এসএসসিতে ভালো ফলের পেছনে ইংরেজি ও গণিত

নিজস্ব প্রতিবেদক |

এসএসসি ও সমমানের ফল থেকে চতুর্থ বিষয়ের নম্বর বাদ দেওয়ার পর ২০১৫ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ফল ছিল নিম্নমুখী। গত বছরের ঊর্ধ্ব ধারার পর এবারের ফল আরো ভালো হয়েছে। এর পেছনে অন্যতম কারণ হিসেবে সৃজনশীলে ভীতি কাটানো, গণিত আর ইংরেজিতে ভালো ফল এবং খাতা মূল্যায়নের বর্তমান পদ্ধতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার উল্লেখ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে এবার ভালো ফলের পেছনে প্রধান নিয়ামক হিসেবে কাজ করেছে গণিত ও ইংরেজি।

শিক্ষাবিদ ও গবেষক অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘আমার খুবই ভালো লাগছে যে মেয়েরা ধারাবাহিকভাবে ভালো করছে। তবে দুঃখের বিষয় তারা কলেজের পর থেকে ঝরে পড়তে শুরু করে। আমাদের পরীক্ষার চেয়ে শিক্ষার মান উন্নত হচ্ছে কি না সেটাও দেখা উচিত। আর শিক্ষার মান উন্নত করতে আমাদের প্রয়োজন ভালো শিক্ষক, প্রশিক্ষণে জোর দেওয়া ও শিক্ষকদের ওপর নজরদারি বাড়ানো। পাঠ্য বইও আকর্ষণীয় করতে হবে। বর্তমানে চালু থাকা সৃজনশীল পদ্ধতি ও মাল্টিপল চয়েস কোয়েশ্চেন (এমসিকিউ) নিয়েও আমার ঘোর আপত্তি রয়েছে।’   

বার ৯টি সাধারণ বোর্ডসহ মোট ১১টি বোর্ডে পাসের হার ৮২.৮৭ শতাংশ, যা গত বছরের তুলনায় ০.৬৭ শতাংশ বেশি। জিপিএ ৫ পেয়েছে এক লাখ ৩৫ হাজার ৮৯৮ জন, যা গত বছরের তুলনায় ৩০ হাজার ৩০৪ জন বেশি।

এবার ১০ লাখ ২১ হাজার ৪৯০ জন ছাত্র অংশ নিয়ে পাস করেছে আট লাখ ৩৩ হাজার ৮৯২ জন, পাসের হার ৮১.৬৩ শতাংশ। আর ১০ লাখ ১৮ হাজার ৫৩৮ জন ছাত্রী অংশ নিয়ে পাস করেছে আট লাখ ৫৬ হাজার ৬৩১ জন, পাসের হার ৮৪.১০ শতাংশ। জিপিএ ৫ পেয়েছে ৬৫ হাজার ৭৫৪ জন ছেলে এবং ৭০ হাজার ১৪৪ জন মেয়ে। ছেলেদের তুলনায় চার হাজার ৩৯০ জন মেয়ে বেশি জিপিএ ৫ পেয়েছে।

শত ভাগ পাস করেছে তিন হাজার ২৩টি প্রতিষ্ঠান থেকে, যা গত বছরের তুলনায় ৪৪০টি বেশি। আর শূন্য পাস প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ১০৪টি, যা গতবারের চেয়ে তিনটি কম। বিভাগভিত্তিক পাসের হারেও বরাবরের মতো ভালো করেছে বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা ৯৪.৫৪ শতাংশ। মানবিকে পাসের হার ৭৬.৩৯ শতাংশ এবং ব্যবসায় শিক্ষায় ৮৪.৮০ শতাংশ। বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ ৫ পেয়েছে এক লাখ ১৬ হাজার ৫৩১ জন, মানবিক বিভাগ থেকে দুই হাজার ৭৫০ জন এবং ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ থেকে তিন হাজার ৮৫০ জন। মোট জিপিএ ৫ প্রাপ্তদের মধ্যে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে পেয়েছে ২৩.১০ শতাংশ। আর মানবিক বিভাগ থেকে দশমিক শূন্য ৩৫ শতাংশ ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ থেকে ১.১৩ শতাংশ জিপিএ ৫ পেয়েছে।

