রূপগঞ্জের কাঞ্চন পৌরসভা এলাকার রানীপুরা আলিম মাদরাসার অধ্যক্ষ শেখ মোঃ আতিকুল্লার বিরুদ্ধে ছাত্রী নির্যাতন, জাতীয় পতাকা অবমাননা ও অনুপস্থিতিসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। তিনি প্রতিষ্ঠানটি স্বৈরাচারী পন্থায় পরিচালনা করছেন— এমন অভিযোগও উঠেছে।
গত রবিবার দুপুরে এই প্রতিবেদক উপজেলার রানীপুরা আলিম মাদরাসা ভবনের সামনে টাঙানো পতাকাটি পুরনো ও ছেঁড়া দেখে বিদ্যালয় অধ্যক্ষকে জানাতে গেলে তিনি উপস্থিত না থাকায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল ফাতে মোহাম্মদ সফিকুল ইসলামকে মোবাইল ফোনে বিষয়টি জানান। তিনি কিছুক্ষণের মধ্যে সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা আশরাফুল আলম সিদ্দিকীকে ঘটনাস্থলে পাঠিয়ে মাদরাসা অধ্যক্ষকে পুরনো ও ছেঁড়া পতাকা অপসারণ করে তাত্ক্ষণিকভাবে নতুন পতাকা টাঙাতে বাধ্য করেন। স্থানীয় অনেকেই বলেন, মাদরাসা অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে রয়েছে ছাত্রীদের যৌন হয়রানি ও নির্যাতনের অভিযোগ। রানীপুরা এলাকার অভিভাবক বিলকিস বেগম জানান, তার মেয়ে সাদিয়া আক্তার রানীপুরা মাদরাসার ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী। গত ১০ অক্টোবর ভুলক্রমে শ্রেণিকক্ষে কলম না নেয়ায় সাদিয়াকে পিটিয়ে আহত করে ওই অধ্যক্ষ। পরে প্রচুর টাকা ব্যয়ে চিকিত্সার পর সেরে ওঠে সে। বিষয়টি নিয়ে ম্যানেজিং কমিটি ও অভিভাবকরা প্রতিবাদ করলে অধ্যক্ষ তাদের বিরুদ্ধে মামলা দেয়ার হুমকি দেয়। ওই অধ্যক্ষের নির্যাতনের ভয়ে অনেকে ওই মাদরাসায় যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে বলেও জানা গেছে।
মাদরাসার এক শিক্ষার্থী জানায়, অধ্যক্ষ আতিকুল্লা হুজুর নানাভাবে ছাত্রীদের গায়ে আদরের নামে হাত দেন। আবার শাস্তি দিতে চাইলেও স্পর্শকাতর স্থানে হাত দিয়ে যৌন হয়রানি করে থাকেন। এসব কারণে অনেক ছাত্রী বাড়িতে লেখাপড়া করে কেবল পরীক্ষায় অংশ নেয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মাদরাসার এক শিক্ষক জানান, মন্ত্রীর স্বাক্ষর জাল করার অপরাধে বরিশালের উজিরপুর মাদরাসা থেকে চাকরিচ্যুত হয় ওই অধ্যক্ষ। আর রানীপুরা মাদরাসায় যোগদান করার পর থেকেই বিভিন্নভাবে শিক্ষক, শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে ঘুষ নেয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। তিনি আরো জানান, জামায়াত সংশ্লিষ্টতার কারণে গোপনে তিনি ওই সংগঠনের মিটিংয়ে যোগদান করে থাকেন এবং মিটিংয়ে যাওয়ার সুবিধার্থে মাদরাসায় না এসেও হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে রাখেন তিনি। এ ব্যাপারে শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির লোকজন তাকে সতর্ক করলেও তার কিছুই হবে না বলে জানিয়ে দেন। মাদরাসা উপাধ্যক্ষ মোঃ মহসিন মিয়া জানান, সম্প্রতি অধ্যক্ষের সাথে মাদরাসার শিক্ষার্থী নির্যাতনের ঘটনার কারণে ছাত্রীরা মাদরাসায় নিয়মিত আসছে না। যদিও ম্যানেজিং কমিটি বিষয়টি মীমাংসা করেছেন।
এসব অভিযোগের বিষয়ে শিক্ষক শেখ মুহাম্মদ আতিকুল্লা বলেন, “আমার জমি সংক্রান্ত বিষয়ে ব্যস্ত থাকায় মাদরাসায় উপস্থিত হতে পারিনি। তবে যাই করি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও ম্যানেজিং কমিটিকে জানিয়েই করি।” ছাত্রী হয়রানির বিষয়ে তিনি বলেন, “শিক্ষার্থীরা অপরাধ করলে কিছুটা শাস্তি দিতেই হয়।” মাদরাসার ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি রফিকুল ইসলাম বলেন, অধ্যক্ষের ছাত্রী নির্যাতনের বিষয়টি সালিশের মাধ্যমে সমাধান করেছি। তাছাড়া মাদরাসার লেখাপড়ার মান রক্ষায় কমিটির পক্ষ থেকে সব রকম পদক্ষেপ নেয়া হবে। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ওমর ফারুক ভুঁইয়া বলেন, পুরনো ও ছেঁড়া পতাকার বিষয়ে জেনে তাত্ক্ষণিক ব্যবস্থা নিয়েছি। সকল অনিয়ম সম্পর্কে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল ফাতে মোহাম্মদ সফিকুল ইসলাম বলেন, একটি মাদরাসা প্রধানের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ দুঃখজনক। ঘটনা তদন্ত করে উপযুক্ত আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।