বরিশালে মাধ্যমিকের ২২ স্কুল ধুঁকছে শিক্ষক সংকটে

বরিশাল প্রতিনিধি |

বিদ্যালয়ের অস্তিত্ব রক্ষায় শিক্ষার্থী খুঁজতে হয় বরগুনা সরকারি বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের। কারণ প্রয়োজনীয় শিক্ষকের অভাব। এ প্রতিষ্ঠানটির অদূরে সরকারি বালক বিদ্যালয়েরও একই অবস্থা। শুধু তাই নয় বরিশাল বিভাগের প্রায় সব সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের চিত্র এমনই। 

বিভাগের বেশিরভাগ সরকারি মাধ্যমিক স্কুলেই ভারপ্রাপ্ত দিয়ে চলছে প্রধান শিক্ষকের কাজ। সহকারী প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষক আছেন পদের অর্ধেক সংখ্যক। ফলে শিক্ষার্থী-অভিভাবকরা আগ্রহ হারাচ্ছেন এসব প্রতিষ্ঠানের প্রতি। আর এ সুযোগে চলছে রমরমা কোচিং বাণিজ্য।

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা (মাউশি) বরিশাল অঞ্চলের পরিচালক অধ্যাপক মোয়াজ্জেম হোসেন বলেছেন, বরিশাল বিভাগের ২২টি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক সংকট ভয়াবহ। স্থায়ী প্রধান শিক্ষক আছেন মাত্র দুটিতে। স্কুলগুলোতে গড়ে ৩৮ ভাগ শিক্ষক নেই। তবে বরিশাল নগরীর দুটি স্কুল বাদ দিলে এ পার্সেন্টেজ দাঁড়াবে ৫০ ভাগের বেশি। 

পরিচলাক আরও বলেন, চলতি সপ্তাহে মাউশির পরিচালককে (মাধ্যমিক) এ বিষয়ে লিখিত তথ্য দেয়া হয়েছে। দীর্ঘদিন শিক্ষক নিয়োগ এবং পদোন্নতি বন্ধ থাকায় এ জটের সৃষ্টি হয়েছে। প্রত্যন্ত এলাকা, বিশেষ করে ভোলার দৌলতখান, পিরোজপুরের কাউখালী এবং বরগুনা জেলার প্রায় বিদ্যালয়ের অবস্থা আরও ভয়াবহ বলে জানান তিনি।

প্রয়োজনীয় শিক্ষক না থাকায় একটি প্রতিষ্ঠানকে কতখানি অস্তিত্ব সংকটে ফেলতে পারে, তার দৃষ্টান্ত বরগুনা সরকারি বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়। এ বছর বিদ্যালয়টির ষষ্ঠ শ্রেণির দিবা শাখার ভর্তি পরীক্ষায় ১২০ আসনের বিপরীতে আবেদন পড়ে মাত্র চারটি। প্রতিষ্ঠানটির ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আজহারুল হক এ তথ্য জানিয়ে বলেন, সমসংখ্যক প্রভাতি শাখায় ১৯৯ জন আবেদন করলে সেখান থেকে কিছু শিক্ষার্থী এনে দিবা শাখায় ৫০ জন ভর্তি করাতে পেরেছেন। এ প্রতিষ্ঠানটিতে ৫২ শিক্ষক পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন মাত্র ১৫ জন। তার মধ্যে একজন

বিএড কোর্সের জন্য এক বছরের ছুটিতে আছেন। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আজহারুল হক বলেন, শিক্ষক সংকটের জন্য কয়েক বছর আগে তৃতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। মাত্র ১৫ জন শিক্ষক দিয়ে দুটি শিফটে প্রায় এক হাজার শিক্ষার্থীকে পড়ানো অসম্ভব। এ কারণে একটি শিফট বাতিলেরও চিন্তাভাবনা চলছে। একই অবস্থা বরগুনা সরকারি বালক বিদ্যালয়েও। প্রতিষ্ঠানটির ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মাহমুদ চৌধুরী জানান, তার প্রতিষ্ঠানে ৫১ শিক্ষক পদের বিপরীতে আছেন ২২ জন।

জানা গেছে, শিক্ষক সংকটের সুযোগে কাছাকাছি অবস্থানে থাকা এ দুটি সরকারি বিদ্যালয়ের আশপাশে কোচিং সেন্টারের আদলে কমপক্ষে ১৫টি অনুমোদনহীন বিদ্যালয় স্থাপিত হয়েছে। তারা বাগিয়ে নিচ্ছে সরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের।

মাউশির আঞ্চলিক কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বিভাগীয় সদর বরিশাল নগরীতে ২০১৬ সালে স্থাপিত নতুন দুটি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ও চলছে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দিয়ে। নগরীর কাউনিয়ার শহীদ আরজু মনি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন মাউশির আঞ্চলিক কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক (বিদ্যালয়) এবাদুল ইসলাম। কয়েকজন অভিভাবক অভিযোগ করেন, এবাদুল ইসলাম নিয়মিত প্রতিষ্ঠানে না বসায় সহকারী শিক্ষকরা বিদ্যালয়ে রামরাজত্ব কায়েম করেছেন। কয়েকজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে বাধ্যতামূলক কোচিং করতে শিক্ষার্থীদের হুমকি দেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে।

এ প্রসঙ্গে সহকারী পরিচালক এবাদুল ইসলাম বলেন, তিনি বিদ্যালয়টির অতিরিক্ত দায়িত্বে আছেন। তাকে মাউশির আঞ্চলিক দাপ্তরিক কাজ সেরে বিদ্যালয়ে যেতে হয়। এতে তারও অনেক সমস্যা হচ্ছে। তিনিও চান প্রতিষ্ঠানটিতে একজন স্থায়ী প্রধান শিক্ষক দেয়া হোক। তিনি বলেন, বিভাগীয় সদর বরিশালে স্থায়ী প্রধান শিক্ষক আছেন একমাত্র জিলা স্কুলে। তবে চারটি প্রতিষ্ঠানেই সহকারী শিক্ষক পদগুলো প্রায় পরিপূর্ণ। এ কর্মকর্তার মতে, শিক্ষকরা প্রত্যন্ত এলাকাগুলোতে যেতে না চাওয়ায় সেখানে সংকট সবচেয়ে বেশি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কোচিং বাণিজ্যের লোভে শিক্ষকরা নানাভাবে তদবির করে জেলা সদরের বিদ্যালয়গুলোতে বছরের পর বছর কর্মরত আছেন। ফলে প্রত্যন্ত এলাকার বিদ্যালয়গুলো শিক্ষক সংকটে পড়েছে সবচেয়ে বেশি।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না - dainik shiksha সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু - dainik shiksha চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় - dainik shiksha প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট - dainik shiksha রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0054359436035156