মাদরাসার এমপিও নীতিমালা সংশোধনের প্রস্তাবে বেসরকারি আলিম, ফাযিল ও কামিল মাদরাসার প্রভাষকদের উপাধ্যক্ষ হওয়ার সুযোগ দেয়া হচ্ছে। তারা সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি না পেলেও উপাধ্যক্ষ হতে পারবেন। অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ, সুপার ও সহকারী সুপার নিয়োগ যোগ্যতায়ও কিছুটা পরিবর্তন আনা হচ্ছে। তবে, জেনারেল শিক্ষকদের প্রশাসনিক পদে নিয়োগের সুযোগ দেয়া হচ্ছে না। এছাড়া এমপিওভুক্ত ফাযিল ও কামিল মাদরাসার জনবল কাঠামোতে আরো একটি করে অফিস সহকারী পদ অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব করা হচ্ছে। তবে চাকরিতে যোগ দেয়ার পাঁচ বছরের মধ্যে মাদরাসা শিক্ষকদের বিএড কোর্স করার বাধ্যবাধকতা যুক্ত হচ্ছে এমপিও নীতিমালায়।
গত বুধবার মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরে আয়োজিত এক কর্মশালায় এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়। তবে, বিষয়গুলো নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির সভাপতিত্বে ফের আলোচনা করে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হবে। পরে সংশোধিত এমপিও নীতিমালা জারির পর তা কার্যকর হবে। কর্মশালায় অংশ নেয়া সূত্র দৈনিক আমাদের বার্তাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
সূত্র জানায়, মাদরাসায় এমপিও নীতিমালায় কিছু পরিবর্তনের বিষয়ে দিক নির্দেশনা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগ থেকে দেয়া হয়েছে। যা নিয়ে কর্মশালা আয়োজন করা হয়েছিলো।
প্রসঙ্গত, বিদ্যামান এমপিও নীতিমালায় সহকারী অধ্যাপক পদে তিন বছর ও প্রভাষক পদে নয় বছরের অভিজ্ঞতার প্রয়োজন হয়। কিন্তু নীতিমালা সংশোধনের প্রস্তাব অনুমোদিত হলে প্রভাষকরাও আলিম, ফাযিল ও কামিল মাদরাসার উপাধ্যক্ষ হওয়ার সুযোগ পাবেন। প্রাথমিকভাবে সংশ্লিষ্ট স্তরের মাদরাসায় প্রভাষক পদে ১৫ বছরের অভিজ্ঞতা নিয়ে ওই স্তরের মাদরাসার উপাধ্যক্ষ পদে নিয়োগে পাওয়ার সুযোগ রাখার বিষয়ে কর্মশালায় আলোচনা হয়েছে।
সূত্র আরো জানায়, বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান বিবেচনায় জেনারেল শিক্ষকদের মাদরাসার প্রশাসনিক পদে নিয়োগের সুযোগ রাখা হচ্ছে না।
প্রস্তাবগুলো অনুমোদিত হলে সংশোধিত জনবল কাঠামো জারি করবে কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগ।
অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, তিন অধিদপ্তরের এমপিও নীতিমালায় বেশ কিছু অসামঞ্জস্যতা রয়েছে। এই অসামঞ্জস্যতা দূর করতে এমপিও নীতিমালায় কিছু সংযোজন-বিয়োজন করা হচ্ছে। তাই মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের এমপিও নীতিমালা সংশোধনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগ থেকে নীতিমালা সংশোধন নিয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা দিয়েছে। তা নিয়ে অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করে কর্মশালায় প্রস্তাব প্রস্তুত করা হয়েছে। যা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগে পাঠানো হবে। সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হওয়ার পর কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগ সংশোধিত নীতিমালায় এসব বিষয় অন্তর্ভুক্ত করে তা জারি করবে।
এ বিষয়ে মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. হাবিবুর রহমান দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, বিষয়গুলো আমরা প্রস্তাবনা আকারে কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগে পাঠাবো। পরে শিক্ষামন্ত্রী মহোদয়ের সভাপতিত্বে এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের অংশীজনদের নিয়ে সভা করে নীতিমালা সংশোধনের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
এদিকে মাদরাসার অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ, সুপার ও সহকারী সুপারের মতো প্রশাসনিক পদগুলোতে জেনারেল শিক্ষকদের নিয়োগ পাওয়ার সুযোগ দেয়ার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ মাদরাসা জেনারেল টিচার্স এসোসিয়েশন। মাদরাসার এমপিও নীতিমালা ও জনবল কাঠামো সংশোধন করে এ সুযোগ দেয়ার দাবি জানিয়েছেন সংগঠনটির নেতারা। গতকাল বৃহস্পতিবার সভাপতি জহির উদ্দিন হাওলাদার ও মহাসচিব মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, মাদরাসায় কর্মরত জেনারেল শিক্ষকদেরকে বঞ্চিত করে মাদরাসার জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালার সংশোধনী প্রকাশ করা হলে জোনরেল শিক্ষকদের মাঝে চরম অসন্তোষ সৃষ্টি হবে ও তারা রাজপথে নামতে বাধ্য হবেন।
তাদের মতে, বিশেষায়িত বলতে জ্ঞানের একটি নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে মনোনিবেশ করা বুঝায়। কিন্তু আলিয়া ধারার মাদরাসা সাধারণ ধারার শিক্ষার মতোই পাঠদান কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ২০১০ খ্রিষ্টাব্দে জারি করা পরিপত্রে নন অ্যারাবিক সহকারী শিক্ষকদের দাখিল মাদরাসার সুপার ও সহকারী সুপার পদে এবং নন অ্যারাবিক প্রভাষক ও সহকারী অধ্যাপকদের আলিম মাদরাসার অধ্যক্ষ ও ফাজিল মাদরাসার উপাধ্যক্ষ পদে নিয়োগ দেয়ার বিধান রাখা হয়েছিলো। ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দের জারিকৃত সংশোধিত পরিপত্রে সে বিধান স্থগিত হয়ে যায়। তাদের ভাষ্য, ঐতিহাসিকভাবে মাদরাসা পরিচালনার সঙ্গে ব্রিটিশ খ্রিষ্টান অফিসাররা যুক্ত ছিলেন, কিন্তু ওই সময়ে মাদরাসার স্বকীয়তা নষ্ট হয়নি এবং অনেক মনীষি, আলেম-ওলামা তৈরি হয়েছেন।
দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।