মাদরাসার নামে জামালপুরে সরকারি পুকুর বেদখল

জামালপুর প্রতিনিধি |

জামালপুর শহরের শতবর্ষের পুকুর-জলাশয়গুলো একে একে বেদখল হয়ে যাচ্ছে। এসব পুকুর-জলাশয়ে মাটি ভরাট করে অবৈধ স্থাপন নির্মাণ করার ফলে বৃষ্টি হলেই শহরে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। দুর্ভোগ পোহাতে হয় নগরবাসীকে। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের নামে এবং রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে একটি চক্র পুকুর-জলাশয়গুলো মাটি ভরাট করে বেদখল করছে। তারপর অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করছে ভরাটকৃত জায়গায়। প্রশাসনের নাকের ডগায় সরকারের খাস খতিয়ানভুক্ত এসব পুকুর-জলাশয় অবৈধভাবে দখল করা হলে নজরে পড়ছে না।

মাদরাসার নামে দখলকৃত পুকুর | ছবি : সংগৃহীত

প্রায় দুই শত বছরের প্রাচীনতম শহর জামালপুর। ব্রিটিশ আমলে শহরটিকে মহাকুমায় উন্নীত করা হলে ক্রমান্বয়ে একটি বর্ধিষ্ণু শহরে রূপান্তরিত হয় জামালপুর শহর। তখন শহরের পুকুর-জলাশয়গুলোই ছিল সুপেয় পানির এক মাত্র উৎস্য। শহরবাসী তাদের দৈনন্দিন পানীয় জলের চাহিদা পূরণ করতে পারত এসব থেকে। অভিনব কৌশলে পুকুর-জলাশয়গুলো ভরাট করে দখল করা হচ্ছে। প্রথমে পৌরসভার আবর্জনা ফেলে সাধারণ মানুষের ব্যবহারের অনুপোযোগী করা হয়। পরে মাটি ফেলে ভরাট করা হয়। তখন ওখানে অবৈধভাবে স্থাপনা নির্মাণ করা হয়। এভাবে পুকুর-জলাশয়ের দখলসূত্রে মালিক বনে যাচ্ছে ভূমিদস্যুরা। বিশেষ করে মাদরাসার নাম দখল করা হয় তখন এলাকাবাসী কোন প্রকার উচ্চবাচ্য করতে সাহস পান না।

সিংহজানি মৌজার সব চাইতে পুরনো পুকুর শহীদ হারুন সড়কে অবস্থিত। প্রায় সত্তর বছরের অধিক সময় ধরে পুকুরটি ব্যবহার করে আসছিল এলাকাবাসী। পুকুরটি ‘চামড়া পুকুর’ নামে পরিচিত। এই পুকুরটির ওপর নজর পড়েছে প্রভাবশালী ভূমি দস্যুচক্রের। আল জামিয়াতুল হাবিবীয়া (কওমি) মাদরাসার নামে পুকুরটি ইতোমধ্যে মাটি ভরাট করে বেদখল করা হয়েছে। পুকুরের দক্ষিণ-পূর্ব পাশে মাটি ভরাট করে একটি দু’চালা এবং একটি চৌচালা নতুন টিনের ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। মাসখানেক সময় বিরতি দিয়ে উত্তর-পূর্ব পাশে পুনরায় মাটি ভরাট করে আরেকটি টিনের চৌচালা ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। উত্তর-পূর্ব পাশে একটি পুরনো জাম গাছ ছিল। ঘর তুলতে গিয়ে সেই জাম গাছটিও কেটে ফেলা হয়েছে। এছাড়াও পুকুরটি পূর্ব-পশ্চিম, উত্তর-দক্ষিণ ও পূর্ব-পশ্চিম লম্বালম্বিভাবে টিনের বেড়া দিয়ে বেষ্টনী দেয়া হয়েছে। সদ্য নির্মিত টিনের ঘরে আল জামিয়াতুল হাবিবীয়া (কওমি) মাদরাসার নূরানী কিন্ডার গার্টেন শাখার একটি ব্যানার ঝুলায়ে রাখা হয়েছে।

