংল্যান্ডের ভার্কি ফাউন্ডেশন দ্বারা বার্ষিক পুরস্কারের আয়োজন করা হয়ে থাকে।