আইসিসির ওপর অসন্তুষ্ট বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা

নিজস্ব প্রতিবেদক |

মাঠে পা রাখার পরই তলব পড়ে তিনজনের। সাকিব আল হাসান, মুস্তাফিজুর রহমান ও মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন- ডোপ টেস্ট দিতে হবে তাদের। পরিমাণ মতো পানি পান করে সেই টেস্ট নমুনা দিয়ে এরপর দলের সঙ্গে ওয়ার্মআপে আসা। এ নিয়ে বিশ্বকাপে তিন-তিনবার টাইগারদের ডোপ টেস্ট নেয়া হলো। রেজাল্ট অবশ্য খারাপ কিছু নেই। কিন্তু বার বার এভাবে ডোপিংয়ের জন্য ওতপেতে থাকাটা ঠিক ভালোভাবে নিচ্ছে না টাইগাররা। বিশেষ করে তারা যখন খোঁজ নিয়ে জেনেছেন যে, ভারত, অস্ট্রেলিয়া আর ইংল্যান্ডের ক্রিকেটারদের এ নিয়ে বেশি বিরক্ত করা হচ্ছে না। শুধু ডোপিং টেস্টেই ডাক পড়া নয়, আগের রাতে আইসিসির দেয়া ওয়ান ডে র‌্যাংকিং নিয়েও একটা চাপা অনুযোগ রয়েছে দলের মধ্যে। একই পয়েন্ট থাকার পরও ওয়েস্ট ইন্ডিজ কীভাবে বাংলাদেশের ওপরে উঠে যায়? কোন পদ্ধতিতে এই রেটিং ঠিক করা হয়েছে, তা নিয়ে বিভ্রান্তি রয়েছে।

ক্রিকেটারদের কেউ কেউ এ নিয়ে টিম ম্যানেজমেন্টের কাছে অনুরোধও করেছেন, যাতে করে তারা আইসিসির কাছে ব্যাখ্যাটি জানতে চান। তিনটি রেটিং পয়েন্ট নিয়ে বাংলাদেশ এখন আট নম্বরে আর ওয়েস্ট ইন্ডিজ সাতে। আইসিসির নতুন প্রকাশিত র‌্যাংকিংয়ে গত চারটি ম্যাচের সমীকরণ বিবেচনা করা হয়েছে। যেখানে একটি জয় আর দুটি হার নিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ আর বাংলাদেশ সমানে সমান। রান রেটে এগিয়ে থাকায় ক্যারিবীয়রা নাকি সাত নম্বরে। যে দলকে গত নয় ম্যাচের সাতটিতে হারিয়েছে বাংলাদেশ, সেই দল কী করে র‌্যাংকিংয়ে এগিয়ে থাকে? আইসিসি জবাব দিক না দিক, টাইগাররা কিন্তু প্রস্তুত হয়ে আছে মাঠের লড়াইয়ে হিসাবটা বুঝিয়ে দিতে। 'র‌্যাংকিংয়ে কে এগিয়ে বা কে পিছিয়ে, ওসব নিয়ে আমরা ভাবছি না। তবে এটা তো বলাই যায়, ওদের সঙ্গে আমরাই ফেভারিট। গত কয়েক ম্যাচে ওদের আমরা সব জায়গাতেই হারিয়েছি। তবে এসব রেকর্ড খুব বেশি কাজে লাগে না। ম্যাচের দিন কে ভালো খেলে, সেটার ওপরই নির্ভর করে সব।' র‌্যাংকিং নিয়ে ক্যামেরার সামনে ভেতরের অস্বস্তিটা তামিম চেপে গেলেও ড্রেসিংরুমের খবর, এই র‌্যাংকিং মার্ক কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না টাইগাররা।

