সর্বনিম্ন টিউশন ফি ৩৫ টাকা পরিশোধ করবে সরকার

নিজস্ব প্রতিবেদক |

আগামী বছর থেকেই ষষ্ঠ শ্রেণির পড়ালেখাও অবৈতনিক হচ্ছে। প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণির মতো ষষ্ঠ শ্রেণিতেও স্কুলে বেতন দিতে হবে না শিক্ষার্থীদের। ষষ্ঠ শ্রেণির প্রত্যেক শিক্ষার্থীর টিউশন ফি পরিশোধ করবে সরকার। এই ফি হবে সর্বনিম্ন ৩৫ টাকা। আর সর্বোচ্চ কত টাকা মাসিক টিউশন ফি পরিশোধ করা হবে, তা অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা করে ঠিক করা হবে।

তবে, প্রশ্ন উঠেছে, যদি ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষাও অবৈতনিক করা হয়, তাহলে তা শুধু সরকারি ও এমপিওভুক্ত স্কুলের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে কি-না? শহরে ও গ্রামের স্কুলের টিউশন ফি একেক জায়গায় একেক রকম। সে ক্ষেত্রে কমন ফি নির্ধারণ হলে জটিলতা সৃষ্টি হবে কি-না তাও আলোচনায়  আছে।

গত ২৩ মে আন্তর্জাতিক মার্তৃভাষা ইনস্টিটিউটে অনুষ্ঠিত এসইডিপি প্রকল্পের এক কর্মশালায় শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি জানান, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে মানসম্মত শিক্ষার বিষয়টি ছিল। মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে এই প্রকল্পের মাধ্যমে ৬ষ্ঠ থেকে ১২শ শ্রেণির সব শিক্ষার্থীর টিউশন ফি দেয়া হবে। এছাড়াও পাবলিক পরীক্ষার ফি প্রদান, বই কেনা, উপবৃত্তি ও টিউশন ফি এবং স্টকহোল্ডারদের প্রশিক্ষণ ও ওরিয়েন্টশন প্রদান করা হবে।  

প্রসঙ্গত, মাধ্যমিক শিক্ষার জন্য এযাবৎকালের মধ্যে সবচেয়ে বড় পাঁচ বছর মেয়াদী (২০১৭-১৮ থেকে ২০২১-২২) ‘মাধ্যমিক শিক্ষা উন্নয়ন প্রকল্প’ এসইডিপি এর মোট ব্যয় ধরা হয়েছে এক লাখ ৩৯ হাজার কোটি টাকা। জানা গেছে, প্রাথমিকভাবে এর ৯৫ ভাগ অর্থ দেবে সরকার। আর মাত্র ৫ শতাংশ আসবে বিশ্বব্যাংক, এডিবি, ইউনিসেফ ও ইউনেস্কোসহ মোট ছয়টি সংস্থার কাছ থেকে। এই এসইডিপি প্রকল্পের অধীনে ষ্ষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পযায়ক্রমে বিনামূল্যে পড়ার সুযোগ দেবে সরকার। 

জানা যায়, সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে অবৈতনিক শিক্ষা চালুর কর্মপন্থা তৈরির জন্য একটি বৈঠক হয়। এতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের পাশাপাশি রাজধানীর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান ও শিক্ষক নেতারা অংশ নেন। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. সোহরাব হোসাইন। কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগের সচিব মুনশী শাহাবুদ্দীন আহমেদও এতে অংশ নেন।

বৈঠক সূত্র জানায়, ষষ্ঠ শ্রেণির প্রত্যেক শিক্ষার্থীর জন্য ৩৫ টাকা করে টিউশন ফি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। পরের বছর থেকে সপ্তম শ্রেণিতেও অবৈতনিক শিক্ষা চালু হবে। এভাবে ২০২২ খ্রিষ্টাব্দে অষ্টম শ্রেণিতে এবং ২০২৬ খ্রিষ্টাব্দে দ্বাদশ শ্রেণিতে অবৈতনিক শিক্ষা চালুর কাজ সম্পূর্ণ করা হবে।

বৈঠকে অংশ নেয়া একজন কর্মকর্তা দৈনিক শিক্ষাকে বলেন, 'প্রাথমিক স্তরের মতো পর্যায়ক্রমে ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক করতে চান প্রধানমন্ত্রী। এ লক্ষ্যে প্রথম ধাপ হিসেবে আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকেই ষষ্ঠ শ্রেণির লেখাপড়া অবৈতনিক করার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।'

একই সঙ্গে মাধ্যমিক শিক্ষায় উপবৃত্তিপ্রাপ্তদের সংখ্যা ৪৫ থেকে বাড়িয়ে ৬০ শতাংশ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকেই এসব সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে বলে জানা গেছে।

তবে সংশ্নিষ্টরা বলছেন, সরকার প্রাথমিক শিক্ষাকে অবৈতনিক করলেও শুধু ৬৫ হাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের বেতন দিতে হয় না। কিন্তু বেসরকারি স্কুল এবং সরকারি মাধ্যমিকের যেখানে প্রথম শ্রেণি রয়েছে, সেখানেও শিক্ষার্থীদের বেতন দিতে হয়। এমনকি বেসরকারি অনেক স্কুলেই মাসিক বেতন এক হাজার থেকে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত। প্রশ্ন উঠেছে, যদি ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষাও অবৈতনিক করা হয়, তাহলে তা শুধু সরকারি ও এমপিওভুক্ত স্কুলের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে কি-না? শহরে ও গ্রামের স্কুলের টিউশন ফি একেক জায়গায় একেক রকম। সে ক্ষেত্রে কমন ফি নির্ধারণ হলে জটিলতা সৃষ্টির আশঙ্কাও করছেন কেউ কেউ। 


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না - dainik shiksha সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু - dainik shiksha চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় - dainik shiksha প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট - dainik shiksha রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0057840347290039