অনুতোষ কুমার। ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর সরকারি কে এম এইচ কলেজের অধ্যক্ষ তিনি। তাঁর অদক্ষতায় কলেজের প্রশাসনিক ও শিক্ষাব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে বলে অভিযোগ। এ নিয়ে অভিভাবকদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ৩০ মে ওই কলেজে যোগ দেন অনুতোষ। এর পর থেকে কলেজটি অনিয়ম ও দুর্নীতির স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে। অনুতোষ তাঁর আজ্ঞাবহ তিন সদস্য ক্রয় কমিটির মাধ্যমে বিভিন্ন দুর্নীতি করেন। কোনো শিক্ষক এসব দুর্নীতি নিয়ে কথা বললে তাঁকে এসিআর (বার্ষিক গোপনীয় রিপোর্ট) রিপোর্টে কম নম্বর দেয়ার ও বদলি করার সুপারিশের ভয় দেখানো হয়।
এ ছাড়া প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মাল্টিমিডিয়া ক্লাস করানোর জন্য বর্তমান সরকারের কঠোর নির্দেশনা থাকলেও ওই অধ্যক্ষ মাল্টিমিডিয়া ক্লাস উঠিয়ে দিয়েছেন। ক্লাসগুলো থেকে প্রজেক্টর খুলে নেয়া হয়েছে।
এর বাইরে ওই অধ্যক্ষ কলেজে আয়োজিত জাতীয় অনুষ্ঠানে কখনোই হাজির হন না। কলেজের অ্যাসেম্বলি পিয়ন দ্বারা পরিচালিত হয়। অধ্যক্ষ কোনো দিনই অ্যাসেম্বলিতে উপস্থিত থাকেন না।
অন্যদিকে অধ্যক্ষের উদাসীনতার সুযোগে অধিকাংশ শিক্ষক ঠিকমতো কলেজে আসেন না। এমনকি ছুটি নেয়ারও প্রয়োজন বোধ করেন না তাঁরা। ছুটির বইয়ের আলামতও নেই কলেজে। শিক্ষকরা অনুপস্থিত থাকায় ক্লাসও হয় কম।
এদিকে এইচএসসি পরীক্ষার এখনো তিন মাস বাকি থাকলেও দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বিদায় সংবর্ধনা দেয়া হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার কলেজ চত্বরে অধ্যক্ষ অনুতোষকে প্রধান অতিথি করে ওই শিক্ষার্থীদের এ সংবর্ধনা দেয়া হয়।
যদিও অধ্যক্ষের দাবি, শিক্ষার্থীরা নিজেরাই এ অনুষ্ঠান করেছে। তিনি শুধু অনুষ্ঠান করার অনুমতি দিয়েছেন।
অভিভাবকরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘পরীক্ষার তিন মাস আগে শিক্ষার্থীদের কলেজ বন্ধ করে দেয়া ঠিক হয়নি। তাদের (শিক্ষার্থীদের) শিক্ষকদের কাছ থেকে এখনো অনেক শেখার আছে।’
ওই কলেজের অবসরপ্রাপ্ত সহকারী অধ্যাপক ফারজ্বেল হোসেন মণ্ডল বলেন, ‘শিক্ষকদের কাছে শিক্ষার্থীদের যাওয়া-আসা থাকলে শিক্ষার্থীদের মনোবল বাড়ে ছাড়া কমে না। কিন্তু পরীক্ষার তিন মাস আগে কলেজ থেকে ছেড়ে দিলে এ দীর্ঘ সময়ে অনেক শিক্ষার্থী পড়াশোনা থেকে অমনোযোগী হতে পারে।’
তবে নিজের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন অধ্যক্ষ অনুতোষ। তিনি বলেন, ‘কম্পিউটার বেশ কয়েকটি নষ্ট হয়ে যাওয়ায় ও চালু কম্পিউটার অফিসের কাজে প্রয়োজন হওয়ায় কম্পিউটার ল্যাবটি বন্ধ রাখা হয়েছে। এ ছাড়া অ্যাসেম্বলির জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে গেম টিচার রিজাউল করিমকে। তিনি (রিজাউল) অসুস্থ থাকায় আপাতত অফিসের পিয়ন দিয়ে অ্যাসেম্বলি পরিচালনা করা হচ্ছে।’
ঝিনাইদহ-৩ (কোটচাঁদপুর-মহেশপুর) আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) অ্যাডভোকেট শফিকুল আজম খান চঞ্চল বলেন, ‘এমন অভিযোগ আমি আগেই শুনেছি।’ বিষয়টি এমপি দেখবেন বলে জানান।