অনলাইন ক্লাস : পিছিয়ে পড়ছে গ্রামের শিক্ষার্থীরা

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

গত মার্চ মাস থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। সরকারি নির্দেশে পড়াশোনা এখন প্রযুক্তিনির্ভর। পড়াশোনার এই সুবিধা পেতে থাকতে হবে উচ্চগতির ইন্টারনেট ও স্মার্টফোন বা ল্যাপটপ। এ কারণে এই কার্যক্রমে শহরের শিক্ষার্থীরা এগিয়ে থাকলেও ধারেকাছে নেই গ্রামের শিক্ষার্থীরা। ইন্টারনেটের দাম, আবার কম গতির ইন্টারনেট ও ডিভাইসের স্বল্পতার কারণে ক্লাসে অংশ নিতে পারছে না তারা। সময় যতই এগিয়ে যাচ্ছে, গ্রামের শিক্ষার্থীরা সে হারেই বঞ্চিত হচ্ছে, পিছিয়ে পড়ছে। এতে বাড়ছে বৈষম্য। সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম চালুর বিষয়টি অনেকটা নির্দেশনার মধ্যেই বন্দি হয়ে আছে। সোমবাবর (৫ অক্টোবর) ইত্তেফাক পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন নিজামুল হক। 

প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, কত শিক্ষার্থীর অনলাইন সুবিধা আছে, কত ভাগ শিক্ষার্থী বঞ্চিত, সেটা জানা খুবই জরুরি। অথচ এই হিসাবটাই নেই শিক্ষা বিভাগের কাছে।

আরিফুল ইসলাম নামে এক শিক্ষক বলেন, অনলাইন ক্লাসকে ‘মন্দের ভালো’ হিসেবেও যদি ধরা হয়, তাহলে এই শিক্ষা গ্রহণ থেকে যে বিশাল একটি অংশ বাদ থেকে যাচ্ছে, তাদের ক্ষতি কীভাবে পুষিয়ে নেওয়া হবে? এসব বিষয়ে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নেওয়া জরুরি। কিন্তু এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কার্যকর পরিকল্পনা গ্রহণ করা যায়নি, বাস্তবায়ন তো দূরের কথা।

নজরুল আমিন নামে এক অভিভাবক বলেন, জেলা, উপজেলা বা গ্রামের বেশির ভাগ শিক্ষার্থী বা অভিভাবকের স্মার্টফোন নেই, নেই বিকল্প উপায় ল্যাপটপও। ফলে হাতে গোনা কিছু শিক্ষার্থী এই সুবিধা পাচ্ছে। ইন্টারনেটের উচ্চদাম ও গতি দুর্বল থাকায় অনলাইন ক্লাসে অংশ নিতে পারে না তারা। শুধু তা-ই নয়, গ্রামের অনেক শিক্ষকেরই স্মার্টফোন বা ল্যাপটপ নেই। নেই প্রশিক্ষণও।

অনলাইনে সরাসরি ক্লাস করা যাচ্ছে না নেটওয়ার্কের দুর্বলতার কারণে। এছাড়া রেকর্ড করে ভিডিও আপলোড করারও একটি বিকল্প পদ্ধতি রয়েছে, কিন্তু এ পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে কোনো প্রশ্ন করার সুযোগ নেই। তাই এই পদ্ধতিও শিক্ষাবান্ধব নয়। মন্দের ভালো হিসেবেও যদি দেখা হয়, তাহলে এই সুবিধাও না পাওয়াদের কী হবে?

ইমন, বরিশালের একটি গ্রামের শিক্ষার্থী। অষ্টম শ্রেণির এই শিক্ষার্থী বলে, ‘আমরা অনলাইন ক্লাসের ধারেকাছেও নেই।’ সে জানায়, তার প্রতিষ্ঠানের কেউ অনলাইনে ক্লাস নেন না। নিজ আগ্রহে অন্য প্রতিষ্ঠানের লেকচার বা ইউটিউব ঘেঁটে ক্লাস দেখার চেষ্টা করলেও সম্ভব হয় না। নেটের গতি এতটাই দুর্বল যে ৩০ মিনিটের ক্লাস ৩ ঘণ্টায়ও শেষ করা যায় না। ফলে এভাবে ইন্টারনেট ডাটা কেনার আর্থিক সামর্থ্যও নেই।

