দৈনিকশিক্ষা প্রতিবেদক: শহীদ বুদ্ধিজীবী সাংবাদিক সৈয়দ নাজমুল হকের সহধর্মিনী সুলতানা নাজমুল হক বলেছেন, ১০ ডিসেম্বর রাতে আল বদরদের সঙ্গে নিয়ে পাক-আর্মি বাসায় প্রবেশ করে চোখ বেঁধে মাইক্রোবাসে তুলে নেয় আমার স্বামীকে। এরপর আর তাঁকে খুঁজে পাওয়া যায়নি।
বৃহস্পতিবার শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে রাজধানীর ভাসানটেক সরকারি কলেজে আয়োজিত সম্মাননা অনুষ্ঠানে দেয়া বক্তব্যে অশ্রুসজল এ শহীদ জায়া স্বামীকে হারানোর ভয়ংকর স্মৃতি তুলে ধরেন। কলেজের কলেজের স্বাধীনতা মিলনায়তনে আয়োজিত ওই অনুষ্ঠানে তাকে সম্মাননা জানায় কলেজ কর্তৃপক্ষ।
সুলতানা নাজমুল হক আরো বলেন, বিজয়ের দুই দিন আগে পরাজয় নিশ্চিত জেনে পাকিস্তানি হানাদার, স্বাধীনতাবিরোধী ও তাদের দোসররা বাংলাদেশকে মেধাশূন্য করতে বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে। তবে স্বাধীনতা বিরোধীরা বাঙালিদের দাবিয়ে রাখতে পারেনি। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে দেশ স্বাধীন হয়েছে।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন অনুষ্ঠানের আহ্বায়ক বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক নূপুর দত্ত। আলোচনায় অংশ নেন বাংলা বিভাগের অধ্যাপক সেলিনা আক্তার,শিক্ষক পরিষদের সম্পাদক এবং উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. মামুন রেজা, গার্হস্থ্য অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক তানিয়া শারমিন খান, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. সমীরণ সরকার, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আবদুল্লাহ আল মোহন। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন ইতিহাস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আসমা আহসান।
প্রসঙ্গত, শহীদ সৈয়দ নাজমুল হক পাকিস্তান প্রেস ইন্টারন্যাশনালের চিফ রিপোর্টার ছিলেন। একই সঙ্গে তিনি কলম্বিয়া ব্রডকাস্টিং সার্ভিস এবং হংকংয়ের এশিয়ান নিউজ এজেন্সির ঢাকা সংবাদদাতা ছিলেন। তিনি ঢাকা টাইমসের সিটি এডিটর হিসেবেও কাজ করেছেন। ছাত্রাবস্থায় প্রগতিশীল রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তিনি নিয়মিতভাবে অর্থনৈতিক-সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বিষয়ে ‘ডন’, ‘পাকিস্তান অবজারভার’ পত্রিকায় প্রবন্ধ লিখতেন। যুদ্ধ চলাকালীন নাজমুল হক তাঁর লেখনীর মাধ্যমে দেশের স্বাধীনতাকামী মুক্তিযোদ্ধাদের সমর্থন দেন এবং দখলদার পাকিস্তান বাহিনীর অত্যাচারের কাহিনী তাঁর লেখনীর মাধম্যেই পৃথিবীর একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে বিদেশি সংবাদপত্রের মাধ্যমে পৌঁছে দিতে থাকেন।
আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা থেকে মুক্ত হওয়ার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দের অক্টোবর মাসে যখন ইউরোপ ও লন্ডন সফরে যান তখন তাঁর একান্ত সচিব হিসেবে কেবল সৈয়দ নাজমুল হককে নিয়ে যান। সৈয়দ নাজমুল হক নিয়মিতভাবে ঢাকা বেতার, টেলিভিশনে নাটক, কথিকা ও একাঙ্কিকায় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছেন। বাঙালি জাতির চূড়ান্ত বিজয়ের মাত্র ৬ দিন আগে ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ১০ ডিসেম্বর আলবদর বাহিনী ও পাকিস্তনি সেনারা তাকে তুলে নিয়ে যায়। এরপর তাঁর আর কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি।