এমপিও বাতিলের খবরে টনক নড়েছে প্রতিষ্ঠান প্রধানদের

রুম্মান তূর্য |

   
সুপারিশপ্রাপ্তদের যোগ দিতে না দেয়া প্রতিষ্ঠান প্রধানদের এমপিও বাতিলের খবরে টনক নড়েছে। দৈনিক শিক্ষায় প্রতিবেদন প্রকাশের পর দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠান প্রধানরা। যোগদান বঞ্চিত প্রার্থীদের অভিযোগ যাচাই-বাছাই করে অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠান প্রধানদের বিরুদ্ধে এমপিও বাতিলসহ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ)। এ খবরে টনক নড়েছে অনেক প্রতিষ্ঠান প্রধানের। ফোন করে যোগদান করতে প্রার্থীদের অনুরোধ করছেন তাঁরা। আবার এনটিআরসিএর অফিসে গিয়ে তদবির করছেন ‘ব্যাকডেটে’ যোগদান করানোর সুযোগ দেয়ার। প্রতিদিন তারা ভিড় করছেন এনটিআরসিএতে।   

একাধিক প্রার্থী দৈনিক শিক্ষাকে জানান, প্রতিষ্ঠান প্রধানদের সাক্ষাতের জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেছি। ছুটে গিয়েছি কয়েকশ কিলোমিটার। কিন্তু তাদের দেখা পাইনি। দৈনিক শিক্ষায় এমপিও বাতিলের সুপারিশ করা প্রতিষ্ঠান প্রধানদের তালিকা দেখতে পেয়ে নড়েচড়ে বসছেন অনেক প্রতিষ্ঠান প্রধান। উল্টো তাঁরা এখন প্রার্থীদের ফোন করছেন। যোগদান করতে অনুরোধ করছেন। যেসব ননএমপিও প্রতিষ্ঠানে তাচ্ছিল্য করে মাসে দুই-তিন হাজার টাকা বেতন প্রতিষ্ঠান থেকে দেয়ার প্রস্তাব করেছিল, সেইসব সুপারিশপ্রাপ্তকেই এখন ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা বেতনে যোগদানের প্রস্তাব দেয়া হচ্ছে। 

সোমাবার (২৫ মার্চ) এনটিআরসিএ কার্যালয়ে এসেছিলেন হবিগঞ্জের চুনাড়ুঘাট উপজেলার সুবেহ সাদিক উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক লুৎফর রহমান। তিনি জানান, দৈনিক শিক্ষায় প্রকাশিত তালিকায় নিজ প্রতিষ্ঠানের নাম দেখেছেন তিনি। এরপর নিয়োগ দেয়ার জন্য সুপারিশপ্রাপ্ত প্রার্থীকে ফোন করেছেন তিনি। তিনি জানান, ১০ হাজার টাকা বেতন দেবেন বলে প্রস্তাব দেয়ার পর ‘বিষয়টি ভেবে দেখবেন’ বলে জানিয়েছেন প্রার্থী।

প্রধান শিক্ষক লুৎফর রহমান দৈনিক শিক্ষাকে বলেন, সুপারিশপ্রাপ্ত প্রার্থী আবদুস সাত্তারকে নিয়োগ দেয়ার চেষ্টা করেছি। গত রোববার ফোনও দিয়েছি তাকে। কিন্তু ননএমপিও পদ দেখে প্রার্থী যোগদান করতে চান না। আবার  অভিযোগও করেছেন এনটিআরসিএতে। আমি ভুল করে ননএমপিও পদকে এমপিও দিয়েছি। এমপিও বন্ধের সুপারিশের বিষয়টি জানিয়ে যোগদান করতে বললে প্রার্থী বিষয়টি ভেবে দেখবেন বলে জানিয়েছেন। আমার প্রতিষ্ঠান নিম্নমাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত এমপিওভুক্ত। কম্পিউটারে বিষয়টি বুঝতে পারিনি আমি। তাই ভুল হয়েছে। উনি মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষক হিসেবে সুপারিশ পেয়েছিলেন।     

এদিকে, সুবেহে সাদিক উচ্চ বিদ্যালয়ে ইংরেজি শিক্ষক হিসেবে নিয়োগের সুপারিশ পাওয়া আবদুস সাত্তার দৈনিক শিক্ষাকে জানান, আমি ১০ম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ। নিয়োগের সুপারিশ পেয়ে কয়েকবার প্রতিষ্ঠানে আমি গিয়েছি। প্রতিষ্ঠান প্রধান আমাকে নিয়োগ দেননি। ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড় করিয়ে রেখেছেন আমাকে। বেতনের বিষয়ে জানতে চাইলে সুপারিশপ্রাপ্ত আবদুস সাত্তার দৈনিক শিক্ষাকে বলেন, প্রতিষ্ঠান প্রধানের এমপিও বাতিলের সুপারিশের পরে তিনি আমাকে ফোন দিয়ে বেতন দেয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন। এর আগে এ বিষয়ে কিছু বলেননি। আবদুস সাত্তার আরও জানান, প্রতিষ্ঠান প্রধান ভুল চাহিদা দিয়েছেন। আমি সে প্রেক্ষিতে অভিযোগ করেছি। উনি ননএমপিও পদকে এমপিও দেখিয়েছেনে। পদটি ননএমপিও জানলে আমি আবেদনই করতাম না। হয়ত ভালো কোনো এমপিও পদে নিয়োগ পেতাম আমি।

এদিকে, নাম প্রকাশ না করার স্বার্থে চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার গহিরা কলেজে সুপারিশপ্রাপ্ত দুইজন প্রার্থী জানান, দৈনিক শিক্ষা ডটকমে এমপিও বাতিলের সুপারিশের সংবাদ প্রকাশের পর কলেজটির প্রধান তপন কুমার দে তাদের নিয়োগ দিতে ডেকেছেন। প্রার্থীরা নিয়োগ নিতে গিয়েছিলেন প্রতিষ্ঠানটিতে। সভাপতি এ বিষয়ে বাগড়া দিয়েছেন বলে সুপারিশ প্রাপ্তরা জানান, ‘সভাপতি রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী। তিনি স্থানীয় সাংসদ। তিনি বলেছেন মন্ত্রণালয়ে তো এমপিও বাতিলের সুপারিশ পাঠিয়েছে এনটিআরসিএ, এখন কেন নিয়োগ দিব’। বিষয়টি এনটিআরসিএকে জানিয়েছেন বলেও দৈনিক শিক্ষার কাছে দাবি করেছেন সুপারিশপ্রাপ্তরা।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না - dainik shiksha সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু - dainik shiksha চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় - dainik shiksha প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট - dainik shiksha রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0051610469818115