ব্যক্তিস্বার্থে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে জায়গা দখলের চেষ্টা

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

বিতর্ক যেন পিছু ছাড়ছে না সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (সিকৃবি) কর্তৃপক্ষের। এবার অভিযোগ উঠেছে জায়গা দখলের। ব্যক্তিস্বার্থে স্বায়ত্তশাসিত এই উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নামে জোরপূর্বক নিরীহ এক অ্যাডভোকেটের (উকিল) প্রায় ৫ ডেসিমেল জায়গা দখলের চেষ্টা চলছে। বৃহস্পতিবার (২ এপ্রিল) যুগান্তর পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। 

প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, এরপর নজর তাদের সিলেটের ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ ‘এমসি কলেজ’র জায়গা। অ্যাডভোকেটের জায়গা দখল পাকাপোক্ত হয়ে গেলেই তারা এমসি কলেজের জায়গায় হাত দেবে। ২৬ মার্চ দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির কয়েক কর্মচারী স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ দলবল নিয়ে জয়গা দখল পাকাপোক্ত করতে ঘর তৈরির জন্য যান। তবে জায়গার মালিকপক্ষে বাধায় তারা ব্যর্থ হয়ে ফিরে এলেও তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে।

জানা যায়, তৎকালীন সিলেট সরকারি দুগ্ধ খামারের পাশে ১৯৯১ সালে মোহাম্মদ আম্বর মিয়ার কাছ থেকে সাদিপুর প্রথম খণ্ডের মৌজায় ৭৯০ দাগে ৯৭ শতাংশ জায়গা কেনেন অ্যাডভোকেট মুহিবুর রহমান। ১৯৯৩ সালে সার্ভেয়ারের মাধ্যমে দুগ্ধ খামারের সঙ্গে সীমানাও নির্ধারণ হয়।

এরপর খামারের জায়গা একোয়ার করে সিলেট ভেটেরিনারি কলেজকে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত করা হয়। ২০০৬ সালে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন হলেও এতদিন সবকিছু ঠিকঠাক চলছিল। কিন্তু বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে জায়গা দখলের পাঁয়তারা চলছে বলে অভিযোগ করেছেন অ্যাডভোকেট মুহিব।

তিনি বলেন, আমার দাগ নম্বর ৭৯০ আর ভার্সিটির ৮৯৪। নকশা অনুযায়ীও দুই দাগের অবস্থান পরিষ্কার। কিন্তু ২০১৯ সালের শুরু থেকে ভার্সিটি কর্তৃপক্ষ দাবি করছে তাদের জায়গা আমার দখলে চলে এসেছে। এমতাবস্থায় ৪ বার জরিপ করেও তারা আমার দখলে থাকা জায়গায় তাদের জায়গার কোনো অবস্থান পাননি। তবুও তারা আমার জায়গা দখল করার জন্য নানাভাবে হয়রানি করছেন। এমনকি কোনো নোটিশ ছাড়া দেড় থেকে ২শ’ লোক নিয়ে এসে জোরপূর্বক একদিনে অবৈধ দেয়াল তৈরি করেছেন। প্রায় ৫ ডেসিমেল জায়গার ওপর তারা এ দখল নিতে চাচ্ছে। অপরদিকে এ বিষয়ে কোনো সদুত্তর দিতে পারছে না বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় একাধিক বাসিন্দা জানান, ‘৫ নং ওয়ার্ডের মেম্বার কাঁচা মিয়া ও তার একাধিক স্বজনের বসতবাড়িতেই বিশ্ববিদ্যালয়ের জায়গা পাওনা আছে। এজন্যই চুক্তির ভিত্তিতে নিজের জায়গা বাঁচিয়ে অন্যের জায়গা দখল করাতে চাচ্ছেন মেম্বার। এতে কৌশল হিসেবে নিরীহ মুহিবুর রহমানের জায়গা বেছে নিয়েছেন। আর মুহিবুর রহমানের জায়গা নিয়ে নিলে সোজা এমসি কলেজের আরও কিছু জায়গা দখলে নেয়া হবে। এতে কাঁচা মেম্বার ও তার স্বজনদের দখলে যে পরিমাণ জায়গা থাকবে ঠিক সমপরিমাণ জায়গা পূরণ করে নিবে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। তখন আর জায়গা কম থাকবে না। তা না হলে পরবর্তীতে সমস্যা হবে। স্থায়ী সুবিধার জন্য মেম্বার আর বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েক কর্মকর্তা মিলে সম্ভবত এটা করছেন।’

অবশ্য নিজের ভিটেতে বিশ্ববিদ্যালয়ের জায়গা রয়েছে স্বীকার করলেও চুক্তির বিষয়টি অস্বীকার করেছেন ইউপি সদস্য কাঁচা মিয়া। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পাওনা জায়গা ছেড়ে বাউন্ডারি করায় আমার বাড়িতে হয়তো সামান্য জায়গা রয়েছে এটা সত্য। এখন তারা চাইলে আমরা জায়গা দিয়ে দেব।

সিকৃবির সহকারী এস্টেট অফিসার আশফাক আহমদ বলেন, আমরা নোটিশ দিয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রার মহোদয়ের নির্দেশে জায়গা দখলে নিয়েছি। একাধিকবার জায়গার জরিপও করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের জায়গা বিশ্ববিদ্যালয় দখলে নিয়েছে।

জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের এস্টেট শাখা ও উপাচার্যের সঙ্গে কথা বলার অনুরোধ করেন সিকৃবি রেজিস্ট্রার বদরুল ইসলাম সুয়েব। তিনি বলেন, এসব বিষয় আমার দায়িত্বে নেই। এর জন্য স্টেট শাখা আছে। তারাই ভালো বলতে পারবে। তাছাড়া উপাচার্য স্যারের সাথেও কথা বলতে পারেন। আর কারও জায়গা কেউ দখলে নিতে পারবে না। অ্যাডভোকেট মুহিব এসেছিলেন, বিশ্ববিদ্যালয় খোলার পর বসে সমাধান করা যাবে।

সিকৃবি উপাচার্য বীরমুক্তিযোদ্ধা ড. মতিয়ার রহমান হাওলাদারের মোবাইলে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করে কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তার মোবাইলে খুদেবার্তা পাঠিয়েও সাড়া মেলেনি।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না - dainik shiksha সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু - dainik shiksha চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় - dainik shiksha প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট - dainik shiksha রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0064489841461182