বিষয়ভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা যায়, এবার ইংরেজি ও গণিতে ভালো করেছে শিক্ষার্থীরা। ইংরেজিতে ঢাকা বোর্ডে পাসের হার ৯৪.০৫, গত বছর যা ছিল ৯০.৭৯ শতাংশ। গণিতে ঢাকা বোর্ডে পাসের হার ৮৫.৯৭, যা গত বছর ছিল ৮৩.৪৭ শতাংশ। অন্যান্য বোর্ডের মধ্যে ইংরেজিতে এবার রাজশাহী বোর্ডে ৯৮.৫৩ শতাংশ, কুমিল্লায় ৯৭.৮১, যশোরে ৯৫.০১, চট্টগ্রামে ৯৪.০৭, বরিশালে ৯১.৪৭, সিলেটে ৯৭.০৫, দিনাজপুরে ৯৪.৯৮, ময়মনসিংহে ৯৬.৪৩, মাদরাসা বোর্ডে ৯৭.৫১ ও কারিগরি বোর্ডে ৯৬.৫৩ শতাংশ পাস করেছে। গণিতে পাস করেছে রাজশাহীতে ৯৪.৪৬, কুমিল্লায় ৮৮.৯৩, যশোরে ৯৭.৪৮, চট্টগ্রামে ৯৫.১৫, বরিশালে ৮৫.৪৮, সিলেটে ৮৫, দিনাজপুরে ৮৯.৫৮, ময়মনসিংহে ৮৪.৮৩, মাদরাসায় ৮৭.৫৪ ও কারিগরি বোর্ডে ৮৬.০৮ শতাংশ।

বোর্ডওয়ারি ফলাফলের মধ্যে এবার রাজশাহী বোর্ডে সবচেয়ে বেশি ভালো ফল করেছে ৯০.৩৭ শতাংশ এবং সবচেয়ে খারাপ ফল করেছে কারিগরি বোর্ডে ৭২.৭০ শতাংশ। তবে গত বছরের তুলনায় চট্টগ্রাম ও সিলেট বোর্ড বেশ ভালো করেছে।

এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশ উপলক্ষে গতকাল সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, পরীক্ষার খাতা মূল্যায়নের জন্য শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। আগেই একটি উত্তরপত্র প্রশিক্ষিত নিরীক্ষকদের বিতরণ করা হয়েছে। তার আলোকে শিক্ষকরা খাতা মূল্যায়ন করেছেন। এবার যারা পাস করতে পারেনি তারা মন খারাপ না করে আগামী বছর পুনরায় পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে।

আন্ত শিক্ষা বোর্ড সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মু. জিয়াউল হক বলেন, ‘ভালো ফলের পেছনে সুনির্দিষ্ট করে কারণ ব্যাখ্যা করার সুযোগ নেই। তবে গত বছরের চেয়ে এবার মেধাবী শিক্ষার্থী বেশি ছিল। তারা যত্ন করে পড়ালেখা করেছে। বিজ্ঞানের বিষয়গুলোতে শিক্ষার্থীরা ভালো করায় জিপিএ ৫ বেড়েছে। আর ইংরেজি ও গণিতে ভালো করায় পাসের হার বেড়েছে। জিপিএ ৫ বাড়লেও তা মোট শিক্ষার্থীর মাত্র ৬.৬৬ শতাংশ। আমরা চাই শিক্ষার্থীরা আরো ভালো করুক।’

জানা যায়, এখন প্রশ্নপত্র প্রণয়ন হয় সৃজনশীল পদ্ধতিতে, যা নিয়ে ভীতি ছিল শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে। তবে আগের চেয়ে এখন এই পদ্ধতি অনেক বেশি আত্মস্থ করতে পারছেন তাঁরা। তিন বছর ধরে উত্তরপত্র মূল্যায়নে পরিবর্তন এনেছে শিক্ষা বোর্ডগুলো। পরীক্ষকদের খাতা দেওয়ার আগে প্রশিক্ষণ জোরদার করা হয়েছে। সেখানে তাঁদের একটি করে মডেল উত্তরপত্র সরবরাহ করা হয়, যাতে সবাই কাছাকাছি নম্বর দিতে পারেন। প্রথম দিকে এই উত্তরপত্র মূল্যায়নে কিছুটা ভীতি থাকলেও এখন তা কেটে গেছে।

আরও পড়ুন: 

এসএসসির ফল পুনঃনিরীক্ষার আবেদন শুরু আজ

দাখিলে পাস ৮২ দশমিক ৫১ শতাংশ

এসএসসিতে পাস ৮৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ

এসএসসি ভোকেশনালে পাস ৭২ দশমিক ৭০ শতাংশ

দাখিলের ফল জানবেন যেভাবে

এসএসসি-দাখিল ভোকেশনালের ফল জানবেন যেভাবে

এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল জানবেন যেভাবে

কলেজে ভর্তি : দৈনিক শিক্ষায় বিজ্ঞাপন পাঠান ইমেইলে


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না - dainik shiksha সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু - dainik shiksha চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় - dainik shiksha প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট - dainik shiksha রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0036859512329102