অতিথি পাখির আগমনে জাবিতে উত্সবের আমেজ

জাবি প্রতিনিধি |

রাজধানীর অদূরে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) পুরো ক্যাম্পাসই যেন নিবিড় আলিঙ্গনে জড়িয়ে রেখেছে প্রকৃতি। এখানকার বৈচিত্র্যপূর্ণ ভূমিরূপ, নানা প্রজাতির বৃক্ষরাজি, ছোট-বড় লেক আর বিভিন্ন প্রজাতির জীববৈচিত্র্য বিমোহিত করে সবাইকে। বছর ঘুরে হেমন্তের বিদায়বেলায়ই ক্যাম্পাস হয়ে ওঠে অপরূপ। শীতের শুরুতেই ১০ থেকে ১৫টি লেকে ফুটতে থাকে লাল শাপলা। আগমন ঘটে হাজারো অতিথি পাখির।

প্রতিবছর নভেম্বরের শুরু থেকেই ক্যাম্পাসে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে এক ধরনের উচ্ছ্বাস-আবেগ ছড়িয়ে পড়ে। অতিথির আগমন ঘিরে ক্যাম্পাসজুড়ে বিরাজ করে এক উত্সবের আমেজ। ক্যাম্পাসজুড়ে থাকে দর্শনার্থীদের পদচারণ। পরিযায়ী পাখিদের আগমন ঘিরেই এমন উন্মাদনা।

নভেম্বরের শেষে এবং ডিসেম্বরের শুরুর দিকে উত্তরে শীতপ্রধান সাইবেরিয়া, মঙ্গোলিয়া, চীন, নেপাল, জিনজিয়াং অঞ্চল থেকে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চল বাংলাদেশে আসে অসংখ্য অতিথি পাখি। জানুয়ারি মাস পর্যন্ত আসতে থাকে এই পাখি। আর ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে ওরা আবাসস্থলে ফিরে যেতে শুরু করে।

বাংলাদেশের যেসব স্থানে এই অতিথি পাখি আসে তার মধ্যে অন্যতম জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। বিগত কয়েক বছর ক্যাম্পাসে অতিথি পাখি এসেছে তুলনামূলক কম। এবার শীতের শুরুতেই জাবির প্রতিটি লেক ও জলাশয় দাপাচ্ছে বিপুলসংখ্যক অতিথি। পরিযায়ী পাখির কিচিরমিচির শব্দ যেন উত্সবের অনুষঙ্গ হয়ে বাজছে না, তা অনুরণিত হচ্ছে বিষাদের সুরে।

ক্যাম্পাসে বরাবরের সেই উত্সবের আমেজ এবার অনুপস্থিত। উপাচার্যবিরোধী আন্দোলন ও তাতে রাশ টানতে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করায় জাবির দুঃসময় চলছে। নেই কোনো উত্সব, নেই কোনো আয়োজন। পুরো ক্যাম্পাসেই সুনসান নীরবতা। নির্জন ক্যাম্পাসে তাই অতিথিরাও বুঝি এবার এসেছে চুপি চুপি। জাবির লেকগুলোর মধ্যে

পরিবহন চত্বর লেক, প্রশাসনিক ভবনের সামনের লেক, বোটানিক্যাল গার্ডেনের ভেতরের লেক,  বোটাানিক্যাল গার্ডেনসংলগ্ন ওয়াইল্ড লাইফ রেসকিউ সেন্টার লেক, জাহানারা ইমাম ও প্রীতিলতা হলসংলগ্ন লেক, সুইমিংপুলসংলগ্ন লেকে সবচেয়ে বেশি অতিথি পাখির আগমন ঘটে। এর মধ্যে তিনটি লেককে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পাখির অভয়ারণ্য ঘোষণা করেছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগ জানায়, জাবির লেকগুলোতে ১৯৮৬ সাল থেকেই অতিথি পাখিরা আসছে। আগে দেশি-বিদেশি মিলে ১৯০ প্রজাতির পাখির দেখা মিলত এখানে। এগুলোর মধ্যে ১২০টি দেশি ও ৭০টি বিদেশি প্রজাতির পাখি। এদের মধ্যে ছোট সরালি, চিতা টুপি, বড় সরালি, গার্গিনি, বামুনিয়া, হাঁসপাখি, মুরহেন, খঞ্জনা, নর্দান, পিনটেইল, কোম্বডাক, পচার্ড, লাল গুড়গুটি, জল পিপি, কলাই, শামুক ভাঙ্গা, লেসার হুইসেল, নাকতা, মানিকজোড় এবং ভিনদেশি বকসহ আরো নাম না জানা হরেক প্রজাতির অতিথি পাখি রয়েছে। তবে বর্তমানে এই সংখ্যা খুবই কম। এখন ক্যাম্পাসে সাত থেকে আট প্রজাতির পাখির দেখা মেলে।

সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, পাখির বিচরণের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ব্যর্থ হচ্ছে। চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী শামীম মিয়া বলেন, ‘ভর্তি হওয়ার আগে এই বিশ্ববিদ্যালয়কে চিনেছিলাম অতিথি পাখির অভয়ারণ্য হিসেবে। কিন্তু আমাদের অত্যাচারেই অতিথি পাখিরা ক্যাম্পাস ছেড়ে যাচ্ছে। এবার তুলনামূলক বেশিসংখ্যক পাখির আগমন ঘটলেও এটা মনে করার কারণ নেই যে ওদের জন্য অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিত হয়েছে।’

এ প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মনোয়ার হোসেন বলেন, ‘এবার তুলনামূলক আগেই অতিথি পাখিরা চলে এসেছে। এটা মূলত আবহাওয়ার পরিবর্তনের ফল। এটা আমাদের জন্য শুভ বার্তা নয়।’ তিনি বলেন, ‘পাখির বিচরণের উপযুক্ত পরিবেশ আমরা নিশ্চিত করতে পারছি না। জলাশয় বা লেকগুলো পরিষ্কার না করা, খাদ্যসংকট, মাছ চাষ করার জন্য জলাশয়ে কীটনাশক প্রয়োগ, ঝোপঝাড় কেটে উজাড় করা, পাখির বিশ্রামের পর্যাপ্ত স্থান না থাকা, অতিরিক্ত কোলাহল, দর্শনার্থীসহ বিভিন্ন বর্জ্য জলাশয়ে ফেলার কারণে অতিথি পাখির আগমন কমে যাচ্ছে।’

পাখি বিশেষজ্ঞ ও প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান বলেন, ‘এবার ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায় এবং দর্শনার্থী কম আসায় পাখিরা কিছুটা স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছে। ওদের কেউ বিরক্ত করছে না বলে পাখির সংখ্যা বেড়েছে। কোলাহলমুক্ত পরিবেশ পাখিদের খুবই পছন্দ। আমাদের সবাইকে সচেতন হতে হবে। সর্বোপরি প্রকৃতিকে ভালোবাসতে হবে। নিজ নিজ অবস্থান থেকে প্রকৃতি সংরক্ষণে উদ্যোগ নিতে হবে।’

প্রসঙ্গত, অতিথি পাখিদের রক্ষায় মানুষকে সচেতন করতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগ প্রতিবছর ক্যাম্পাসে পাখি মেলার আয়োজন করে থাকে। পাশাপাশি পাখিদের অবাধ বিচরণ সহায়ক নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়ে থাকে। ক্যাম্পাসে এ বছরও জানুয়ারিতে পাখি মেলার আয়োজন হচ্ছে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না - dainik shiksha সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু - dainik shiksha চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় - dainik shiksha প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট - dainik shiksha রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0058491230010986