অনুপাত প্রথা বাতিলে নীতিমালা সংশোধন কমিটিতে মতৈক্য

নিজস্ব প্রতিবেদক |

বেসরকারি কলেজের প্রভাষকদের পদোন্নতিতে অনুপাত প্রথা বাতিলের বিষয়ে মতৈক্যে পৌঁছেছে এমপিও নীতিমালা সংশোধনে গঠিত কমিটি। রোববার (২২ ডিসেম্বর) শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত বেসরকারি স্কুল ও কলেজের এমপিও নীতিমালা ও জনবল কাঠামো সংশোধনে গঠিত কমিটির তৃতীয় সভায় এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। তবে, অনুপাত প্রথা বাতিল করে কি পদ্ধতিতে প্রভাষকদের সহকারী অধ্যাপক পদোন্নতি দেয়া হবে, সে বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি কমিটি। কমিটির শিক্ষক প্রতিনিধি ও ননএমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক কর্মচারী ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ড. বিনয় ভূষণ রায় দৈনিক শিক্ষাডটকমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

জানা গেছে, এমপিও নীতিমালা ও জনবল কাঠামো সংশোধনে গঠিত কমিটির তৃতীয় সভায় প্রভাষকদের পদোন্নতিতে অনুপাত প্রথা, প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির শর্ত হিসেবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী সংখ্যা, মেয়েদের জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থী সংখ্যা, পাসের হার নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে আজ করে সভায়। 

কমিটির শিক্ষক প্রতিনিধি ও নন এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক কর্মচারী ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ড. বিনয় ভূষণ রায় দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, বেসরকারি কলেজের প্রভাষকদের পদোন্নতিতে অনুপাত প্রথা বাতিলের বিষয়ে মতৈক্যে পৌঁছেছে এমপিও নীতিমালা সংশোধনে গঠিত কমিটি। তবে, অনুপাত প্রথা বাতিল করে কিভাবে প্রভাষকদের পদোন্নতি দেয়া হবে সে বিষয়ে কমিটি কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনি। তাই, এ বিষয়ে পরবর্তী সভায় ফের আলোচনা করা হবে। 

তিনি আরও জানান, সভায় এমপিওভুক্তির শর্ত হিসেবে প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী সংখ্যা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। শিক্ষকদের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থী সংখ্যা কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তিতে বিদ্যমান নীতিমালায় একক শ্রেণি বা শাখার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থী সংখ্যা ন্যূনতম ৫০ জন বলা হয়েছে। আর পরবর্তী শাখার জন্য ন্যূনতম ৪০জন শিক্ষার্থী থাকার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু শিক্ষকদের পক্ষ থেকে এ সংখ্যা একক শ্রেণির ক্ষেত্রে ৪০ ও পরবর্তী শাখার ক্ষেত্রে ৩০ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। কমিটির কর্মকর্তা সদস্যরা শিক্ষার্থী সংখ্যা কমানোর বিষয়ে সহনশীল, তবে, কতজন কমানো হবে সে বিষয়ে আজকের সভায় সিদ্ধান্ত হয়নি। আবারও সভা করে বিষয়টিতে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এছাড়া মেয়েদের প্রতিষ্ঠানের জন্য এমপিওভুক্তির শর্ত হিসেবে পৃথক শিক্ষার্থী সংখ্যা নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে। সে বিষয়েও কর্মকর্তারা আন্তরিক। আর এমপিওভুক্তির শর্ত হিসেবে প্রতিষ্ঠানের পাসের হার কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।  

বেসরকারি স্কুল ও কলেজের এমপিও নীতিমালা ও জনবল কাঠামো সংশোধনে গঠিত কমিটির তৃতীয় সভা আজ রোববার (২২ ডিসেম্বর) শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন কমিটির আহ্বায়ক ও মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোমিনুর রশিদ। 

