শামীম গ্রেফতারে আটকে গেছে তিন হাজার কোটি টাকার কাজ

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

গোলাম কিবরিয়া শামীম ওরফে জি কে শামীম গ্রেফতার হওয়ায় গণপূর্ত মন্ত্রণালয় থেকে তার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জিকেবি অ্যান্ড কোম্পানি প্রাইভেট লিমিটেডের পাওয়া ৩ হাজার কোটি টাকার ১৭টি প্রকল্পের কাজ এখন বন্ধ রয়েছে। সরকারের বিভিন্ন সংস্থার এই কাজগুলোর ভবিষত্ এখন কী তা নিয়েও তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশা। অন্যদিকে এত বড়ো বড়ো কাজ কীভাবে জি কে শামীমের প্রতিষ্ঠান পেয়েছে, সে বিষয়েও দেখা দিয়েছে প্রশ্ন। গণপূর্তের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী উত্পল কুমারকে ওএসডি করা হলেও আগের দুর্নীতির দায়ে প্রকৌশলী শাহাদাত হোসেনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা হলেও তিনি এখনো গণপূর্তের প্রধান প্রকৌশলীর দায়িত্বে রয়েছেন। রোববার (৬ অক্টোবর) ইত্তেফাক পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন নিলয় মামুন।

জি কে শামীমের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বর্তমানে ৩ হাজার কোটি টাকার ১৭টি নির্মাণ প্রকল্পের কাজ চলছে। এর মধ্যে সচিবালয়ে ১৫০ কোটি টাকার অর্থ মন্ত্রণালয়ের নতুন ভবন ও ১৫০ কোটি টাকার ক্যাবিনেট ভবন; আগারগাঁওয়ে ৪০০ কোটি টাকার এনবিআর ভবন; বিজ্ঞান জাদুঘরে ১০০ কোটি টাকা; সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের বর্ধিত ভবন নির্মাণে ৪০০ কোটি টাকার প্রকল্প, পঙ্গু হাসপাতালে ৩৫০ কোটি টাকার প্রকল্প, ৫০০ কোটি টাকা ব্যয়ে র্যাব হেডকোয়ার্টার, ২০০ কোটি টাকার প্রকল্পে মহাখালী শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতাল, বেইলি রোডে ৩০০ কোটি টাকার পার্বত্য চট্টগ্রাম কমপ্লেক্স; এনজিও ফাউন্ডেশনের ৬৫ কোটি টাকার কাজ চলমান রয়েছে। এর পাশাপাশি ২০ থেকে ২৫ কোটি টাকার অ্যাজমা হাসপাতাল, ২০ থেকে ২৫ কোটি টাকার ক্যানসার হাসপাতাল, ২০ থেকে ২৫ কোটি টাকার সেবা মহাবিদ্যালয়, ৮০ কোটি টাকার নিউরোসায়েন্স হাসপাতাল, ৮০ কোটি টাকার বিজ্ঞান জাদুঘর, ১২ কোটি টাকার পিএসসি, ৬৫ কোটি টাকার এনজিও ফাউন্ডেশন এবং মিরপুর-৬ তে ৩০ কোটি টাকার প্রকল্পের কাজ রয়েছে জি কে শামীমের প্রতিষ্ঠানের হাতে। কিন্তু শামীম গ্রেফতার হওয়ায় এসব কাজ বন্ধ রয়েছে।

এসব কাজের ভবিষত্ কী এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রী শ. ম. রেজাউল করিম বলেন, আসলে কাজগুলো তো জি কে শামীমকে দেওয়া হয়নি। এগুলো দেওয়া হয়েছে তার প্রতিষ্ঠানকে। তাই তার গ্রেফতারের কারণে কাজ সাময়িক বন্ধ রয়েছে ঠিকই, কিন্তু আমরা এখন কাজগুলো কীভাবে চালিয়ে নেওয়া যায়, সেটা ভাবছি। আমরা তাদের প্রতিষ্ঠানকে এ বিষয়ে চিঠি দেব। যদি তারা এ বিষয়ে অপরাগতা প্রকাশ করে তাহলে আমরা অন্য প্রতিষ্ঠানকে এ কাজ দেব।

