তারা পৃথিবীতে এসেছে একসঙ্গে, বেড়ে উঠাও একসঙ্গে। পড়াশোনাও একসঙ্গে। মেধায়ও দুজন শেয়ানে শেয়ানে। তারা এবার সুযোগ পেল একসঙ্গে বুয়েটে পড়ালেখার। শুধু বুয়েটে নয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের নামকরা আরো বেশকিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে একসঙ্গে বেড়ে উঠা যমজ ভাইবোন।
পড়ালেখা শেষে ভবিষ্যতে একই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করার ইচ্ছাও তাদের। তারা হলো রাউজানের পূর্ব গুজরা ইউনিয়নের মধ্যম আধারমানিক গ্রামের করম আলী সওদাগরের বাড়ির জসিম উদ্দিন ও জাহেদা খাতুনের ছেলে-মেয়ে মো. জোবায়েদ হোসেন ও জেনিফা আকতার।
জানা যায়, মো. জোবায়েদ হোসেন প্লে থেকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করে অলিমিয়া হাট আধুনিক কিন্ডারগার্টেনে। এরপর অলিমিয়া হাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে সমাপনী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পায় এবং ট্যালেন্টপুলে সরকারি বৃত্তি অর্জন করে।
সমাপনীতে উপজেলা পর্যায়ে মেধায় চতুর্থ স্থান দখল করে। চুয়েট স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে জেএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পাওয়ার পাশাপাশি পায় সরকারি বৃত্তি। একই স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে অংশ নেয় এসএসসিতে। সেখানেও গোল্ডেন জিপিএ-৫ পাওয়ার পাশাপাশি পায় সাধারণ গ্রেডে সরকারি বৃত্তি। এসএসসি পাস করে ভর্তি হয় রাজধানী ঢাকার নটর ডেম কলেজে। সেখান থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পায় গোল্ডেন জিপিএ-৫।
সম্প্রতি ঢাকায় বুয়েট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজিতে ভর্তির সুযোগ পায় জোবায়েদ। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেলেও বুয়েটের ‘ত্রিপলী’ বিভাগে ভর্তি হবে সে।
ভালো একজন প্রকৌশলী হওয়ার পাশাপাশি ভবিষ্যতে সে বুয়েটে শিক্ষকতা করতে চায়। জোবায়েদ ইতোমধ্যে সৃজনশীল মেধা অন্বেষণে জাতীয় পর্যায়ে অংশ নিয়েছে চট্টগ্রামের প্রতিনিধি হয়ে।
একসঙ্গে পৃথিবীর আলো দেখা ভাই যখন এত মেধাবী, নিজেও মেধার প্রতিযোগিতায় কম যায় কিভাবে! তা-ই হয়েছে জোবায়েদের যমজ বোন জেনিফার ক্ষেত্রে। ভাইয়ের পথ ধরে জেনিফাও ভাইয়ের সঙ্গে একই বিদ্যালয়ে, প্রায় একই সাফল্য পেয়েছে পড়াশোনায়।
প্লে থেকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা তার অলিমিয়া হাট আধুনিক কিন্ডারগার্টেনে। অলিমিয়া হাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পিএসসিতে অংশ নিয়ে পায় জিপিএ-৫। পায় ট্যালেন্টপুল বৃত্তি। এসএসসিতে চুয়েট স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে অংশ নিয়ে পায় গোল্ডেন জিপিএ-৫। পায় সাধারণ গ্রেডে বৃত্তি। এইচএসসি পরীক্ষা দেয় ঢাকার মতিঝিল আইডিয়াল কলেজ থেকে। অর্জন করে জিপিএ-৫।
ইতোমধ্যে ভাইয়ের সঙ্গে বুয়েট, ঢাকা ও সিলেট বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় পেয়েছে ভর্তি হওয়ার সুযোগ। তবে ভাইয়ের মতো সেও সিদ্ধান্ত নিয়েছে বুয়েটে পড়ার। তারও ইচ্ছা পড়াশোনা শেষ করে বুয়েটের শিক্ষক হওয়ার। সে বলেছে, ‘বুয়েটের শিক্ষক হওয়ার বড় ইচ্ছা আমার। তা হতে না পারলে সরকারি চাকরিতে যাওয়ার চেষ্টা করব।’
আর জোবায়েদ বলে, ‘আমারও ইচ্ছা আছে ভবিষ্যতে বুয়েটের শিক্ষক হওয়া। আমাদের এই পর্যায়ে আসতে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রয়েছে আম্মার। কারণ তাদের বাবা আবুধাবি প্রবাসী হলেও ঢাকায় পরিবার নিয়ে বসবাস করে ছেলে-মেয়েদের পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়া অনেকটা দূরূহ ছিল।
মা জাহেদা খাতুন বলেন, ‘ওদের বাবার ইচ্ছা ছিল, তারা ডাক্তারি পড়বে। কিন্তু ছেলে মেয়েদের ইচ্ছা তারা ইঞ্জিনিয়ারিং পড়বে। তাদের ইচ্ছাকেই প্রাধান্য দিয়েছি।’