ঋণের কিস্তি পরিশোধ স্থগিত ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত

নিজস্ব প্রতিবেদক |

দেশের অর্থনীতিতে করোনাভাইরাসের নেতিবাচক প্রভাব বিবেচনায় সব ধরনের গ্রাহকের ঋণ পরিশোধের সীমা আরও তিন মাস বাড়ানো হয়েছে। অর্থাৎ ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত গ্রাহকদের ঋণের কিস্তি পরিশোধ স্থগিত থাকবে। একই সঙ্গে এই সময়ে ঋণের কিস্তি বা ঋণ পরিশোধ করতে না পারার কারণে কোনো গ্রাহকের ঋণকে খেলাপি করা যাবে না। তবে কোনো গ্রাহক আগের খেলাপি ঋণ পরিশোধ করলে সেগুলো নিয়মিত করা যাবে।

এ বিষয়ে সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে একটি সার্কুলার জারি করে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো হয়েছে।

করোনার কারণে অর্থনৈতিক ক্ষতি বিবেচনায় নিয়ে এর আগেও দুই দফা সার্কুলার জারি করে ঋণের কিস্তি পরিশোধ ও ঋণ খেলাপি না করার সময়সীমা ৬ মাস বাড়িয়েছে। এবার তৃতীয় দফায় আরও তিন মাস বাড়ানো হল। ফলে করোনার কারণে ঋণ শোধের সময়সীমা ৯ মাস বাড়ানো হল। অর্থাৎ গত মার্চ থেকে আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ক্রেডিট কার্ড ছাড়া সব ধরনের ঋণের কিস্তি পরিশোধ স্থগিত করা হয়েছে। একই সঙ্গে ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত এই এক বছর ঋণের কিস্তি পরিশোধের ব্যর্থতার কারণে কোনো ঋণকে খেলাপি করা যাবে না। সব মিলে গ্রাহকরা ঋণের কিস্তি পরিশোধের সময় পেয়েছেন এক বছর।

এতে আরও বলা হয়, করোনার প্রভাবে অর্থনীতির অধিকাংশ খাতই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। করোনার নেতিবাচক প্রভাব দীর্ঘায়িত হওয়ার আশঙ্কা থাকায় অনেক শিল্প, সেবা ও ব্যবসা খাত এখনও তাদের স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারছে না। এ পরিপ্রেক্ষিতে ঋণ বা বিনিয়োগের পরিশোধ সূচির সীমা আরও এক দফা বাড়ানো হয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জারি করা সার্কুলারে বলা হয়, ১ জানুয়ারি পর্যন্ত ঋণের শ্রেণির মান যা ছিল, ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত তা-ই থাকবে। আলোচ্য সময়ে গ্রাহকের কোনো ঋণের কিস্তি বা ঋণ পরিশোধে ব্যর্থতার কারণে কোনো ঋণকে খেলাপি করা যাবে না। তবে কোনো গ্রাহক আগের খেলাপি ঋণ বা ঋণের কিস্তি পরিশোধ করলে সেই ঋণের মানের উন্নতি বা নিয়মিত ঋণের শ্রেণি বিন্যাসিত করা যাবে। গত ১ জানুয়ারি থেকে আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে ঋণের প্রদেয় কিস্তিগুলো স্থগিত হিসেবে বিবেচিত হবে। এসব ঋণের কিস্তি আগামী বছরের ১ জানুয়ারি থেকে আদায় করা যাবে। সেক্ষেত্রে আগামী ১ জানুয়ারি থেকে কিস্তির পরিমাণ ও সংখ্যা দুটিই পুনর্নির্ধারিত হবে। অর্থাৎ ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ঋণের বিপরীতে যত কিস্তি ছিল, আগামী বছরে ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে তার সমপরিমাণ কিস্তির সংখ্যা বাড়বে। অর্থাৎ চলতি বছরের কিস্তিগুলো আগামী বছরে শোধ করতে হবে।

সার্কুলারে বলা হয়, চলমান ও তলবি ঋণের মেয়াদ সর্বোচ্চ ১২ মাস বা ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত এর মধ্যে যেটি আগে হয়, সে পর্যন্ত বাড়নো যাবে। কোনোক্রমেই কোনো ঋণের কিস্তি পরিশোধের মেয়াদ ৩১ ডিসেম্বরের পর পর্যন্ত বাড়ানো যাবে না। চলতি বা তলবি ঋণের মেয়াদ কম বলে এই ক্ষেত্রে সীমা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে।

আলোচ্য সময়ে কোনো ঋণের বিপরীতে সুদ নগদ আদায় হলে তা ব্যাংক আয় খাতে নিতে পারবে। কিন্তু কোনো সুদ নগদ আকারে আদায় না হলে কোনো সুদ বা মুনাফা ব্যাংক আয় খাতে নিতে পারবে না। ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত কোনো ঋণের বিপরীতে দণ্ড সুদ বা কোনো ধরনের বাড়তি ফি আরোপ করা যাবে না।

এতে বলা হয়, কোনো গ্রাহক এই ঋণ পরিশোধের সুবিধা নিতে না চাইলে ব্যাংক গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে আগের নিয়মে ঋণ সমন্বয় করতে পারবেন। ওই সময়ে গ্রাহক এই সুবিধা গ্রহণ না করে আগের নিয়মে ঋণ পরিশোধ করলে গ্রাহককে প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী সুদ ছাড় সুবিধা দিতে হবে।

সার্কুলারে বলা হয়, আলোচ্য সময়ে ঋণের বিপরীতে সুদ আয় খাতে স্থানান্তর ও ঋণের বিপরীতে প্রভিশন সংরক্ষণের বিষয়ে পরবর্তী সময়ে ব্যাংকগুলোকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া হবে।

উল্লেখ্য, করোনাভাইরাসের সংক্রমণের প্রভাবে দেশের ও বিশ্ব ব্যবসা-বাণিজ্য স্থবির হয়ে পড়লে ১৯ মার্চ প্রথম কেন্দ্রীয় ব্যাংক এক সার্কুলার জারি করে ৩০ জুন পর্যন্ত ঋণ ও ঋণের কিস্তি পরিশোধ স্থগিত এবং এ কারণে কোনো ঋণকে খেলাপি না করার নির্দেশনা জারি করে। পরে দ্বিতীয় দফায় এর মেয়াদ ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়। তৃতীয় দফায় ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হল। ক্রেডিট কার্ড ছাড়া সব ধরনের ঋণের গ্রাহকরা এই সুবিধা পাবেন।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না - dainik shiksha সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু - dainik shiksha চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় - dainik shiksha প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট - dainik shiksha রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0030980110168457