স্বাস্থ্যবিধি মানে না মেডিকেলের ৬৯ শতাংশ শিক্ষার্থী : গবেষণা

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

কভিড-সংক্রান্ত তথ্য বেশি জানলেও স্বাস্থ্যবিধি পালনের ক্ষেত্রে অনেকাংশে পিছিয়ে মেডিকেলে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা। জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার যৌথ গবেষণায় দেখা গেছে, দেশের মেডিকেল কলেজ পড়ুয়া প্রায় ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থীই স্বাস্থ্যবিধি পালন করেন না। আর মেডিকেলে পড়েন না এমন শিক্ষার্থীদের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি পালন করেন না ৭৯ দশমিক ৪০ শতাংশ। শুক্রবার (২৮ আগস্ট) বণিক বার্তা পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়।  প্রতিবেদনটি লিখেছেন ফয়জুল্লাহ ওয়াসিফ। 

প্রতিবেদনে আর জানা যায়, গবেষণার ফলাফল থেকে জানা যায়, দেশের মেডিকেল কলেজগুলোতে পড়ুয়া ৬৯ দশমিক ১৫ শতাংশ শিক্ষার্থী স্বাস্থ্যবিধি পালন করেন না। অবশ্য এই শিক্ষার্থীরা বিষয়টি সম্পর্কে জানেন না, এমন নয়। এ সম্পর্কে জেনেও মানছেন না তারা। দেশের অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের তুলনায় কভিড সম্পর্কিত বিষয়ে তাদের জ্ঞান ভালো থাকলেও স্বাস্থ্যবিধি পালনে পিছিয়ে এসব শিক্ষার্থী। তবে মেডিকেলে পড়ে না এমন শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে এ প্রবণতা আরো বেশি। বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজে পড়ুয়া এসব শিক্ষার্থীর প্রায় ৮০ শতাংশই স্বাস্থ্যবিধি পুরোপুরি অনুশীলন করে না।

গবেষণার তথ্য বলছে, বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজে পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের ৭৯ দশমিক ৪০ শতাংশ স্বাস্থ্যবিধি পালন করে না। এসব শিক্ষার্থীর মধ্যে মেডিকেল পড়ুয়া শিক্ষার্থীর তুলনায় কভিড-সংক্রান্ত জ্ঞানও কম বলে গবেষণায় উঠে এসেছে। গবেষণা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, যেহেতু ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি পালনের বিষয়টিতে ঘাটতি রয়েছে, সুতরাং এ প্রেক্ষাপটে তাদের মাধ্য এ সচেতনতা আরো বাড়াতে হবে।

অনলাইনে সংযোজিত প্রশ্নের মাধ্যমে করা এ গবেষণায় অংশগ্রহণ করেন ঢাকাসহ অন্যান্য বিভাগীয় শহরের সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজে অধ্যয়নরত ৩৯৯ শিক্ষার্থী। এদের মধ্যে মেডিকেলের ১৫২ জন ও বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছিলেন ২৪৭ জন। এ শিক্ষার্থীদের মেডিকেল পড়ুয়া ১৪৯ জন এবং বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ২৫০ জন স্ব-প্রণোদিতভাবে তাদের তথ্য প্রদান করেন।

গবেষণায় অংশ নেয়া শিক্ষার্থীদের ২৯ দশমিক ১ শতাংশ মনে করেন হ্যান্ড স্যানিটাইজারই হাত জীবাণুমুক্ত করার একমাত্র উপায়। ৫৩ শতাংশ ছাত্রছাত্রী মনে করেন মৃদু সংক্রমণ দেখা দিলে ১৪ দিন ঘরে থাকলে অন্যদের সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়। তবে ৪৭ শতাংশ শিক্ষার্থী তিন ফুট দূরত্বের বিষয়টি নিয়ে সঠিকভাবে তথ্য দিতে পারেননি বলে গবেষণা প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।

এ শিক্ষার্থীদের ৩৩ জন, অর্থাৎ ৮ দশমিক ৩০ শতাংশ বিশ্বাস করেন ধূমপান কভিড নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। ৫৫ দশমিক ৪০ শতাংশ শিক্ষার্থী মনে করেন তাদের ব্যবহারের জন্য এন-৯৫ মাস্ক প্রয়োজন। এছাড়া শিক্ষার্থীদের ২৮ দশমিক ৮০ শতাংশের ধারণা, তিন স্তরবিশিষ্ট কাপড়ের মাস্ক কভিড-১৯ ছড়ানো প্রতিরোধ করতে পারে। তবে ৪ দশমিক ৮০ শতাংশ শিক্ষার্থী তাদের জন্য কোনো ধরনের মাস্কের প্রয়োজন নেই, গবেষকদের কাছে এমন তথ্য দিয়েছেন।