এর আগে গত ১২ ডিসেম্বর এমপিও নীতিমালা সংশোধন কমিটির দ্বিতীয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। দ্বিতীয় সভায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির শর্তগুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে, এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্তেত পৌঁছাতে পারেনি কমিটি। যদিও, বেশ কয়েকমাস ধরেই নতুন প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তিতে বিদ্যমান শর্তগুলো শিথিল করার দাবি জানিয়ে আসছিলেন নন-এমপিও শিক্ষকরা। এমপিওভুক্তির শর্তগুলো শিথিল করতে কমিটির ১ম সভায় কিছু প্রস্তাব করেছিল ননএমপিও শিক্ষক প্রতিনিধিরা। সেগুলো নিয়েই আজকের ২য় সভায় আলোচনা হয়েছে। 

এর আগে গত ৪ ডিসেম্বর এমপিও নীতিমালা ও জনবল কাঠামো সংশোধনে গঠিত কমিটির প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় এমপিওভুক্তির যোগ্যতা হিসেবে প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও পরীক্ষার্থী সংখ্যা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এছাড়া শিক্ষকদের নিয়োগের তারিখ থেকে বয়স গণনার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এছাড়া কলেজ শিক্ষকদের পদোন্নতিতে অনুপাত প্রথা পরিবর্তনের সুপারিশ করেছেন কমিটির শিক্ষক প্রতিনিধিরা। এমপিওভুক্তির যোগ্যতা হিসেবে প্রতিষ্ঠানের পাসের হার কমানোর সুপারিশ করা হয়েছে। এছাড়া এমপিওভুক্তি যোগ্যতা হিসেবে শিক্ষার্থী ও পরীক্ষার্থী সংখ্যা প্রতিষ্ঠানের অবস্থান ভেদে কমানো প্রস্তাবনা করা হয়েছে। এছাড়া শিক্ষার্থী সংখ্যার ওপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠানের মার্কিংয়ের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এছাড়া নীতিমালা সংশোধন করে বেসরকারি কলেজের অনার্স-মাস্টার্স শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির বিষয়ে ব্যাপক আলোচনা হয় সভায়। নীতিমালা সংশোধন করে অনার্স-মাস্টার্স শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির বিষয়ে সভার কর্মকর্তারা মতৈক্যে পৌঁছেছেন। 

গত ১২ নভেম্বর বেসরকারি স্কুল ও কলেজের এমপিও নীতিমালা ও জনবল কাঠামো সংশোধনে ১০ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এক মাসের মধ্যে এমপিও নীতিমালা ও জনবল কাঠামো পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় সংস্কারের সুপারিশ করতে বলা হয়েছে এ কমিটিকে। কমিটিতে ননএমপিও শিক্ষক নেতারাও সদস্য হিসেবে আছেন। স্কুল-কলেজের এমপিও নীতিমালা ও জনবল কাঠামো সংস্কারের সুপারিশ করবে এ কমিটি। 

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের বেসরকারি মাধ্যমিক শাখার অতিরিক্ত সচিব মোমিনুর রশিদকে ১২ ডিসেম্বর গঠিত কমিটির আহ্বায়ক করা হয়। এছাড়া কমিটিতে কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগ, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর, এনটিআরসিএ, ঢাকা বোর্ডের কর্মকর্তারা সদস্য হিসেবে আছেন। আর বেসরকারি মাধ্যমিক শাখার উপসচিবকে কমিটির সদস্য সচিব করা হয়।

এছাড়া ননএমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক কর্মচারী ফেডারেশন কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি অধ্যক্ষ গোলাম মাহমুদুন্নবী ডলার এবং সাধারণ সম্পাদক ড. বিনয় ভূষণ রায়কেও কমিটির সদস্য করা হয়। তবে, কমিটি প্রয়োজনে সদস্য কো-অপ্ট করতে পারবে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না - dainik shiksha সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু - dainik shiksha চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় - dainik shiksha প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট - dainik shiksha রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0028209686279297