এবারের বিশ্বকাপে এরই মধ্যে আইসিসির কাছে ই-মেইলে নালিশই জানিয়েছে শ্রীলংকা। তাদের অভিযোগ, লংকান ক্রিকেটারদের যে হোটেলে রাখা হচ্ছে সেখানে সুইমিংপুল নেই। যে মাঠে খেলা দেয়া হচ্ছে, সেখানেই সবুজ উইকেট তৈরি করা হচ্ছে। অনুশীলনেও চাহিদা মতো নেট বোলার দেয়া হচ্ছে না। লংকানদের অভিযোগ, বরং তাদের চেয়ে বাংলাদেশকে বেশি সুবিধা দেয়া হচ্ছে। এটা ঠিক যে, বাংলাদেশ দল যে শহরেই যাচ্ছে সেখানকার সবচেয়ে ভালো হোটেলে তাদের জন্য রুম বুকিং দেয়া হচ্ছে। নেটে যে ধরনের বোলারদের চাওয়া হচ্ছে তাদেরই দেয়া হচ্ছে। গতকালই যেমন, সমারসেটের উঠতি কিছু পেসারকে দেওয়া হয় তামিমদের নেটে। টাইগারদের পক্ষ থেকে আগের দিনই জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল, পাঁচজন পেসার চাই। যাদের গতির সঙ্গে বাউন্সার মারার দক্ষতাও আছে। এমনই কিছু পেসার দেয়াও হয়েছিল। যার একজনের আঘাতে মুশফিক ডান হাতে কিছুটা চোটও পেয়েছেন। আবার একজন সাইফউদ্দিনকে বোলিং করতে গিয়ে ফলোথ্রুতে মাথায় আঘাতও পেয়েছেন। সব মিলিয়ে দারুণ একটি নেট সেশন ছিল এদিন বাংলাদেশের। অনুশীলনে সুযোগ-সুবিধা নিয়ে বাংলাদেশিদের অন্তত কোনো আপত্তি নেই।

তবে মাশরাফির আপত্তি আছে একটি ব্যাপার নিয়ে। অ্যাজমার সমস্যা থাকায় তাকে নিয়মিত কিছু ওষুধ খেতে হয়। এ নিয়ে বিশ্বকাপের আগেই ফিজিওর মাধ্যমে আইসিসির ডোপ টিমের কাছে ই-মেইলও করেছিলেন তিনি। জানতে চেয়েছিলেন, তিনি যে ওষুধগুলো সেবন করছেন তাতে কোনো সমস্যা আছে কি-না। গতকাল পর্যন্ত সেই মেইলের কোনো রিপ্লে আসেনি তার কাছে। শুধু মাশরাফিই নন, সাকিবকেও ওষুধ খেতে হচ্ছে। দলের ফিজিও চন্দ্রমোহন নির্দিষ্ট কিছু ওষুধ প্রেসক্রাইবও করেছেন। টুকটাক ইনজুরি ছাড়াও এখানকার ঠাণ্ডা আবহাওয়ার কারণে কিছু জরুরি ওষুধও খেতে হচ্ছে। কিন্তু আইসিসির ডোপ টিমের কাছ থেকে ওষুধগুলোর ব্যাপারে কোনো নির্দেশনা না থাকায় দ্বিধায় থাকতে হচ্ছে তাদের। আইসিসির বৈশ্বিক কোনো টুর্নামেন্টে রেনডম ডোপ টেস্ট করাটা নিয়মের মধ্যেই পড়ে। অতীতেও এমনটি হয়েছে। যদিও কোনোবারই টাইগারদের কারও রিপোর্টেই খারাপ কিছু পাওয়া যায়নি। এবারও কোনো শঙ্কা নেই। কিন্তু অন্য দলগুলো থেকে যখন কম ক্রিকেটারদের ডোপ নেওয়া হয়, তখন বাংলাদেশিদের বেলায় এত বেশি কেন? ভারতের বুমরাহকে ডোপিংয়ে নেওয়ার খবর ফলাও করে ছাপা হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশিদের যে এরই মধ্যে তিনবারে নয়জনকে নেওয়া হয়েছে, সেই খবর আসছে না।

এই সফরে আইসিসির দুর্নীতিবিরোধী ও দমন কমিটির (আকসু) একজন প্রতিনিধি সারাক্ষণ সঙ্গে থাকছেন টাইগারদের সাথে। হোটেল থেকে শুরু করে মাঠের অনুশীলন পর্যন্ত- সারাক্ষণই পাখির চোখ আছে তাদের। নিয়মের বাইরে একচুল হলেই পাকড়ানোর অপেক্ষায় তারা। ডোপিংয়ে কোনো সমস্যা পেলেই রিপোর্ট করার জন্য মুখিয়ে। সারাক্ষণ আইসিসির এসব খবরদারি ঠিক ভালো লাগছে না টাইগারদের। 


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না - dainik shiksha সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু - dainik shiksha চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় - dainik shiksha প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট - dainik shiksha রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0028049945831299