‘যৌন হয়রানি বিষয়ে নিরাপত্তা পর্যাপ্ত নয়’ শিক্ষার্থী জরিপের তথ্য

নিজস্ব প্রতিবেদক |

সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত চারটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮৪ শতাংশ শিক্ষার্থী মনে করেন, যৌন হয়রানি প্রতিরোধে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নিরাপত্তাব্যবস্থা পর্যাপ্ত নয়। ৮৫ শতাংশ শিক্ষার্থীর মতে, এসব প্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানির বেশির ভাগ ঘটনা প্রকাশ পাচ্ছে না।

চারটি বিশ্ববিদ্যালয়ে নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বাড়ানো-বিষয়ক প্রকল্পের ভিত্তি জরিপে এ তথ্য পাওয়া গেছে। ওই জরিপে দেখা গেছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানি প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেওয়ার ব্যাপারে হাইকোর্টের নির্দেশনা সম্পর্কে ৫৫ শতাংশ শিক্ষার্থী কিছু জানেন না।

‘বিল্ডিং ইনস্টিটিউশনাল ক্যাপাসিটি অব সিলেক্টেড ইউনিভার্সিটিজ টু প্রিভেন্ট ভায়োলেন্স অ্যাগেইনস্ট উইমেন’ শীর্ষক প্রকল্পের ভিত্তি জরিপটি করেছে বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতি (বিএনডব্লিউএলএ)। এতে আর্থিক ও কারিগরি সহায়তা দিয়েছে জাতিসংঘের নারীবিষয়ক সংস্থা ইউএন উইমেন। জরিপটি শেষ হয়েছে এ বছর অক্টোবরে। জরিপে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট), রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পাশাপাশি ৪৬০ জন ছেলে ও ৪৬০ জন মেয়ে শিক্ষার্থীর মতামত নেওয়া হয়।

২০০৯ সালে বিএনডব্লিউএলএর দায়ের করা জনস্বার্থমূলক এক মামলায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কর্মস্থলে নারীদের প্রতি যৌন হয়রানি প্রতিরোধে হাইকোর্ট সুনির্দিষ্ট নির্দেশনাসহ রায় দেন। তাতে বলা হয়, যৌন হয়রানি প্রতিরোধে আইন প্রণয়ন না হওয়া পর্যন্ত নির্দেশনা পালনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কর্মক্ষেত্র ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অভিযোগ গ্রহণ, তদন্ত পরিচালনা ও সুপারিশ করার জন্য কমপক্ষে পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করার নির্দেশনা দেন হাইকোর্ট। কমিটির বেশির ভাগ সদস্য হবেন নারী, সম্ভব হলে এর প্রধানও হবেন নারী। হাইকোর্টের নির্দেশনা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কতটুকু বাস্তবায়িত হচ্ছে, তা নজরদারির দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করছে বিএনডব্লিউএলএ।

দেশের ৮০টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬৯টি এবং ৩৭টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হাইকোর্টের নির্দেশনা মেনে যৌন হয়রানি প্রতিরোধ কমিটি গঠন করেছে। বিএনডব্লিউএলএর জরিপ বলছে, ৪৩ শতাংশ ছেলে এবং ৫৩ শতাংশ মেয়ে শিক্ষার্থী কমিটিতে যৌন হয়রানি বিষয়ে অভিযোগ দেওয়ার প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানেন।

প্রকল্পের জ্যেষ্ঠ বিশেষজ্ঞ আবু হানিফ বলেন, কমিটি গঠনের পর এ পর্যন্ত শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১০টির মধ্যে ৯টি অভিযোগেরই নিষ্পত্তি হয়নি। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ৮টি অভিযোগের ২টির নিষ্পত্তি হয়নি। জাহাঙ্গীরনগর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ১১টি অভিযোগের মধ্যে ১টি নিষ্পত্তির অপেক্ষায় আছে। এ সময়ে বুয়েটে কোনো অভিযোগই জমা পড়েনি।

কমিটির অভিজ্ঞতা: শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন নিরোধ কেন্দ্র পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক ইয়াসমীন হক বলেন, লোকপ্রশাসন বিভাগের এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ দীর্ঘ সময় ধরে তদন্ত করে কমিটি গত বছরের ২৪ জুন প্রতিবেদন জমা দেয়। তবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সেই প্রতিবেদন খুলেই দেখেনি। সিন্ডিকেট সভায় বিষয়টি উত্থাপনের আগে অভিযুক্ত ওই শিক্ষককে শিক্ষা ছুটি দিয়ে বিদেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। তিনি বলেন, প্রশাসন সহায়তা না করলে এ ধরনের কমিটির পক্ষে দায়িত্ব পালন করা কঠিন।

তবে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন বিরোধ অভিযোগ কমিটির সভাপতি মাহবুবা কানিজ কেয়া বলেন, অভিযোগ প্রমাণের পর শিক্ষকদের চাকরিচ্যুতি, পদোন্নতি আটকে দেওয়াসহ বিভিন্ন শাস্তি কার্যকর করেছে সিন্ডিকেট কমিটি। এখন পর্যন্ত প্রশাসনিক বা রাজনৈতিক চাপের মুখে পড়তে হয়নি। তাঁর মতে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীরা এখন পর্যন্ত যৌন হয়রানির ঘটনা নিঃসংকোচে বলতে পারছে না। যৌন নির্যাতনমূলক ভাষা বা অঙ্গভঙ্গি করে ঠাট্টা, মশকরা বা চোখের চাহনিও যে যৌন হয়রানির আওতায় পড়ে, তা-ও অনেকে জানে না।

বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় এ ব্যাপারে নানা উদ্যোগ নিচ্ছে। বুয়েট ছাড়া অন্য তিন বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিটির প্রধানেরা জানিয়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ডায়েরিতে কমিটি সম্পর্কে লেখা আছে। এ ছাড়া নবীনবরণের দিন শিক্ষার্থীদের এ বিষয়ে জানানো হয়।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক রাশেদা আখতার বলেন, যৌন হয়রানি প্রতিরোধ এবং কমিটি সম্পর্কে জানানোর চেষ্টা করলেও অনেক শিক্ষার্থীই এ বিষয়ে তেমন একটা আগ্রহ দেখান না।

বিএনডব্লিউএলএর নির্বাহী পরিচালক সালমা আলী বলেন, যৌন নির্যাতনের ঘটনাকে এখন পর্যন্ত বড় ঘটনা হিসেবেই ভাবা হচ্ছে না। তিনি মনে করেন, সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এবং এনজিও প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি মনিটরিং টাস্কফোর্স গঠন এবং দ্রুত একটি আইন প্রণয়ন জরুরি।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না - dainik shiksha সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু - dainik shiksha চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় - dainik shiksha প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট - dainik shiksha রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0025629997253418