অননুমোদিতভাবে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকার দায়ে দুইজন শিক্ষককে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। তারা হলেন রাজশাহী পলিটেকনিক ইনিস্টিটিউটের ইন্সট্রাক্টর বেগম আয়েশা সিদ্দিকা এবং গোপালগঞ্জ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ইন্সট্রাক্টর মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন ভূইয়া। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগ থেকে এ দুই শিক্ষককে বরখাস্ত করার পৃথক আদেশ জারি করা হয়।
জানা গেছে, ২০১১ খ্রিষ্টাব্দের ১৭ ডিসেম্বর থেকে অননুমোদিতভাবে কর্মস্থলে অনুপস্থিত ছিলেন রাজশাহী পলিটেকনিক ইনিস্টিটিউটের ইন্সট্রাক্টর বেগম আয়েশা সিদ্দিকা। তাই সরকারি কর্মচারী বিধিমালা অনুসারে তাকে আসদাচরণ ও ডিজারশনের অভিযোগে শোকজ করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। কিন্তু তিনি শোকজের কোন জবাব দেননি। তাই বিধি মোতাবেক অভিযোগ তদন্তে কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়।
তদন্ত প্রতিবেদন ও সংশ্লিষ্ট রেকর্ড পর্যালোচনা করে বেগম আয়েশা সিদ্দিকার বিরুদ্ধে আসা অসদাচরণ ও ডিজারশনের অভিযোগ সন্দেহাতিতভাবে প্রমাণিত হয়। এ প্রেক্ষিতে ‘তাকে গুরুদণ্ডের আওতায় কেন শাস্তি প্রদান করা হবে না’ তা জানতে চেয়ে দ্বিতীয় দফায় শোকজ নোটিশ পাঠানো হয়। এছাড়া শোকজটি দুইট পত্রিকায় প্রকাশ করা হলেও বেগম আয়েশা সিদ্দিকা তার কোন জবাব দেননি বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করেননি।
তাই বেগম আয়েশা সিদ্দিকাকে চাকরি থেকে থেকে বরখাস্ত করার সিদ্ধান্ত নেয় কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগ। এ বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) মতামত চাওয়া হয়। পিএসসি তাকে চাকরি থেকে বরখাস্তের বিষয়ে একমত হয়েছে।
বেগম আয়েশা সিদ্দিকার পদটি ৯ম গ্রেডে বিসিএস কারিগরি শিক্ষা ক্যাডারভুক্ত হওয়ায় বিধি মতে তার শাস্তি বিষয়ে রাষ্ট্রপতির বিবেচনা ও সিদ্ধান্তের জন্য পাঠানো হয়। রাষ্ট্রপতি বেগম আয়েশা সিদ্দিকাকে বরখাস্তের বিষয়ে অনুমতি প্রদান করেন। এ প্রেক্ষিতে বেগম আয়েশা সিদ্দিকাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগ।
এদিকে গোপালগঞ্জ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ইন্সট্রাক্টর মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন ভূইয়া ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দের ১ নভেম্বর থেকে অননুমোদিতভাবে কর্মস্থলে অনুপস্থিত ছিলেন। অনুপস্থিতির বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কোনো অনুমোদনও নেননি তিনি। এ প্রেক্ষিতে তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। অপরদিকে রাজশাহী পলিটেকনিক ইনিস্টিটিউটের ইন্সট্রাক্টর বেগম আয়েশা সিদ্দিকা ২০১১ খ্রিষ্টাব্দের ১৭ ডিসেম্বর থেকে অননুমোদিতভাবে কর্মস্থলে অনুপস্থিত। বিনা অনুমতিতে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকায় তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে বলে দৈনিক শিক্ষাকে জানিয়েছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তারা।
জানা গেছে, ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দের ১ নভেম্বর থেকে কর্মস্থলে অননুমোদিতভাবে অনুপস্থিত থাকায় গোপালগঞ্জ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ইন্সট্রাক্টর মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন ভূইয়াকে অসদাচরণের দায়ে অভিযুক্ত করে বিভাগীয় মামলা করে শোকজ করা হয়। শোকজের জবাব দেননি তিনি। তাই, অভিযোগটি তদন্তে কর্মকর্তা নিয়োগ করে কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগ। বিভাগের যুগ্মসচিব ড. মো ফারুক হোসেনকে অভিযোগ তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়।
অভিযোগটি তদন্ত করে গত বছরের ১৩ মে কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগে প্রতিবেদন দাখিল করেছেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। তদন্তে ইন্সট্রাক্টর মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন ভূইয়ার বিরুদ্ধে অসাদচরণ ও ডিসারশনের অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে।
এ প্রেক্ষিতে গত ১৮ জুলাই ‘সরকারি কর্মচারী বিধিমালা ২০১৮’ অনুযায়ী গুরুদণ্ড আরোপ করে ইন্সট্রাক্টর মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন ভূইয়াকে শোকজ করে কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগ। অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ‘কেন তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হবে না’ তার কারণ জানতে চাওয়া হয়েছিল শোকজে। কিন্তু ২য় শোকজ নোটিশেরও কোনো জবাব দেননি তিনি।
শোকজের জবাব না দেয়া মামলার ধারাবাহিক কার্যক্রমে বর্ণিত বিধিমালা অনুসারে ইন্সট্রাক্টর মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন ভূইয়াকে বরখাস্ত করার সিদ্ধান্ত নেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তে একমত প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশন। তাই, অসদচারণ ও পলায়নের অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় ইন্সট্রাক্টর মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন ভূইয়াকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।ু