শিক্ষা ব্যবস্থায় নাস্তিক্যবাদ বরদাস্ত করা হবে না বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক। তিনি বলেন, শিক্ষা কমিশন থেকে নাস্তিক, মুরতাদ ও বামদেরকে সরাতে হবে। কায়সার মামুন ও সামিনা লুৎফা নামে দুই কুলাঙ্গারকে শিক্ষা কমিশন থেকে সরাতে হবে। অবিলম্বে শিক্ষা কমিশনে ইসলামী শিক্ষাবিদ ও আলেমদেরকে অন্তর্ভুক্তি করতে হবে।
বৃহস্পতিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৫টার দিকে বৃষ্টির মধ্যে ময়মনসিংহ নগরীর ঐতিহাসিক আঞ্জুমান ঈদগাহ মাঠে আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গণহত্যার বিচার এবং নৈরাজ্যবাদের প্রতিবাদে ময়মনসিংহ জেলা ও মহানগর খেলাফত মজলিস এ সমাবেশের আয়োজন করে।
সমাবেশে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শহীদদের রুহের মাগফেরাত কামনা করে মামুনুল হক বলেন, শেখ হাসিনা বাংলাদেশের মানুষের কাছ থেকে প্রতিশোধ গ্রহণ করতে চেয়েছিল। বাংলাদেশকে অন্য একটি দেশের অঙ্গ রাজ্যে পরিণত করতে চেয়েছিল। শেখ হাসিনার রাজনীতি ছিল বাংলাদেশকে ধংস করার রাজনীতি। এদেশে সম্পদ লুট করে শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যরা লাখ লাখ কোটি টাকা পাচার করে দেশকে তলাবিহীন ঝুড়িতে পরিণত করেছে। যেন বাংলাদেশ বিশ্ব দরবারে মাথা তুলে দাঁড়াতে না পারে। শেখ হাসিনা বাংলাদেশের মানুষের ধর্মীয় অধিকার ছিনতাই করেছে। আলেম উলামাদের মাহফিলে ১৪৪ ধারা জারি করে কোরআনের আওয়াজকে বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করেছিল। বাংলাদেশের প্রতিটি জেলায় জেলায় আমার মাহফিলে ১৪৪ ধারা জারি করে বন্ধ করে দিয়েছিল।
তিনি আরও বলেন, এদেশের মানুষের ধর্মীয় ও অর্থনৈতিক অধিকার ছিনতাই করা হয়েছিল। বাক স্বাধীনতা, ভোটের অধিকার ছিনতাই করে এদেশে এক নায়কতন্ত্র ও ফ্যাসিবাদ কায়েম করেছিল শেখ হাসিনা। কিন্তু জুলাই এবং আগস্টের বিপ্লবের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ এই ফ্যাসিবাদ থেকে মুক্ত হয়েছে। শেখ হাসিনা বাংলাদেশের স্বাধীনতা, মুসলিম জাতিসত্তা ও ইসলামের বিরুদ্ধে কাজ করেছে। সংবিধান থেকে আল্লহর ওপর অবিচল আস্থা ও বিশ্বাস তুলে দিয়েছে। শেখ হাসিনা স্বাধীনতার অঙ্গীকার ভঙ্গ করে সমকামিতাসহ আইন, ধারা, উপধারা আমার দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার ওপর চাপিয়ে দিয়েছিল।
সমাবেশে খুনি হাসিনার শাসনামলে নিহত ও শাহাদাতবরণকারীদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে মামুনুল হক বলেন, শেখ হাসিনাকে উৎখাত করেছি নতুন কোনো ইসলাম বিদ্বেষী শক্তিকে বাংলার মসনদে দেখবার জন্য নয়। ডক্টর ইউনূস সাহেবের সরকারকে আমরা এখন পর্যন্ত সহযোগিতা করে যাচ্ছি। আগামী দিনেও এই সহযোগিতা করে যাওয়ার ইচ্ছা আমাদের আছে। কিন্তু সেই ইচ্ছা সরকারেরও থাকতে হবে। সরকারকে বুঝতে হবে এদেশের ধর্মপ্রাণ মসিলমানদের ছাড়া সরকার পরিচালনা করা সম্ভব নয়। দেশের প্রশ্নে ইসলামের প্রশ্নে মানবতার প্রশ্নে আমরা কারো সাথে আপস করতে প্রস্তুত না। যদি হিন্দুত্ববাদী এবং ইসলামবিরোধী কোনো এজেন্ডা পশ্চিমা বিশ্ব থেকে আমাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়, সেটাকেও আমরা রুখে দাঁড়াতে প্রস্তুত। হিন্দুত্ববাদী শিক্ষা ব্যবস্থাকে উৎখাত করার জন্য আমরা সংগ্রাম করে যাচ্ছি।
সমাবেশে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, শেখ হাসিনার পর ডক্টর ইউনূসের সরকার। আমরা লক্ষণ কিন্তু ভালো দেখতেছি না। ঠান্ডা মাথায় আমরা কথা বলছি, আমাদের ভাষা বুঝবার চেষ্টা করেন। সমকামিতা ও অসভ্যতার নোংরামি এই বাংলাদেশে বরদাস্ত করা হবে না। বৈবাহিক সম্পর্কে ধর্ষণের নামে খবরদারি করার চেষ্টা করলে আমরা কারবালা তৈরি করব। প্রয়োজনে আবার রক্ত দেব, আবার শহিদ হব।
সমাবেশে খেলাফত মজলিস ময়মনসিংহ জেলা শাখার সভাপতি মুফতি হাবিবুর রহমানের সভাপতিত্বে এবং রেজাউল করিমের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য দেন মাওলানা আতাউল্লাহ আমিন, ফজলুর রহমান, আব্দুল মমিন, আবুল হাসনাত জামালী, মুফতি মোস্তাক আহমেদ, মানজির আহসান তাফসির প্রমুখ।