পার্ক থেকে শিক্ষার্থীদের পুলিশে দিলেন এমপি

নিজস্ব প্রতিবেদক |

বিশ্রাম বা নিরিবিলিতে বসে কাটানোর জন্য উপযুক্ত স্থান পার্ক। তীব্র গরমে নাভিশ্বাস ওঠলে সবুজ-শ্যামল ছায়াঘেরা পরিবেশে মানুষ বিশ্রাম নিয়ে থাকেন। টানা পরিশ্রমের পর কোনো শ্রমিক, দীর্ঘ পথ হেঁটে চলার পর পথচারী কিংবা ক্লাসের মাঝপথে বা শেষে কিছুটা সময় শিক্ষার্থীরা পার্কে বিশ্রাম কিংবা বসে বন্ধু-বান্ধব গল্পগুজব করতে পারেন। কিন্তু শিক্ষার্থীরা যদি স্কুল বা কলেজ ফাঁকি দিয়ে এই ধরণের গল্পগুজবে সময় কাটায় তবে সেটা স্কুল বা কলেজ কর্তৃপক্ষ নজরদারী করতে পারে। 

কিন্তু বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ পায়চারি করা বা গল্প-আড্ডা দেয়ার সময় যদি হঠাৎ দলবল ও পুলিশ সঙ্গে নিয়ে স্বয়ং একজন সংসদ সদস্য পার্কে বাগড়া দেন তখন বিষয়টি কেমন দেখায়?

মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) এমনটাই ঘটেছে নোয়াখালীর একটি পার্কে। নোয়াখালী-৪ আসনের সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরী নিজে পুলিশ নিয়ে পার্কে অভিযান চালিয়ে গল্পগুজবরত শিক্ষার্থীদের পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছেন।

শুধু তাই নয়, সাংসদ নিজের ফেসবুক পেজে শিক্ষার্থীদের ছবি পোস্ট করে অভিভাবকদের সতর্ক করেছেন এবং শিক্ষার্থীরা ক্লাস ফাঁকি দিয়ে পার্কে আড্ডা দিচ্ছিলো বলেও মন্তব্য করেছেন। তবে এই ঘটনাটি কোন পার্কে ঘটেছে তা তিনি লিখেননি।

একরামুল করিম তার ফেসবুক পেজে লেখেন, ‘অভিভাবকদের বলছি, আপনার সন্তানের খোঁজ খবর নিন। স্কুল-কলেজ চলাকালীন সময়ে ক্লাস ফাঁকি দিয়ে পার্কে ঘুরাঘুরি করছে কিনা খবর নিন। কোথায় যাচ্ছে, লেখাপড়া করছে কিনা খেয়াল রাখুন। স্পষ্টভাবে বলছি, স্কুল কলেজ চলাকালীন সময়ে কোনো শিক্ষার্থী পার্কে ঘুরাঘুরি করলে পুলিশ থানায় ধরে নিয়ে শাস্তি প্রদান করবে। আজকে স্কুল-কলেজ চলাকালীন সময়ে পার্কে শিক্ষার্থীরা আড্ডা দিচ্ছে দেখে পুলিশ থানায় নিয়ে গেছে। আমি পুলিশকে বলে দিয়েছি, ওদের অভিভাবকরা থানায় আসলে তাদের দায়িত্বে ওদের সর্তক করে ছেড়ে দিবে। আশাকরি এই ধরনের ঘটনা পুনরায় না হউক’।

একরামুল করিম তার পোস্ট শেয়ার করার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনা হচ্ছে। কেউ কেউ এমপির এমন ভূমিকার প্রশংসা করলেও অনেকেই সমালোচনায় বিদ্ধ করেছেন এবং প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছেন এই বলে যে, ‘পার্কে অভিযান চালিয়ে শিক্ষার্থীদের পুলিশে ধরিয়ে দেয়া কি একজন এমপির কাজ?  তার কি আর কোনো কাজ নেই? পুলিশ কি পার্ক থেকে লোকজনকে ধরে নিয়ে যেতে পারে? তাছাড়া ছাত্র-ছাত্রীর আড্ডারত ছবি প্রকাশ্যে ফেসবুকে শেয়ার করা কতোটা ন্যায়সঙ্গত?।

আবার কয়েকজন এমপির এমন ভূমিকায় প্রশংসায় ভাসিয়ে বলেছেন, ‘আমাদের ছেলে-মেয়েদের কঠোর শাসনের আওতায় আনা দরকার’।

