‘লেদা গেদাদের’ পরীক্ষা নিয়ে বোর্ড গঠনের ভাবনা!

মো. সিদ্দিকুর রহমান |

প্রাথমিক শিক্ষা আন্দোলনের একজন কর্মী হিসেবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তর প্রাথমিক শিক্ষার স্বতন্ত্র জনবল দিয়ে পরিচালিত হওয়ার জন্য আন্দোলনের সফলতা অর্জনে গর্ববোধ করছি। ক্যাডার সার্ভিস ছাড়া প্রাথমিক শিক্ষার অভিজ্ঞতাবিহীন কর্মকর্তা দ্বারা পরিচালিত হয়ে আসছে। এ নিয়ে ক্ষোভ, দুঃখের শেষ নেই। কর্মকর্তাদের আন্তরিক প্রচেষ্টা থাকা সত্ত্বেও প্রাথমিক শিক্ষায় অভিজ্ঞতা না থাকায় মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা ব্যস্তবায়ন হোঁচট খাচ্ছে। 

শিশু শিক্ষায় শিশু মনোবিজ্ঞনের জ্ঞান ছাড়া শিক্ষা দেওয়া হলে শিশুর মানসিক বিকাশ ও জ্ঞান অর্জন বাধাগ্রস্থ হয়।  প্রবাদ আছে, ‘মনোবিজ্ঞান ছাড়া শিক্ষা, থলি ছাড়া ভিক্ষা’। সহকারী শিক্ষকের পদটি এন্ট্রি ধরে শতভাগ পদোন্নতি দিয়ে প্রাথমিকে ক্যাডার সার্ভিস সৃষ্টি করার দাবি দীর্ঘদিন ধরে করে আসছি।। এতে শিক্ষা হয়ে উঠবে শিশু শিক্ষাবান্ধব। অভিজ্ঞতাবিহীন কোন কর্মকর্তাকে প্রাথমিক শিক্ষার দায়িত্ব দেওয়া কাম্য নয়।

বঙ্গবন্ধুর সময়ে ড. কুদরাত-ই-খুদা প্রণীত সর্বজন গৃহীত একটি শিক্ষানীতি হয়েছে। সে শিক্ষানীতির আলোকে দেশেরবরেণ্য শিক্ষাবিদের মাধ্যমে প্রণয়ন করা হয়েছে বর্তমান জাতীয় শিক্ষানীতি। যা জাতীয় সংসদে গৃহীত হয়েছে। দেশ পরিচালনার জন্য রয়েছে সংবিধান, সংগঠন চালানোর জন্য থাকে গঠনতন্ত্র, আর শিক্ষাব্যবস্থা পরিচালিত হয় শিক্ষানীতির ভিত্তিতে। আমাদের দেশের শিক্ষানীতির তোয়াক্কা না করে প্রাথমিক শিক্ষা উল্টো দিকে নিজের মত চলছে। 

শিক্ষানীতিতে স্পষ্ট লেখা আছে প্রাথমিক শিক্ষা হবে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত। সে মোতাবেক সারাদেশে প্রত্যেক উপজেলায় ২ থেকে ৪ টি স্কুল ৮ম শ্রেণি উন্নীত করে ক্লান্ত হয়ে পড়ছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগ পরিদর্শন, আর্থিক খরচ উন্নীত ৬ষ্ঠ শ্রেণি থেকে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত কোন দায় নিচ্ছে না। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশক্রমে বিদ্যালয়গুলো ৮ম শ্রেণিতে উন্নীত করা হয়েছে। অথচ ভাবখানা এমন প্রাথমিকের ৮ম শ্রেণিতে উন্নীত সবকিছু যেন, সতিনের ঘরের সন্তানের মতো। অপরদিকে বঙ্গবন্ধু ও তাঁর সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তৃণমূলে গরীব মেহনতি মানুষের সন্তানদের শিক্ষার সুযোগ নিশ্চিত করার স্বপ্নের প্রতি ভয়াবহ আঘাত। 

চলতি নভেম্বর মাসেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিক শিক্ষা বোর্ড আইনের খসড়া প্রকাশ করে। এ খসড়ায় প্রাক প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত মূল্যায়ন ও পরীক্ষা নিয়ে বর্ণনা দেওয়া আছে। এখানে জাতীয় শিক্ষানীতিতে বোর্ড তৈরি করে ৫ম শ্রেনির পরীক্ষা নেওয়া সম্পর্কে কোনো মতামত দেওয়া হয়নি।

শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকের অবৈতনিক প্রাথমিক শিক্ষা প্রবর্তনের ফলে এ দেশের তৃণমূলের জনগণের সন্তানদের জন্য প্রাথমিক শিক্ষা বাণিজ্যকরণের হাত থেকে রেহাই পেয়ে আসছে। বঙ্গবন্ধু ও প্রধানন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রাথমিক শিক্ষা সরকারিকরণের ফলে এদেশের অস্বচ্ছল মানুষের সন্তানদের বিনা টাকায় শিক্ষার সুযোগ নিশ্চিত হয়। বর্তমান সরকারের জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণীত হওয়ার পর এ দেশের সাধারণ মানুষের অবৈতনিক শিক্ষা আরেকধাপ এগিয়ে যাবে, এ ভাবনা ছিল সাধারণ মানুষের। অথচ অষ্টম শ্রেনি পর্যন্ত অবৈতনিক শিক্ষা হলে, বহু শিক্ষার্থী পঞ্চম শ্রেণির পর ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ার সুযোগ নিশ্চিত হতো। শিক্ষায় জাতি সমৃদ্ধ হলে দেশ এগিয়ে যাবে। স্বপ্নপূরণে সহায়ক হবে বঙ্গবন্ধু ও জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকারের।

বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ে তোলার জন্য জাতীয় শিক্ষানীতির আলোকে, প্রাথমিকের শিক্ষা হোক প্রাক-প্রাথমিক থেকে ৮ম শ্রেণি, আমাদের দেশের বর্তমান পরীক্ষা ব্যবস্থা জ্ঞান অর্জনমুখী নয়। খুব সহজ করে বলতে চাই, আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি পরীক্ষায় পাসের হার ১০-১৫ শতাংশ। কেন এত কম পাস হবে? প্রায় সকল শিক্ষার্থীতো পঞ্চম, অষ্টম, এসএসসি, এইচএসসিতে ভালো জিপিএ পেয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করছেন। তবে কেন এত ফেল? কারণ একটাই। আমাদের শিক্ষা ও পরীক্ষা ব্যবস্থা জ্ঞান অর্জনমুখী শিক্ষাব্যবস্থা নয়। অপরদিকে ৫ম শ্রেণির নামে শিক্ষাবোর্ড মুখস্ত বিদ্যা, নোট, গাইড, কোচিংয়ের ব্যাপকতার দিকে হাটছে। 

আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলতে হয় ‘লেদা গেদাকে দিতে হবে জ্ঞান’। এ জ্ঞান পরীক্ষার নামে আতঙ্কের মাধ্যমে নয়। একদিকে জ্ঞান অর্জনমুখী শিক্ষাক্রমের ব্যপক প্রস্তুতি। অন্যদিকে ‘লেদা গেদাদের’ পরীক্ষা নিয়ে বোর্ড গঠনের ভাবনা। 

আজ মনে হচ্ছে প্রাথমিক ও শিক্ষা মন্ত্রণালয় দুটো উল্টো দিকে হাঁটছে। আজ সবচেয়ে আগে প্রয়োজন মন্ত্রণালয় দুইটিকে সমন্বয় করে কাজ করা। সমন্বয়হীনতায় নয়, আসলে আবার দুইটা মন্ত্রণালয়কে আগের মতো একটি করা প্রাথমিকের শিক্ষার মানোন্নয়ন জরুরি প্রয়োজন। 

প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে কয়েকদফা সুপারিশ তুলে ধরছি :
 
* প্রাথমিকে ক্যাডার সার্ভিস সৃষ্টি করে সহকারী শিক্ষক পদ এন্ট্রি ধরে সর্বোচ্চ পর্যায় পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষাবান্ধব ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করা।
*জাতীয় শিক্ষানীতি মোতাবেক অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত অবৈতনিক প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়ন করা। 
* প্রাথমিকে শিক্ষক সংকট দূর করার জন্য প্যানেল ব্যবস্থা চালু করা।
 
আজ দেশের শিক্ষাবিদরা স্তব্ধ। প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে জাতীয় শিক্ষানীতি উপেক্ষিত। ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত অবৈতনিক শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে উঠার স্বপ্ন প্রাথমিকের সচিকসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মাঝে বোধোদয় হোক। অস্বচ্ছল মানুষের অবৈতনিক শিক্ষা নিশ্চিতে বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্ন পূরণ হোক।  এ প্রত্যাশায়। 

লেখক : মো. সিদ্দিকুর রহমান, সভাপতি, বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদ ও সম্পাদকীয় উপদেষ্টা, দৈনিক শিক্ষাডটকম।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ - dainik shiksha আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন - dainik shiksha অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী - dainik shiksha আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ - dainik shiksha শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল - dainik shiksha ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.014408111572266