পুকুরটির মালিকনা নিয়ে যুগ্ম জেলা জজ দ্বিতীয় আদালতে একটি স্বত্ব ঘোষণামূলক এবং বিজ্ঞ সিনিয়র সহকারী জজ, প্রথম আদালতে ডিগ্রি বাতিলের আরেকটি মামলা চলমান রয়েছে। ১৯৬২ খ্রিষ্টাব্দে আওআর জরিপে এবং ১৯৮২ খ্রিষ্টাব্দে বিআরএস জরিপে পুকুরটি সরকারের খাস খতিয়ানে অন্তর্ভুক্ত হয়। শহরের শহীদ হারুন সড়কে আল জামিয়াতুল হাবিবীয়াহ (কওমি) মাদরাসা স্থাপিত হয় ১৯৯৬ খ্রিষ্টাব্দে। মাদরাসার কমিটির লোকেরা ১৯৬৮ খ্রিষ্টাব্দের একটি দানপত্র দলিলের ভিত্তিতে পুকুরের মালিকা দাবি করছে। দানপত্র দলিলে নম্বর ১০৭০৫। ভূমি আইনে সরকারি খাস জমি বিক্রি, দান করা অথবা হস্তান্তর করা সম্পূর্ণরূপে বেআইনি। দানপত্রে সিএস মালিক জমির সেখের দুই পুত্র পুকুরটা দান করেছেন ফুরকানিয়া হাবিবীয়া মাদ্রাসার নামে। বর্তমানে সেই মাদরাসার কোনো অস্তিত্ব নেই।

দানপত্র দলিলে সিএস খতিয়ান হলো ৫৯০। সিএস ৫৯০ খতিয়ানের ভূমির মালিক শ্যামাচরণ নাগ। অন্য দিকে সিএস ৫৯০ খতিয়ানের মালিক জমির সেক। তার কোন সন্তান ছিল না। তিনি ছিলেন নিঃসন্তান। সুতরাং তার দুই পুত্র মাদরাসাকে পুকুরের ভূমি দান করেছেন তা সম্পূর্ণরূপে বানোয়াট। কাগজি দলিল মাত্র।

দুইটি পৃথক সিএস খতিয়ান এবং দুই জন পৃথক সিএস মালিক হওয়া সত্ত্বে আল জামিয়াতুল হাবিবীয়া মাদরাসার নামে স্বার্থান্বেষী ভূমিদস্যু চক্র সরকারের খাস খতিয়ানভুক্ত পুকুরটি গ্রাস করতে উঠেপড়ে লেগেছে। খাস জমি লিজ নেয়া ছাড়া দখল করে স্থাপনা নির্মাণ সম্পূর্ণরূপে অবৈধ হলে আল জামিয়াতুল হাবিবীয়া (কওমি) মাদরাসার কমিটির লোকজন কোন তোয়াক্কা করছেন না। প্রকাশ্যে বেআইনিভাবে গাছ কর্তন, পুকুরের মাটি ভরাট এবং টিনের বেড়া দিয়ে ঘর নির্মাণ করা হলেও এখনও পর্যন্ত জেলা প্রশাসন কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।

জেলা প্রশাসক মো. এনামুল হক বলেন, ‘পুকুরটি সরকারের খাস খতিয়ানভুক্ত। পুকুর ভরাট করা এবং অবৈধভাবে স্থাপনা নির্মাণ করাটা সম্পূণরূপে বেআইনি। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে এসিল্যান্ডকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করা হয়ে থাকলে অবশ্যই উচ্ছেদ করা হবে।’


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না - dainik shiksha সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু - dainik shiksha চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় - dainik shiksha প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট - dainik shiksha রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0063211917877197