উপমহাদেশে আলেম-ওলামাদের হাত ধরেই মাদরাসা ও ইসলামী শিক্ষার প্রসার হয়েছে। তাই এই শিক্ষার নেতৃত্ব তাদের হাতেই থাকবে বলে জানিয়েছেন মাদরাসা শিক্ষকদের সর্ববৃহৎ ও একক সংগঠন বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের সভাপতি এ এম এম বাহাউদ্দীন।
তিনি বলেন, এই অঞ্চলে মুসলমানদের ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা শুরু হয়েছে আলেম-ওলামাদের মাধ্যমে। প্রতিষ্ঠানিক শিক্ষা শুরু হওয়ার আগে তারাই বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে গিয়ে দ্বীনি শিক্ষা প্রদান করেছেন। মাদরাসা শিক্ষারও প্রধান বিষয়বস্তু ইসলামী শিক্ষা হলেও এখন যুগের চাহিদার কারণে মাদরাসা শিক্ষার্থীদেরকে ইসলামী শিক্ষার পাশাপাশি বিজ্ঞানসহ কর্মমুখী নানা বিষয় পাঠদান করানো হচ্ছে। যার ফলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের চেয়ে অতিরিক্ত বিষয় ও নম্বরে পড়াশুনা করে মাদরাসার শিক্ষার্থীরা কৃতীত্বের সাথে উত্তীর্ণ হচ্ছে। এজন্য মাদরাসাগুলোতে কিছু কর্মচারী নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। কিন্তু তারাই এখন মাদরাসাগুলো নিয়ন্ত্রণে নিতে চায়। যা কোনভাবেই বরদাশত করা হবে না। সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিতদের মাদরাসা প্রধান হওয়ার দুঃসাহসিকতাকে কঠোর হস্তে দমন করা হবে। প্রয়োজনে সারাদেশ থেকে এর বিরুদ্ধে কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
শনিবার বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের সাবেক সভাপতি, সাবেক ধর্ম ও ত্রাণ মন্ত্রী মরহুম মাওলানা এম এ মান্নান এর ১৫তম ওফাত বার্ষিকী উপলক্ষে রাজধানীর মহাখালীস্থ গাউসুল আযম কমপ্লেক্সে সংগঠনটির জাতীয় নির্বাহী কমিটির বিশেষ সভা ও ইসালে সওয়াব মাহফিলে তিনি এসব কথা বলেন।
বাহাউদ্দীন বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মন্ত্রীরা যখন জাতীয় সংসদে বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের পক্ষে কথা বলেছেন, সংবাদ সম্মেলনে ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের কৃতিত্ব দিয়েছেন। তারা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় এসব কথা বলেছেন। মাদরাসা শিক্ষার প্রতি উনার (প্রধানমন্ত্রী) আগ্রহ, রাজনৈতিক চিন্তাভাবনা করেই তিনি জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের সাথে সম্পর্ক রাখছেন এবং আগামী দিনে এই সম্পর্ক আরও মজবুত হবে।
জমিয়াতের সিনিয়র সহ-সভাপতি কবি মাওলানা রুহুল আমীন খান বলেন, মাদরাসা শিক্ষার মজবুত ভিত্তির জন্য যে ইবতেদায়ী স্তরের প্রয়োজন সেটি মাওলানা এম এ মান্নান (রহ.) অনুভব করেছিলেন। কারণ ইবতেদায়ী না হলে পরবর্তী স্তর দাখিল, আলিম, ফাজিল, কামিল পর্যায়ে শিক্ষার্থী কমে যাবে সেটি বুঝতে পেরে তিনি সেই ভীত তৈরি করেছিলেন। এখন মাদরাসা শিক্ষকরা যে বেতন স্কেল, অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছেন তা এক সময় কেউ কল্পনাও করনেনি। মাওলানা এম এ মান্নান (রহ.) সেই সুযোগ তৈরি করে দিয়েছিলেন মাদরাসা শিক্ষকদের জন্য।
মহাসচিব অধ্যক্ষ মাওলানা শাব্বীর আহমদ মোমতাজী বলেন, ক্ষমতাশালী ব্যাক্তিবর্গ অনেকেই অনেক সময় জমিয়াতকে ধ্বংস করার গভীল ষড়যন্ত্র করেছেন। কিন্তু তারা নিজেরাই ধ্বংস হয়ে গেছে। জমিয়াতুল মোদার্রেছীন আল্লাহর রহমতে আপন জায়াগাতেই বহাল আছে। তিনি বলেন, বর্তমানেও একটি সংগঠন বিভিন্ন লোভ-লালসা দিয়ে আমাদের নেতৃবৃন্দকে নিয়ে যাওয়ার ষড়যন্ত্র করতেছে। ইনশাআল্লাহ পূর্বের ন্যায় এবারও তারা ব্যর্থ হতে বাধ্য।
তিনি বলেন, ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়, মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তর আমাদের আন্দোলনের ফসল। আজ তারা মাদরাসা শিক্ষা ও শিক্ষকদের জন্যই কঠিন শর্তারোপ করছে, শিক্ষকদের হেনস্তা করছে। এসব মেনে নেয়া হবে না। সভায় কওমী মাদরাসার মত আলিয়া মাদরাসাগুলো খুলে দেয়ার প্রস্তাব করা হয়। পাশাপাশি সারাদেশে বঙ্গবন্ধুর জীবনী নিয়ে সেমিনার করার ঘোষণা দেয়া হয়।
এতে আরও বক্তব্য রাখেন জমিয়াতের সহ-সভাপতি ও ইসলামিক ফাউন্ডেশনের গভর্নর মাওলানা কফিল উদ্দীন সরকার ছালেহী, জৌনপুর পীরসাহেব মাওলানা মাহবুবুর রহমান, সহ-সভাপতি অধ্যক্ষ মাওলানা ড. সৈয়দ শরাফত আলী, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুর রাজ্জাক, সহ-সভাপতি উপাধ্যক্ষ মাওলানা নূরুল ইসলাম, যুগ্ম মহাসচিব অধ্যক্ষ এ কে এম মাহবুবুর রহমান, অধ্যক্ষ মাওলানা আ খ ম আবুবকর সিদ্দীক, অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুর রব, অধ্যক্ষ মাওলানা আ ন ম হাদিউজ্জামান, সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ মাওলানা হাসান মাসুদ, সহকারী মহাসচিব অধ্যক্ষ মাওলানা আবুল বয়ান হাশেমী, অধ্যক্ষ মাওলানা হোসাইন আহমদ ভূইয়া (ফেনী), অধ্যক্ষ মাওলানা সরওয়ারে জাহান (সিলেট), অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুল হাকিম জেহাদী (গাজীপুর), অধ্যক্ষ মাওলানা আবু জাফর মো. ছাদেক হাসান (ঢাকা), উপাধ্যক্ষ মাওলানা মোবাশ্বিরুল হক নাঈম (ভোলা), ড. হাফেজ মো. আব্দুল করিম (কুষ্টিয়া)। এ সভায় সারাদেশ থেকে আগত জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের নির্বাহী কমিটির নেতৃবৃন্দ ও জেলা/মহানগরীর সাংগঠনিক সম্পাদকমন্ডলী উপস্থিত ছিলেন। প্রেস বিজ্ঞপ্তি।