সাংসদ একরামুলের ফেসবুক আইডিতে দেখা যায়, সাত ঘণ্টা আগের সেই পোস্টে লাইকের সংখ্যা প্রায় ৮ হাজার, শেয়ার হয়েছে দুই হাজারের অধিক এবং মন্তব্য পড়েছে প্রায় ২ হাজার।

রাজু ম্যাক্স নামে একজন ফেসবুক ব্যবহারকারী মন্তব্য করেছেন, ‘শাসনটা একদম ঠিক আছে। তবে ছবি তুলে ফেসবুকে দেয়া, সরাসরি থানায় পাঠানোর ব্যাপারটা হিতে বিপরীত হতে পারে। ছবি তুলে ফেসবুকে দিছেন, এক শ্রেণীর মানুষ আছে এই ছবিগুলা দিয়ে তাদেরকে ট্রল করবে। তখন ছেলে মেয়ে কোনো অঘটন ঘটালে এই দায়ভার কে নিবে? তাই শাসন করেন, থানায়ও পাঠান পরিবারকেও জানান। কিন্তু ছবি তুলে ফেসবুকে দেয়ার দরকার নাই’।

নাসরিন আক্তার নামে একজন ফেসবুক ব্যবহারকারী লিখেছেন, ‘মেয়েদের ছেড়ে দেয়া উচিত ছিলো। কারণ ওরা না বুঝে ভুল করছে। ওদের পুলিশে দেয়া ঠিক হয়নি। ছেলেদের গায়ে দাগ লাগলে ক্ষতি হয় না। মেয়েদের কথা ভাবা উচিত। কারণ এই ছবিগুলো কত মানুষ শেয়ার করছে দেখুন। ছবিগুলো ওদের জীবনে কতো ক্ষতি বয়ে আনতে পারে তা ভেবে দেখেছেন?’

ফখরুল ইসলাম নামে একজন ফেসবুক ব্যবহারকারী মন্তব্য করেছেন, ‘এটা ১০০% ভুল পদক্ষেপ আপনার। শাসন করেন ঠিক আছে। আপনি জনপ্রতিনিধি। কিন্তু তাই বলে ছবি তুলে ভাইরাল কিংবা সামান্য নাম কুড়ানোর  জন্য ফেসবুকে ভাইরাল বিপরীতেই যাবে। এরা অনেকে খারাপ হয়ে যেতে পারে। এমনকি নিজের জীবন হরণের মত কাজও করতে পারে মানসিক চাপে। এই দায় আপনি নিবেন?

শিপন কৃষ্ণ দেব নামের একজন কড়া মন্তব্য করেছেন, ‘এটা কি ন্যাশনাল থ্রেট নাকি মাননীয় এমপি? আর বাংলাদেশের কোন আইনই পুলিশকে এমন অধিকার দেয়নি। পুলিশ কোন ধারা বলে পার্ক থেকে ধরে নেয়ার সাহস করলো? ন্যাশনাল থ্রেট শেষ করতে পারছেন না। আবার মানুষ পার্কে ঘুরতে গেলে সেখান থেকেও ধরে নিয়ে যাবেন মাননীয় এমপি সাহেব?’

ফেসবুক ব্যবহারকারীদের এসব মন্তব্যের প্রেক্ষিতে এই বিষয়ে কথা বলার জন্য সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরীকে ফোন করা হলে তিনি ফোন ধরেননি।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
নিবন্ধিত শিক্ষক নিয়োগে এনটিআরসির নতুন নির্দেশনা - dainik shiksha নিবন্ধিত শিক্ষক নিয়োগে এনটিআরসির নতুন নির্দেশনা জাল সনদে চাকরি করছে কয়েক হাজার হেলথ টেকনোলজিস্ট - dainik shiksha জাল সনদে চাকরি করছে কয়েক হাজার হেলথ টেকনোলজিস্ট কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ফের আন্দোলনের হুশিয়ারি চুয়েট শিক্ষার্থীদের - dainik shiksha ফের আন্দোলনের হুশিয়ারি চুয়েট শিক্ষার্থীদের আইনি লড়াইয়ে যাচ্ছেন শিক্ষক নেতা কাওছার শেখ - dainik shiksha আইনি লড়াইয়ে যাচ্ছেন শিক্ষক নেতা কাওছার শেখ দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না - dainik shiksha সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় - dainik shiksha প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট - dainik shiksha রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0045130252838135