গুরুতর অনিয়মের অভিযোগে অধ্যক্ষসহ ১২ শিক্ষক-কর্মচারীর এমপিও বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর। গাজীপুর সদর উপজেলার গাজীপুর টেকনিক্যাল ও বিজনেস ম্যানেজমেন্ট কলেজের কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দৈনিক শিক্ষাকে এ তথ্য জানিয়েছেন।
গাজীপুর টেকনিক্যাল ও বিজনেস ম্যানেজমেন্ট কলেজের এই ১২ শিক্ষক-কর্মচারী হলেন অধ্যক্ষ মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির, বাংলার সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান, ব্যবস্থাপনার সহকারী অধ্যাপক মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, হিসাবরক্ষণের প্রভাষক মোহাম্মদ আমিনুল হক, সচিব বিজ্ঞানের প্রভাষক ফজিলাতুন্নেসা, ইংরেজির প্রভাষক মোহাম্মদ মোশাহেদ, হিসাবরক্ষণের প্রভাষক ফাতেমা তুজ জোহরা, প্রদর্শক ছিদ্দিকুর রহমান, সহকারী লাইব্রেরিয়ান মোহাম্মদ রাশেদ মাহমুদ, কম্পিউটার ল্যাব সহকারী আফ্রোজা আক্তার, টাইপিং ল্যাব সহকারী মোহাম্মদ সুলতান উদ্দিন এবং এমএলএসএস মো. রফিকুল ইসলাম।
জানা গেছে, গাজীপুর টেকনিক্যাল ও বিজনেস ম্যানেজমেন্ট কলেজের অধ্যক্ষসহ ১২ শিক্ষক-কর্মচারীর নিয়োগ ও এমপিওভুক্তিতে গুরুতর অনিয়ম হয়েছে বলে অভিযোগ আসে কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরে। এর পরিপ্রেক্ষিতে অধিদপ্তরের ভোকেশনাল শাখার পরিচালক অভিযোগটি তদন্ত করেন। গত ৮ জুলাই অধিদপ্তরে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন তিনি। তদন্ত প্রতিবেদনে এ ১২ শিক্ষক-কর্মচারীর এমপিও বাতিলের সুপারিশ করেন এ কর্মকর্তা।
তদন্ত প্রতিবেদনের আলোকে কারিগরি অধিদপ্তরের ৪৯তম এমপিও বিষয়ক সভায় ১২ শিক্ষক-কর্মচারীর অবৈধ নিয়োগ ও এমপিও বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। অধ্যক্ষ মোহাম্মদ হুমায়ুন কবিরের নিয়োগকালে কাম্য যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা না থাকায় এবং তাকে বোর্ড অনুমোদিত বাছাই কমিটি নিয়োগ প্রদান না করায় এমপিও বাতিলের জন্য সভার সিদ্ধান্ত মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়।
সভায় বাংলার সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ আসাদুজ্জামানকে বোর্ড অনুমোদিত বাছাই কমিটি নিয়োগ প্রদান না করায় এমপিও বাতিলের জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
ব্যবস্থাপনার সহকারী অধ্যাপক মুহাম্মদ রফিকুল ইসলামকে বোর্ড অনুমোদিত বাছাই কমিটি নিয়োগ প্রদান না করায় এমপিও বাতিলের জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় সভায়।
হিসাবরক্ষণের প্রভাষক মোহাম্মদ আমিনুল হককে বোর্ড অনুমোদিত বাছাই কমিটি নিয়োগ প্রদান না করায় এমপিও বাতিলের জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
সচিববিজ্ঞানের প্রভাষক ফজিলাতুন্নেসাকে বোর্ড অনুমোদিত বাছাই কমিটি নিয়োগ প্রদান না করায়, নিয়োগ এমপিও সঠিক না থাকায় এবং প্রশিক্ষণ সনদ সরকার স্বীকৃত প্রতিষ্ঠানের না হওয়ায় তার এমপিও বাতিলের জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় সভায়।
নির্ধারিত সময়ের ৬ মাস পরে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ায় হিসাবরক্ষণের প্রভাষক ফাতেমা তুজ জোহরার এমপিও বাতিল হবে কিনা নির্দেশনা চেয়ে মন্ত্রণারয়ে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় এমপিও সভায়।
প্রদর্শক ছিদ্দিকুর রহমানকে বোর্ড অনুমোদিত বাছাই কমিটি নিয়োগ প্রদান না করায়, নিয়োগকালীন কাম্য যোগ্যতা না থাকায় এবং প্রশিক্ষণ সনদ সরকার স্বীকৃত প্রতিষ্ঠানের না হওয়ায় তার এমপিও বাতিলের জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় সভায়।
সহকারী লাইব্রেরিয়ান মোহাম্মদ রাশেদ মাহমুদকে বোর্ড অনুমোদিত বাছাই কমিটি নিয়োগ প্রদান না করায়, নিয়োগের সময় রেজুলেশন টেম্পারিং করায় এবং প্রশিক্ষণ সনদ সরকার স্বীকৃত প্রতিষ্ঠানের না হওয়ায় তার এমপিও বাতিলের জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় সভায়।
কম্পিউটার ল্যাব সহকারী আফ্রোজা আক্তারকে বোর্ড অনুমোদিত বাছাই কমিটি নিয়োগ প্রদান না করায়, নিয়োগকালীন সময়ে কাম্য যোগ্যতা না থাকায় এবং প্রশিক্ষণ সনদ সরকার স্বীকৃত প্রতিষ্ঠানের না হওয়ায় তার এমপিও বাতিলের জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় সভায়।
টাইপিং ল্যাব সহকারী মোহাম্মদ সুলতান উদ্দিনকে বোর্ড অনুমোদিত বাছাই কমিটি নিয়োগ প্রদান না করায় এমপিও বাতিলের জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এমএলএসএস মো. রফিকুল ইসলামকে বোর্ড অনুমোদিত বাছাই কমিটি নিয়োগ প্রদান না করায় এমপিও বাতিলের জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
তদন্ত প্রতিবেদনের সুপারিশ এবং ৪৯তম এমপিও সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অভিযুক্ত ১২ শিক্ষক-কর্মচারীকে ‘কেন তাদের এমপিও বাতিল হবে না’ মর্মে শোকজ করা হয়েছে। কিন্তু তাদের জবাব সন্তোষজনক নয় বলে দৈনিক শিক্ষাকে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।
তাই এ ১২ শিক্ষক-কর্মচারীর এমপিও বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (ব্যবসায় ব্যবস্থাপনা) জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা ২০১৮ এর ২৮.১.৩, ২৮.১.৫ ও ২৮.১.৬ ধারা মোতাবেক এমপিও বাতিলের জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর।