তীব্র শিক্ষক সংকট নিয়ে চলছে রাজবাড়ী সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম। এ সংকট কাটাতে ১২ জন খণ্ডকালীন শিক্ষক দিয়ে পাঠদান চালিয়ে যাচ্ছে কর্তৃপক্ষ। অভিযোগ রয়েছে, খণ্ডকালীন শিক্ষকদের অনেকেরই দক্ষতা ও প্রশিক্ষণের অভাবে প্রায়ই ঘটছে অপ্রীতিকর ঘটনা। এতে শিক্ষার পরিবেশ বিঘ্নিত হওয়ার পাশাপাশি ব্যাহত হচ্ছে পাঠদান।
রাজবাড়ীর সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ সূত্রে জানা গেছে, ১৯৬৫ সালে স্থাপিত এ প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে শিক্ষার্থী সংখ্যা ১ হাজার ৪০০। শিক্ষকদের ৩২টি পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন মাত্র ১৩ জন। এর মধ্যে আবার অনেক শিক্ষকের বিরুদ্ধে নিয়মিত ক্লাস না নেয়ারও অভিযোগ রয়েছে।
অন্যদিকে, শিক্ষকদের এ ঘাটতি মেটাতে মাসিক ৩ হাজার টাকা বেতনে ১২ জন খণ্ডকালীন শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়। এজন্য প্রত্যেক শিক্ষার্থীর কাছ থেকে মাসে ৩৭৫ টাকা করে চাঁদা নেয়া হয়। সে হিসেবে বছরে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ৫ লাখ ২৫ হাজার টাকা চাঁদা আদায় করা হয়। এর মধ্যে ১২ জন শিক্ষকের বেতন বাবদ বছরে ৪ লাখ ৩২ হাজার টাকা খরচ হয়। বাকি ৯৩ হাজার টাকা কোন খাতে খরচ করা হয়—এমন প্রশ্নের কোনো উত্তর দেননি প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ মনিরুল ইসলাম।
এদিকে, গতকাল দুপুুরে রাজবাড়ীর সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজে গিয়ে অধ্যক্ষের কক্ষের সামনে শিক্ষার্থীদের একটি জটলা দেখা যায়। সেখানে উত্তেজিত শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিষ্ঠানটির বিল্ডিং ম্যানেজমেন্ট শাখার নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থী মো. মনিরুল ইসলামকে মারধরের পর অধ্যক্ষের কক্ষে আটক রাখা হয়েছে। অধ্যক্ষের কক্ষে প্রবেশ করে দেখা যায়, সেখানে মারধরের শিকার শিক্ষার্থী বসে কান্না করছে।
কান্নাকাটির বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষার্থী মনিরুল ইসলাম শার্ট খুলে পিঠে আঘাতের চিহ্ন দেখিয়ে বলে, গতকাল মূল্যায়ন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছি। আমার পাশে বসা ছিল রব্বানী। রব্বানী তার খাতাটি জমা না দিয়ে জানালা দিয়ে ফেলে দেয়। এজন্য আশিকুর রহমান স্যার আমাকে প্লাস্টিকের লম্বা কলম দিয়ে একের পর এক পিঠে আঘাত করতে থাকেন। এরপর আমাকে হাসপাতালেও যেতে দেয়া হয়নি। অধ্যক্ষ স্যারের কক্ষে বসিয়ে রাখা হয়।
এ বিষয়ে খণ্ডকালীন শিক্ষক মো. আশিকুর রহমান বলেন, ক্লাস মূল্যায়ন পরীক্ষার খাতা নেয়ার সময় একটি খাতা কম পাওয়ায় আমার মাথা ঠিক ছিল না। তাছাড়া আমি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষক নই। এজন্য শিক্ষার্থীদের মারধর না করার বিষয়ে আমার জানা ছিল না। যেহেতু করে ফেলেছি আমার ভুল হয়েছে।
এ বিষয়ে বিল্ডিং ম্যানেজমেন্ট বিভাগের বিভাগীয় প্রধান দেলোয়ার হোসেন বলেন, এ ঘটনাটি যখন ঘটে তখন আমি স্কুলে ছিলাম না। আমাদের শিক্ষক সংকট রয়েছে, তাই অল্প বেতনে তাদের দিয়ে পাঠদান চালানো হচ্ছে।
এ বিষয়ে রাজবাড়ীর টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজের অধ্যক্ষ মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, জরুরি কাজে আমি বাইরে ছিলাম। তাই শিক্ষকদের বলেছিলাম ওই শিক্ষার্থীকে আমার কক্ষে বসিয়ে রাখতে। পরে অভিভাবক ডেকে তাদের সামনে অভিযুক্ত শিক্ষক মো. আশিকুর রহমানকে কারণ দর্শানোর নোটিস দেয়া হয়। এছাড়া ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের ঘটনা না ঘটে তার জন্য সতর্ক করা হয়।