ছাত্রলীগের হাতে নির্যাতিত ঢাবির এহসান দেশ ছেড়েছেন

ঢাবি প্রতিনিধি |

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ মুসলিম (এসএম) হলে ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীদের নির্যাতনের শিকার এহসান রফিক নিরাপত্তাহীনতার কারণে দেশ ছেড়েছেন। তিনি মালয়েশিয়ায় একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে গেছেন। অথচ ওই ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ছাত্রলীগের যে সাত নেতা-কর্মীকে বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কার করেছিল, তাঁদের মধ্যে পাঁচজন হলেই থাকছেন। এমনকি যাঁকে আজীবনের জন্য বহিষ্কারের কথা বলা হয়েছে, তিনিও হলে থাকেন।

একই ঘটনায় ছাত্রলীগ থেকেও তিনজনকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। কিন্তু বহিষ্কৃত প্রত্যেকেই ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সময় দিচ্ছেন।

সহপাঠীর কাছ থেকে ক্যালকুলেটর ধার নেওয়া নিয়ে গত ৬ ফেব্রুয়ারি ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের মারধরের শিকার হন এহসান রফিক। তিনি দুর্যোগ বিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তাঁকে হলের একটি কক্ষে আটকে রেখে নির্যাতন করা হয়। এতে এহসানের একটি চোখের কর্নিয়া গুরুতর জখম হয়। তাঁর কপাল ও নাক ফেটে যায়।

আহত এহসানকে দেশের একাধিক হাসপাতালে চিকিৎসা করিয়েছেন তাঁর বাবা মো. রফিকুল ইসলাম। এরপর ভারতের শংকর নেত্রালয়ে তাঁর চোখে এক দফা অস্ত্রোপচার করানো হয়। রফিকুল একটি বেসরকারি টেলিভিশনের ঝিনাইদহ প্রতিনিধি।

মো. রফিকুল ইসলাম জানান, গত মাসের শেষ সপ্তাহে এহসান দেশ ছেড়ে মালয়েশিয়ায় একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে গেছেন। তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গেলে কী হয়, তা নিয়ে একটু ভীতি কাজ করছিল। কখন আবার কী হয়ে যায়, তা নিয়ে দুশ্চিন্তাও ছিল। এহসান নিজেই চাচ্ছিল না সেখানে যেতে, নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছিল। তাই শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হওয়ার পর তাঁকে বাইরে পড়তে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।

এর আগে এহসান আহত হওয়ার পর নিরাপত্তাসংকটের কারণে আবাসিক হলের বরাদ্দ পরিবর্তনের জন্য প্রশাসনের কাছে আবেদন করেছিলেন। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মে সেটি সম্ভব নয় বলে তাঁকে জানিয়ে দেওয়া হয়।

হল কর্তৃপক্ষের তদন্তের পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি সলিমুল্লাহ মুসলিম (এসএম) হল শাখা ছাত্রলীগের সহসম্পাদক ওমর ফারুককে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। এ ছাড়া উর্দু বিভাগের মেহেদী হাসান ওরফে হিমেল, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের রুহুল আমিন ব্যাপারী, দর্শন বিভাগের আহসান উল্লাহ, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সামিউল হক, লোকপ্রশাসন বিভাগের ফারদিন আহমেদকে দুই বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়। তাঁরাও প্রত্যেকে হল শাখা ছাত্রলীগের পদধারী নেতা। শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী এবং হল শাখার সহসভাপতি আরিফুল ইসলামকে এক বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়।

বহিষ্কৃত ব্যক্তিদের সহপাঠী ও হলের একাধিক শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বহিষ্কৃত ব্যক্তিদের মধ্যে সামিউল ও ফারদিনকে মাঝেমধ্যে এসএম হলে আসতে দেখা যায়। স্থায়ীভাবে বহিষ্কৃত ওমর ফারুক ও দুই বছরের জন্য বহিষ্কৃত মেহেদী হাসান ১২ নম্বর কক্ষে থাকেন। এই কক্ষটি হলের অনেকগুলো রাজনৈতিক কক্ষের একটি। সামিউলও মাঝেমধ্যে এই কক্ষে অবস্থান করেন। এ ছাড়া আরিফুল ইসলাম ১৫২ নম্বর কক্ষে ও আহসান উল্লাহ ১৭৮ নম্বর কক্ষে থাকেন। রুহুল আমিন থাকেন বারান্দায়। হার্ডবোর্ড দিয়ে সেখানে একটি কক্ষের মতো করে নিয়েছেন।

তাঁরা সবাই হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি তাহসান আহমেদের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। নতুন করে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কমিটি হওয়ার পর তাহসান আহমেদ কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর সঙ্গে রাজনীতি করেন। ফেসবুকে গোলাম রাব্বানীর সঙ্গে এই আরিফুল ও রুহুল আমিনের পৃথক ছবি আছে। তাঁরা নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদককে শুভেচ্ছা জানাতে গিয়েছিলেন।

সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী বলেন, ‘যদি এমন হয়, তবে বিষয়টি খুব দুঃখজনক। ওই সময় আমরা দায়িত্বে ছিলাম না। এ সম্পর্কে যদি কেউ আমাদের কাছে লিখিত অভিযোগ করে, তবে আমরা ব্যবস্থা নিতে পারব।’ এহসান মালয়েশিয়া চলে গেছেন, জানালে তিনি বলেন, ‘কাউকে না কাউকে তো আমাদের অবহিত করতে হবে। আমি তো আপনার কাছ থেকে প্রথম শুনলাম।’

হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মাহবুবুল আলম জোয়ার্দার বলেন, সাময়িক সময়ের জন্য বহিষ্কৃত কেউ হলে থাকতে পারবে কি না সে সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট কোনো নির্দেশনা নেই। থাকলে তিনি তা মেনে চলবেন। এহসান রফিকের ঘটনায় স্থায়ীভাবে কাউকে বহিষ্কার করা হয়েছে কি না, সে বিষয়ে কাগজপত্র যাচাই না করে তিনি কিছু বলতে পারছেন না বলে জানান।

জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম গোলাম রাব্বানী বলেন, যে সময়ের জন্য কোনো শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়, ওই সময়ে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো সুবিধা পাবে না, এটাই নিয়ম।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না - dainik shiksha সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু - dainik shiksha চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় - dainik shiksha প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট - dainik shiksha রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.003187894821167