কভিডকালেও শিক্ষার্থীদের আড্ডা থেমে নেই। প্রায় ৩২ শতাংশ শিক্ষার্থী করোনাকালে বাড়িতে বা বাইরে বসে সামাজিক দূরত্ব না মেনে গল্পগুজব করেন। এসব শিক্ষার্থী আবার অনেক সময় খাবার খেতে রেস্টুরেন্টও যান। ১৬ শতাংশ খাবার কেনেন বিভিন্ন হোটেল বা রেস্টুরেন্ট থেকে। সামগ্রিকভাবে কভিড নিয়ে শিক্ষার্থীদের ৭১ দশমিক ৬৮ শতাংশ ধারণা আছে। তবে এদের মধ্যে ভালোভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানছেন মাত্র ২৪ দশমিক ৫৬ শতাংশ শিক্ষার্থী।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক ডা. শাহনীলা ফেরদৌসী জানান, এ গবেষণাটি ছাড়াও জনসাধারণ, ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্থাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে কাজ করছে এমন প্রতিনিধিদের মধ্যেও আরো দুটি গবেষণা চালানো হয়েছে। এর একটিতে দেশব্যাপী ১ হাজার ৫৪৯ জন এবং অন্যটিতে স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে কাজ করে এমন ৬০৪ জন অংশগ্রহণ করেন। গবেষণাগুলো মার্চ থেকে আগস্ট মাসের মধ্যে পরিচালিত হয়েছে বলে জানান তিনি।

জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার অন্য দুটি গবেষণার একটিতে ঢাকা মহানগরী ও দেশের উত্তরাঞ্চলের মানুষ অংশগ্রহণ করে। সেখানে অনলাইনে ১ হাজার ২৪৯ জন, নিজ হাতে প্রশ্নপত্রের উত্তরকারী ১৯৪ জন এবং মুখোমুখি সাক্ষাত্কারে অংশগ্রহণকারী ১০৬ জনের তথ্য নিয়ে গবেষণাটি করা হয়। এদের মধ্যে ৬৯ দশমিক ৮০ শতাংশ কীভাবে নভেল করোনাভাইরাস ছড়ায় সে সম্পর্কে জ্ঞাত।

এ গবেষণায় দেখা গেছে, ৭০ শতাংশ লোক সামাজিক দূরত্ব সম্পর্কে সঠিকভাবে জানেন। এছাড়া মাস্ক ব্যবহার নিয়ে ইতিবাচক ধারণা পোষণ করেন ৭৮ দশমিক ৪০ শতাংশ। হাত ধোয়ার বিষয়টিতেও ইতিবাচক ধারণা আছে অধিকাংশ মানুষের। গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের ৮৭ দশমিক ৬০ শতাংশ হাত ধোয়ার বিষয়ে জানেন এবং এ বিষয়টিতে তাদের আপত্তি নেই। তবে এই জনগোষ্ঠীর ৫২ দশমিক ১০ শতাংশ মাস্ক ব্যবহার করেন। নিয়মিত হাত ধোয়ার কাজটি করেন ৫১ দশমিক ৮০ শতাংশ।

কিন্তু স্যানিটাইজার ব্যবহার করেন এমন লোকের সংখ্যা এদের তুলনায় বেশি। গবেষণায় দেখা গেছে, ৫৭ দশমিক ৫০ শতাংশ লোক স্যানিটাইজার ব্যবহার করেন। যদিও গবেষণায় অংশ নেয়া এ জনগোষ্ঠীর ৫০ শতাংশই সামাজিক দূরত্ব মানেন না বলে প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। নভেল করোনাভাইরাস প্রতিরোধ নিয়েও অনেকের মধ্যে আছে ধোঁয়াশা। ৫১ দশমিক ৬০ শতাংশ কীভাবে এ ভাইরাস প্রতিরোধ করতে হয় সেটা জানেন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ আছে।

এদিকে বিভিন্ন স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ৬০৪ জনের অংশগ্রহণে পরিচালিত অন্য একটি গবেষণার ফলাফলে দেখা গেছে, এদের ৭৫ শতাংশই নভেল করোনাভাইরাস ছড়ানো ও প্রতিরোধ নিয়ে ভালোভাবে জানেন। স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে কর্মরত এ ব্যক্তিদের ৭৬ শতাংশই স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়টি ব্যক্তিগত পর্যায়ে মানেন বলেও গবেষণায় উঠে এসেছে। তাদের মধ্যে ৭৭ শতাংশ কভিড-১৯ পরিস্থিতি সফলভাবে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব এমন ধারণাও পোষণ করেন।

গবেষণা তিনটি পরিচালনাকারী সরকারের দুটি প্রতিষ্ঠান জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার সার্বিক পর্যবেক্ষণে আরো বেশকিছু বিষয় উঠে এসেছে। তার মধ্যে একটি বিষয় গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে কভিড সম্পর্কিত জ্ঞান। সংক্রমণ কীভাবে ছড়ায় বা সামাজিক দূরত্বের মতো বিষয়গুলো নিয়ে গ্রামের মানুষের অনেকের ধারণা এখনো স্পষ্ট নয়। এছাড়া কভিড-১৯ একটি মরণব্যাধি এমনটা মনে করে ৭৪ শতাংশ জনসাধারণ।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না - dainik shiksha সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু - dainik shiksha চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় - dainik shiksha প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট - dainik shiksha রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0051379203796387