ছাত্রলীগের দুই নেতাকে নির্মমভাবে মারধরের ঘটনায় আলোচনায় পুলিশের সাময়িক বরখাস্ত হওয়া অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) হারুন অর রশিদ। ওই ঘটনায় পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) সানজিদা নাম উঠে এসেছে।
জানা যায়, এডিসি সানজিদাকে নিয়েই রাজধানীর বারডেম হাসপাতালে ঘটনার সূত্রপাত হয়। এ বিষয়ে গণমাধ্যমে পৃথক বক্তব্য দেন এডিসি হারুন অর রশিদ ও এডিসি সানজিদা।
মঙ্গলবার (১২ সেপ্টেম্বর) রাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক উপ প্রেস সচিব আশরাফুল আলম খোকন তার ভেরিফাইড ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন। নিম্নে পোস্টটি হুবুহু তুলে ধরা হল:
‘আপনি অসুস্থ, আপনার হাজব্যান্ড জানেনা, আপনার আরেক বিভাগের স্যার কিভাবে জানে?
যদি আপনি জানিয়ে থাকেন, তাহলে এপয়েন্টম্যান্টের জন্য আপনিতো আপনার হাজব্যান্ডকে বলতে পারতেন। কারণ আপনার হাজব্যান্ডের পদ-পদবি আরো বড়।
স্বামীর চেয়ে স্যার যখন বেশি আপন হয়, তখন বিষয়টা অস্বাভাবিক না?
আপনার নিজের বড় বোনও ঢাকা মেডিকেলের ডাক্তার, যেহেতু উল্টাপাল্টা পোশাকের বিষয় আপনিই বলেছেন, ইসিজি ইটিটি’তো আপনি ওনার ওখানেও করতে পারতেন।
এছাড়া পুলিশ হাসপাতাল হচ্ছে দেশের অন্যতম ভালো একটা হাসপাতাল, আপনিতো সেখানেও যেতে পারতেন।
এই এডিসি হারুনকে একসপ্তাহ আগেও আপনার হাজব্যান্ড অনুরোধ করেছিল তার সংসার না ভাঙার জন্য। এরপরও কেন তাঁকেই আপনার সাথে নিতে হলো।আর আপনার হাজব্যান্ড কেন তাকে অনুরোধ করেছিল?
আরও পড়ুন
পিস্তলের বাট দিয়ে আমার দাঁত ভেঙেছে এডিসি হারুন: ছাত্রলীগ নেতা নাঈম
আপনি যে বারডেমে এটা আপনার হাসব্যান্ড কিভাবে জানলো ? ওনাকেও কি আপনিই জানিয়েছিলেন ? মানে তাদের দুজনকেই আপনি জানিয়েছেন?
সংসার বাঁচাতে চাওয়া কি একটি বেচারা স্বামীর জন্য অপরাধ?
চ্যানেল আইতে পুলিশ কর্মকর্তা সানজিদার স্বাক্ষাৎকার দেখার পর এই প্রশ্নগুলো মনে আসলো।’
এদিকে এডিসি হারুন অর রশিদের (সাময়িক বরখাস্ত) ছাত্রলীগের দুই নেতাকে মারধরের ঘটনার বিষয়ে এডিসি সানজিদা আফরিন গণমাধ্যমকে বলেন, গত শনিবার তার স্বামী রাষ্ট্রপতির সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) আজিজুল হক মামুনই আগে এডিসি হারুনের গায়ে হাত তোলেন। এছাড়া তাকেও বিনা কারণে মারধর করেন তার স্বামী।
সানজিদা আফরিন আরও বলেন, আমার স্বামীই হারুন স্যারকে প্রথম আঘাত করে।
আরও পড়ুন: আমার স্বামীই হারুন স্যারকে প্রথম আঘাত করেন: এডিসি সানজিদা
‘স্যারকে জানালে তিনি আমাকে বলেছিলেন- ঠিক আছে, আমি আশপাশে আছি। আমি এসে ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলে দিচ্ছি। এরপর স্যার আসলেন। আসার পর একজন ডাক্তার ম্যানেজ হলো। এরপর তিনি কিছু টেস্ট দিলেন। আমি ব্লাড টেস্টের জন্য স্যাম্পল দিলাম। ইকু আর ইসিজিও করানো হলো।’
সানজিদা বলেন, “এই ঘটনার সময় যে রুমে ইটিটি করানো হয় সেই রুমে ছিলাম আমি। ইটিটি করানোর ১৫/২০ মিনিট পর আমি বাইরে একটা গণ্ডগোলের শব্দ শুনি। আমার কানে প্রথম এসেছিল হারুন স্যারের কণ্ঠ- ‘ভাইয়া, আপনি আমার গায়ে হাত দিলেন কেন? আপনি তো আমাকে মারতে পারেন না। আমাকে মারছেন কেন?’
‘এরপর হট্টগোলের মধ্যে দেখলাম আমার হাজবেন্ডসহ বেশ কয়েকজন স্যারকে (হারুন অর রশীদ) মারতে মারতে ইটিটি রুমের ভেতরে নিয়ে আসলেন। ওই সময় স্যার নিজের সেফটির জন্য আমি যেখানে দাঁড়ানো ছিলাম সেই রুমের কোনার দিকে দৌড়ে এসে দাঁড়ালেন। ইটিটি রুমে এতগুলো লোক ঢোকার কারণে তখন সেখানে একটা বিশ্রী পরিবেশ তৈরি হয়। তখন আমি চিৎকার করছিলাম।”
তিনি বলেন, ‘এরপর আমার হাজবেন্ড তার সঙ্গে থাকা লোকজনকে বললেন- এই, ভিডিও কর। এরপর সবাই ফোন বের করে ভিডিও করা শুরু করে। যখন তারা ভিডিও শুরু করে, তখন আমি আমার হাজবেন্ড এবং তার সঙ্গে থাকা লোকজনের সঙ্গে চিল্লাচিল্লি শুরু করছিলাম।
‘যারা ভিডিও করছে আমি তাদের মোবাইল কেড়ে নেয়ার চেষ্টা করি। এ সময় তাদের হাতের সঙ্গে লেগে আমার হাতেও সামান্য ব্যথা পাই। কারণ আমি চাচ্ছিলাম না, ওই অবস্থায় কেউ আমার ভিডিও করুক। আর আমার হাজবেন্ডের সঙ্গে যেসব ছেলে ছিল আমি তাদের কাউকে চিনতামও না।
‘ওই অবস্থায় আমার হাজবেন্ড আমার গায়ে হাত তোলে এবং স্যারকে বের করার চেষ্টা করে। তখন স্যারের কাছে বিষয়টি সেফ মনে হয়নি। এরপর স্যার কিছুক্ষণ অপেক্ষা করছিলেন। তখন হাসপাতালের সিকিউরিটির লোকজনও আসলেন। এর ১০/১৫ মিনিট পর থানা ফোর্স এলে তারা সেখান থেকে বের হয়ে যায়।’