এদিকে এসব কাজ কীভাবে শামীমের প্রতিষ্ঠান পেয়েছে, এ নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এসব বড়ো বড়ো কাজ পেতে গণপূর্তের প্রকৌশলীদের বড়ো ধরনের উত্কচ প্রদান করতেন বলে শামীম রিমান্ডে জানিয়েছিলেন বলে জানান র্যাব ।

গণপূর্তের একাধিক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এর আগেও বিভিন্ন সময়ে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। কিন্তু তদন্তের অভাবে এখনো বহাল তবিয়তে রয়েছেন অনেকে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বর্তমান প্রধান প্রকৌশলী মো. শাহাদাত হোসেন ২০০৪ সালে নোয়াখালীর নির্বাহী প্রকৌশলী থাকাকালে সংসদ সদস্যদের প্লট বরাদ্দের অনিয়মের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। কিন্তু সেই প্রকৌশলী বর্তমানে দায়িত্ব পালন করছেন প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে।

প্রধান প্রকৌশলীর দুর্নীতির দায়ে দুদকে মামলা সম্পর্কে প্রকৌশলী শাহাদাত হোসেন বলেন, আসলে আমি এ মামলায় হাইকোর্ট থেকে বহু আগে জামিন পেয়েছি। এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন।

প্রধান প্রকৌশলীর নিয়োগ সম্পর্কে গণপূর্ত মন্ত্রী বলেন, ‘আসলে তার বিষয়ে পূর্বে দুদক একটি অভিযোগ দায়ের করেছে শুনেছি। তবে তিনি সেই অভিযোগ থেকে খালাশ পেয়েছেন। তিনি যেহেতু আমি মন্ত্রী হওয়ার আগে নিয়োগ পেয়েছেন সেহেতু তার বিষয়ে তেমন কিছু বলতে পারছি না’।

এদিকে র্যাব হেডকোয়ার্টার টেন্ডারের ওয়ার্ক অর্ডার দেওয়ার দুই মাস পর নিয়োগ পাওয়া অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী উত্পল কুমার দে কে টেন্ডারের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ওএসডি করা হয়েছে। অথচ এই কাজে অন্যদের সম্পৃক্ততা থাকলেও কারো বিরুদ্ধে এখনো ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানা যায়নি। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আগামী ডিসেম্বরে প্রধান প্রকৌশলীর মেয়াদ শেষ হবে। তাই এ পদে নিয়োগ পেতে দৌড়-ঝাঁপ শুরু করেছেন অনেকে। শাহাদাত হোসেনও চেষ্টা করছেন তার মেয়াদ বাড়ানোর জন্য।

প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে নিয়োগ পেতে এবং জি কে শামীমের প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেওয়া ও প্রকৌশলীদের বিরুদ্ধে শামীমের উেকাচ প্রদানের অভিযোগের কারণে এখন অস্থিরতা বিরাজ করছে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
নিবন্ধিত শিক্ষক নিয়োগে এনটিআরসির নতুন নির্দেশনা - dainik shiksha নিবন্ধিত শিক্ষক নিয়োগে এনটিআরসির নতুন নির্দেশনা জাল সনদে চাকরি করছে কয়েক হাজার হেলথ টেকনোলজিস্ট - dainik shiksha জাল সনদে চাকরি করছে কয়েক হাজার হেলথ টেকনোলজিস্ট কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ফের আন্দোলনের হুশিয়ারি চুয়েট শিক্ষার্থীদের - dainik shiksha ফের আন্দোলনের হুশিয়ারি চুয়েট শিক্ষার্থীদের আইনি লড়াইয়ে যাচ্ছেন শিক্ষক নেতা কাওছার শেখ - dainik shiksha আইনি লড়াইয়ে যাচ্ছেন শিক্ষক নেতা কাওছার শেখ দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না - dainik shiksha সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় - dainik shiksha প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট - dainik shiksha রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0026390552520752