এরই মধ্যে শুরু হয়েছে ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের একাদশ শ্রেণির ক্লাস। গতকাল রবিবার সকাল ১০টায় ঢাকা কলেজে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি ও শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল শ্রেণি কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। করোনা ভাইরাস-পরবর্তী সময়েও অনলাইনের মাধ্যমে শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে উল্লেখ করে এই অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘আমরা ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্টের কথা বলি। সেটি বাস্তবায়ন করতে হলে ভবিষ্যতে অনলাইন কার্যক্রমের সঙ্গে আমাদের সম্পৃক্ত হতেই হতো। করোনা পরিস্থিতি আমাদের সেই সুযোগ এখনই করে দিয়েছে।’

রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক ড. জসীম উদ্দিন বলেন, ‘ভাবতে হবে, আমাদের কত জন শিক্ষার্থী অনলাইন ক্লাসের মাধ্যমে উপকৃত হচ্ছে আর কত জন বঞ্চিত থেকে যাচ্ছে। সুবিধাবঞ্চিতদের শিক্ষার ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার জন্য পরিকল্পনা প্রয়োজন এবং সময়মতো সেই পরিকল্পনার বাস্তবায়ন জরুরি।’

ঢাকা শিক্ষা বোর্ড ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ ফজর আলী বলেন, ‘গ্রামের শিক্ষার্থীরা প্রকৃত অর্থে পিছিয়ে পড়ছে। শিক্ষার্থীরা ঘরে থাকছে না। বাইরে ঘোরাফেরা করছে। অনেক স্থানে স্কুল না খুললেও কোচিং শুরু হয়েছে। তাই আমি মনে করি, গ্রামের স্কুলগুলো পর্যায়ক্রমে খুলে দেওয়া যায় কি না, সেটা ভাবতে হবে। বাড়তি ক্লাস নিয়ে সিলেবাস কমিয়ে পরবর্তী শ্রেণিতে উন্নীত করতে হবে।

ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মু জিয়াউল হক বলেন, ‘অনলাইন শিক্ষায় পিছিয়ে পড়া গ্রামের শিক্ষার্থীদের নিয়েই আমাদের একাধিক চিন্তাভাবনা রয়েছে। কীভাবে অফলাইনে তারা শিক্ষা পেতে পারে, সেটাও ভাবা হচ্ছে।’

গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, অনলাইন শিক্ষাব্যবস্থায় গ্রামের যেসব শিক্ষার্থী পিছিয়ে পড়ছে তাদের জন্য নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত্-সংযোগ, ডিভাইস ও কম মূল্যের ইন্টারনেটের ব্যবস্থা করতে হবে। তিনি মনে করেন, অনলাইন শিক্ষার মাধ্যমে জেন্ডার বৈষম্যও হচ্ছে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
সব মাদরাসার ওয়েবসাইট ও তথ্য হালনাগাদের নির্দেশ - dainik shiksha সব মাদরাসার ওয়েবসাইট ও তথ্য হালনাগাদের নির্দেশ অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক : দুই মন্ত্রণালয় যা করবে - dainik shiksha অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক : দুই মন্ত্রণালয় যা করবে নার্সিং-মিডওয়াইফারি ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ - dainik shiksha নার্সিং-মিডওয়াইফারি ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী যা জানালেন - dainik shiksha চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী যা জানালেন গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাস ৩৬.৩৩ শতাংশ - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাস ৩৬.৩৩ শতাংশ দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে বেসরকারি শিক্ষকদের বদলির উদ্যোগ স্থগিতের নেপথ্যে - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষকদের বদলির উদ্যোগ স্থগিতের নেপথ্যে শিক্ষাখাতে অপপ্রচারে ভূয়া অভিভাবক ফোরাম, জাল সনদের অধ্যক্ষ - dainik shiksha শিক্ষাখাতে অপপ্রচারে ভূয়া অভিভাবক ফোরাম, জাল সনদের অধ্যক্ষ please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0038211345672607