সপ্তম শ্রেণির পাঠ্যবই থেকে ‘শরীফার গল্প’ শীর্ষক বহুল আলোচিত গল্পটি বাদ দেয়াকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ‘নতজানু’ সিদ্ধান্ত বলে প্রতিবাদ জানিয়েছে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি।
শুক্রবার (২৮ জুন) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ প্রতিবাদ জানায় সংগঠনটি।
গণমাধ্যমে দেয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি বলেছে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এ ধরনের ‘নতজানু’ সিদ্ধান্ত অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মাণে মানুষদের সংগ্রাম ও ইতিহাসকে অশ্রদ্ধারই শামিল। হিজড়া জনগোষ্ঠীর মানবিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকার যে নীতিমালা গ্রহণ করেছে, তার সঙ্গেও সাংঘর্ষিক।
এর আগে নতুন শিক্ষাক্রমের আলোকে প্রণীত সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ের ৩৯ নম্বর পৃষ্ঠায় ‘মানুষে মানুষে সাদৃশ্য ও ভিন্নতা’ নামক অধ্যায়ে থাকা পাঠ্যবইতে থাকা ‘শরীফার গল্প’ নিয়ে দেশজুড়ে বিতর্ক শুরু হয়। পরে ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আবদুর রশীদকে আহ্বায়ক করে বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এরপর বিশেষজ্ঞ কমিটির সুপারিশে গত ৪ জুন পাঠ্যবই থেকে ‘শরীফার গল্প’ বাদ দিতে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডকে (এনসিটিবি) চিঠি দেয় মন্ত্রণালয়।
ওই বিশেষজ্ঞ কমিটির গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি বলেছে, উচ্চপর্যায়ের এই বিশেষজ্ঞ কমিটিতে কোনো চিকিৎসক, মনোবিজ্ঞানী, সমাজবিজ্ঞানী ও হিজড়া সম্প্রদায়ের কোনো প্রতিনিধি ছিলেন না।
সংগঠনটি মনে করে, ‘শরীফার গল্প’টি বাদ দেয়ার সিদ্ধান্তের কারণে বহুত্ববাদের তত্ত্বের ভিত্তিতে যে শিক্ষাক্রম প্রণয়ন করা হলো, তা প্রথম পর্যায়েই বড় ধাক্কা খেল। শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে গল্পটিকে বাদ দেয়ার যে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে তা প্রমাণ করে মৌলবাদ আর জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সরকার যে জিরো টলারেন্স (শূন্য সহিষ্ণুতা) নীতিতে এগিয়ে চলছে, মন্ত্রণালয় তার গুরুত্ব অনুধাবন করতে সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হয়েছে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির এই বিবৃতিতে শহীদজায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী, সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী, বিচারপতি শামসুল হুদা, বিচারপতি মমতাজউদ্দিন আহমেদ, অধ্যাপক অনুপম সেন, নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার, শিল্পী হাশেম খান, শিল্পী রফিকুন নবী, ফওজিয়া মোসলেম, অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন ও লেখক-সাংবাদিক শাহরিয়ার কবিরসহ অনেকে সই করেছেন।