কুড়িগ্রামের রৌমারীতে স্কুল শিক্ষার্থীদের দিয়ে রাস্তা নির্মাণে মাটি কাটার কাজ করানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে। কর্মসৃজন কর্মসূচির আওতায় দরিদ্র ও কার্ডধারীদের কাজ করার কথা থাকলেও শিশু শিক্ষার্থীদের দিয়ে এই কাজ করানো হচ্ছে। ফলে ওই শিক্ষার্থীদের লেখা-পড়া মারাত্মকভাবে ব্যহত হচ্ছে।
জানা গেছে, অতি দরিদ্রদের জন্য কর্মসৃজন কর্মসূচির (ইজিপিপির আওতায় ২য় পর্যায়ের) ৪০ দিনের মাটির কাজ চলমান রয়েছে। পরিবারের কার্ডধারী ব্যাক্তিরা অসুস্থ থাকায় তাদের পরিবর্তে স্কুলগামী সন্তানদেরকে দিয়ে রাস্তা নির্মাণে মাটির কাজ করানো হচ্ছে।
গত বুধবার (১৯ জুন) দুপুরে চর শৌলমারী ইউনিয়নের চর গয়টাপাড়া গ্রামে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, মায়েদের পরিবর্তে শিশু শিক্ষার্থীরা মাটি কেটে দিচ্ছে। এই মাটি কাটার কাজ করছে এমন শিক্ষার্থীদের মধ্যে রয়েছে কাজাইকাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির শাহিন আলম ও দক্ষিণ ইটালুকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শাপলা আক্তার এবং কাজাইকাটা জুনিয়র স্কুলের ৬ষ্ঠ শ্রেণির আলেফা খাতুন।
দেখা যায়, মাটির টুপরি মাথায় নিয়ে রাস্তা নির্মাণের কাজ করছে শিশু শিক্ষার্থীরা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শাহিনের মা চায়না বেগম, শাপলার মা বানেছা ও আলেফা খাতুনের মা আল্লাদি বেগম। কর্মসৃজনের কার্ডধারী এই অভিভাবকরা দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ। তাই তাদের পরিবর্তে তাদের স্কুলগামী সন্তানরা মাটি কাটার কাজ করছে।উল্লেখ্য, রৌমারী উপজেলায় কার্ডধারীর সংখ্যা দুই হাজার ৮৩০ জন, আর ওই ইউনিয়নে রয়েছে ৪৭৪ জন কার্ডধারী।
কাজাইকাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমান বলেন, ‘শাহিন নামের শিক্ষার্থী আমার প্রতিষ্ঠানের অষ্টম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত। ছাত্র দিয়ে মাটির কাটার বিষয় আমার জানা নেই। তবে শুনেছি তার মা অসুস্থ।’ তিনি আরও বলেন, ‘জনপ্রতিনিধিরা কীভাবে শিশুদের দিয়ে মাটি কেটে নেয়। তা প্রশাসন দেখছে না কেন?।’
দক্ষিণ ইটালুকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুর ইসলাম জানান, ‘ছাত্র দিয়ে মাটি কাটার বিষয় আমার নয়। সেটা মেম্বার ও চেয়ারম্যানের ব্যাপার।’
চর শৌলমারী ইউপি সদস্য শাহিন মিয়া বলেন, ‘ছাত্র দিয়ে মাটি কাটার বিষয় আমার জানা নেই। তবে আপনি (প্রতিবেদক) বলছেন ওই বিষয়টি দেখবো।’
অভিযোগ বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যান ফজলুল হকের মোবাইল ফোনে কল করলে তাঁর ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) আজিজুর রহমান জানান, ‘কোনো কার্ডধারী ব্যক্তি অসুস্থ থাকলে এক-দুই দিন তার পরিবর্তে অন্য কোন ব্যক্তি মাটির কাজ করতে পারেন; কিন্তু তাই বলে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের দিয়ে মাটি কাটানো অন্যায়। তবে বিষয়টি খতিয়ে দেখছি।’
এ প্রসঙ্গে রৌমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) দীপঙ্কর রায় জানান, ‘শিশু শিক্ষার্থীদের দিয়ে মাটি কেটে নেওয়ার বিষয়ে আমি খোঁজ নেবো।’