পিরোজপুরের কাউখালী উপজেলার ৬৭টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবনের মধ্যে ১৮টি ঝুঁকিপূর্ণ। দীর্ঘদিনেও এসব ভবন সংস্কার কিংবা মেরামত করা হয়নি। ফলে দেড় হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী ঝুঁকি নিয়ে এসব বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করছে। একারনে দুর্ঘটনার আশঙ্কায় আছেন শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকরা।
কাউখালী উপজেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় ৬৭টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে ১৮টি ভবন ঝুঁকিপূর্ণ। এসব বিদ্যালয়ের ভবনের ছাদ থেকে খসে পড়ছে পলস্তরা। ছাদের কিছু স্থানে বের হয়ে আছে রড। কোথাও রয়েছে ফাটল। এমন ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ক্লাস করছে শিক্ষার্থীরা। বিদ্যালয়ের ছাদ ধসে বড় কোন দুর্ঘটনার আশঙ্কায় রয়েছেন বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।
ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যালয়গুলো হলো পূর্ব শিয়ালকাঠী হাজীবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মধ্য জোলাগাতী মোল্লার হাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দত্তেরহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চিরাপাড়া কে এম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পশ্চিম জিবগা পারসাতুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, উত্তর কেউন্দিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, শীর্ষা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কেউন্দিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সয়না সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পশ্চিম মাগুরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, উত্তর হোগলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মধ্য জোলাগাতী আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দাসেরকাঠী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সুবিদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কেশরতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সাপলেজা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নিলতী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও কাউখালী মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ।
সরজমিনে দেখা গেছে, এসব বিদ্যালয় ভবনের কোনটির বিভিন্ন স্থানে বড় বড় ফাটল দেখা গেছে। ছাদের ভীমের পলস্তরা খসে পড়ে রড বের হয়ে এসেছে। কোন বিদ্যালয় ভবন পরিত্যক্ত হওয়ায় জোড়াতালি দিয়ে টিনসেড ঘর নির্মাণ করে পাঠদান করা হচ্ছে। আবার কোন কোন ভবন জরাজীর্ণ ও পরিত্যক্ত হলেও শ্রেনীকক্ষ সংকটের কারনে বাধ্য হয়ে সেখানেই পাঠদান চলছে। এরমধ্যে জোলাগাতী আদর্শ সরকারি প্রথমিক বিদ্যালয়টি সম্পূর্ণ টিন দিয়ে তৈরি। ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো এক থেকে দেড় যুগ পূর্বে নির্মিত হলেও নিম্নমানের কাজ ও তদারকি না থাকায় ভবনগুলোর এমন অবস্থা হয়েছে।
কাউখালী মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুব্রত রায় দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, ক্লাসে এসে যেমন শিক্ষার্থীরা ভয়ে থাকে তেমনি আমরাও ভয়ে থাকি। বিকল্প কোন ব্যবস্থা না থাকায় বাধ্য হয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে শিক্ষার্থীদের পড়ানো হচ্ছে।
কথা হয় চতুর্থ শ্রেনীর শিক্ষার্থী রোদেলা ও শেখ নাবিল আহাম্মেদের সাথে। তারা বলেছে, ক্লাস করতে ভয় লাগে। কিন্তু স্যারেরা ক্লাস করতে বলে, তাই ক্লাস করি।
মধ্য জোলাগাতি আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রহিমা খানম মনি দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, তার বিদ্যালয়টি সম্পূর্ণ টিন দিয়ে খুপড়ি ঘরের মতো তৈরি করা হয়েছে। নিচু জায়গায় তৈরি করায় জোয়ারের সময় স্কুলের রাস্তা ও মাঠে পানি ওঠে। শ্রেণিকক্ষের ভেতরেও অনেক সময় পানি প্রবেশ করে।
মধ্য জোলাগাতী মোল্লারহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হুমাউন কবির দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, তার বিদ্যালয়টি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় শিক্ষার্থীর সংখ্যা হাতে গোনা কয়েকজনে এসে দাঁড়িয়েছে।
কাউখালী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা কে এম জামান দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, উপজেলার ১৮টি বিদ্যালয়ের ভবন খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। এসব বিদ্যালয়ের তালিকা সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। এরমধ্যে কয়েকটি ভবন নির্মাণের জন্য টেন্ডার হলেও ঠিকাদাররা এখনও কাজ শুরু করেনি। আর ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে পাঠদান বন্ধের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।