মাদরাসা সুপারের বিরুদ্ধে নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ

ফুলবাড়ী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি |

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মায়ের নামে প্রতিষ্ঠান করে শিক্ষক নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে ছিটমহল দাসিয়ারছড়া শেখ ফজিলাতুন্নেছা দাখিল মাদরাসার সুপার আমিনুল ইসলামের বিরুদ্ধে। কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার অধুনালুপ্ত ছিটমহল দাসিয়ারছড়ায় শেখ ফজিলাতুন্নেছা দাখিল মাদরাসার ব্যানারে শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছেন এই মাদরাসা সুপার।

মো. শাহনুর আলম, মো. আবুবক্কর সিদ্দিক, মো. আমজাদ হোসেন, মো. ওয়াহেদ আলী, মো. হাসান আলী, মো. আব্দুস ছালামসহ মাত্র ৬ জন শিক্ষকের নিবন্ধন (এনটিআরসি) থাকলেও বাকিগুলো নিয়োগ দেয়া হয়েছে নিবন্ধন ছাড়াই। জানাযায়, বিলুপ্ত ছিটমহল দাসিয়ারছড়ায় ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দে স্থাপিত হয় শেখ ফজিলাতুন্নেছা দাখিল মাদরাসা। পাঠদানের অনুমতি পান ১২ই মার্চ ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দে। জাতীয়করণ ঘোষণা হয় ১৪ই জানুয়ারি ২০২০ খ্রিষ্টাব্দে। মাদরাসায় মৌখিক ভাবে শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়েছে ১৭ জনকে। কিন্তু তার কোনো শিক্ষক হাজিরার খাতা ও ছাত্রছাত্রী হাজিরার খাতাও তারা দেখাতে পারেনি। 

সরজমিন গিয়ে দেখা যায়, গতকাল সকাল সাড়ে ১১টার সময় শেখ ফজিলাতুন্নেছা দাখিল মাদরাসায় গিয়ে দেখা যায়, শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রী উপস্থিতি কম। মৌখিকভাবে শিক্ষক রয়েছে ১৭ জন ও ছাত্রছাত্রী প্রায় তিনশ’ জনের কথা জানিয়েছেন মাদরাসার সুপার ও সহ-সুপার। মাদরাসা প্রতিষ্ঠানের কাগজপত্র দেখতে চাইলে তিনি কাগজ দেখাতে অপারগতা প্রকাশ করেন। কাগজপত্রের বিষয়ে  সরকারি কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক নেতারা পর্যন্ত ম্যানেজ করা আছে বলে জানিয়েছেন সুপার ও সহ-সুপার। এসময় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেক শিক্ষকরা  বলেন, নিয়োগকৃত শিক্ষক-কর্মচারী মো. শাহনুর আলম ৫ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা, হাফিজুর রহমানের ২ লাখ ৫০ হাজার  টাকা, আবুবকর সিদ্দিকের ২ লাখ ৯৮ হাজার টাকা, মো. আব্দুস ছালামের ৩ লাখ টাকা, মো.আব্দুল হাই মিয়ার ১ লাখ ২৮ হাজার টাকা, মো. মফিজুল ইসলামের ১ লাখ ৫৫ হাজার  টাকা, মো. রেজাউল করিমের ২ লাখ টাকা, মো. জয়নাল আবেদীনের ১ লাখ ৩৩ হাজার টাকা, মোছা. আঞ্জুয়ারা বেগমের ৩ লাখ ৫২ লাখসহ এমন আরো অনেকের কাছ থেকে মোট ৩২ লাখ ৩৮ হাজার টাকা নিয়ে ভুয়া নিয়োগ প্রদান করেছেন মাদ্রাসা সুপার। 

স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল হাকি, নুর আলম মিয়াসহ অনেকেই জানান, সুপারিনটেনডেন্ট আমিনুল ইসলাম মাদরাসার কমিটি গঠনে নিজ পিতা. মো. আব্দুর রহমানকে সভাপতি করেন। মাদরাসা বোর্ড হতে কমিটি পাস করে নিয়ে আসেন। এমনকি মাদরাসার জমি নিজ নামে রেকর্ড করেন। গত ৩০শে জুন ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে দায়িত্বপ্রাপ্ত সুপার মো. আমিনুল ইসলাম নিজ স্বাক্ষরিত ইস্তফাপত্র প্রদান করেন কমিটির সভাপতি সহ বিভিন্ন দপ্তরে।

তার পরেও বহাল তবিয়তে মাদরাসার সুপারের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন তিনি। শেখ ফজিলাতুন্নেছা দাখিল মাদরাসার দায়িত্বে থাকা সুপারিনটেনডেন্ট মো. আমিনুল ইসলাম জানান, প্রতিষ্ঠান তৈরির স্বার্থে শিক্ষকদের কাছ থেকে টাকা নেয়া হয়েছে। এই বলে তিনি মাদরাসা প্রাঙ্গণ থেকে চম্পট দেন। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম জানান, আমরা শিক্ষকদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা পাইনি। পেলে তদন্তসাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। এ ব্যাপারে কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক মোছা. সুলতানা পারভীন জানান, শেখ ফজিলাতুন্নেছা দাখিল মাদরাসা জাতীয়করণ ঘোষণা করা হয়েছে শুনেছি, কিন্তু কতজন শিক্ষক নেয়া হয়েছে আমি জানি না, তদন্ত করা হবে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না - dainik shiksha সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু - dainik shiksha চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় - dainik shiksha প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট - dainik shiksha রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0053169727325439