আমলার সন্তানদের জন্য আলাদা বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবি কেন

দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক |

দৈনিক শিক্ষাডটকম ডেস্ক: সন্তানদের লেখাপড়ার জন্য আলাদা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে চান আমলারা। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত জেলা প্রশাসক সম্মেলনের প্রথম দিবসে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে জেলা প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনারদের মুক্ত আলোচনায় এই প্রস্তাব দেন কর্মকর্তারা। ৩ মে বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমে খবরটি প্রকাশের পর এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নাগরিকদের পক্ষ থেকে নানা ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করা হচ্ছে। রোববার (৫ মে) আজকের পত্রিকা পত্রিকায় প্রকাশিত সম্পাদকীয়তে এ তথ্য জানা যায়।

সম্পাদকীয়তে আরো জানা যায়, জেলা প্রশাসকদের প্রস্তাবে বলা হয়, সিভিল সার্ভিস অফিসারদের জন্য মাস্টার্স, উচ্চতর ডিগ্রি ও প্রশিক্ষণ এবং তাঁদের সন্তানদের লেখাপড়ার জন্য আলাদা সিভিল সার্ভিস বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা যেতে পারে।

আমরা কোনো ধরনের বিতর্কে না গিয়েও শুধু এটাই বলতে চাই, আমলাদের এই প্রস্তাব বিবেচনায় না নেওয়াই হবে সরকারের জন্য মঙ্গলজনক। এমনিতেই আমলাদের বাড়াবাড়ি নিয়ে অনেক কথা আছে। নতুন করে তাঁদের বিতর্কের মুখে ঠেলে না দেওয়াই উত্তম।

আমলারা এমন একটি দাবি কেন তুললেন? তাঁরা কি বাংলাদেশে বিশেষ নাগরিক? তাঁরা নিজেরা কি অন্যদের থেকে আলাদা করে উচ্চহারে কর-ট্যাক্স প্রদান করেন? আমলারা কি অন্য সব নাগরিকের চেয়ে আলাদা? নিজেদের ও সন্তানদের জন্য পৃথক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়ে কি প্রকারান্তরে তাঁরা দেশের সংবিধানে সব নাগরিকের সমান অধিকারের যে নীতি রয়েছে, সেটা লঙ্ঘন করলেন না?  

আমলার সন্তানদের জন্য আলাদা বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবি করলে অন্যান্য পেশার মানুষও তো এমন দাবি তুলতে পারেন। তখন কি সেটা সমর্থন করা হবে?   রাষ্ট্র যা দ্বারা পরিচালিত হয়, সংক্ষেপে তাকেই বলে রাষ্ট্রযন্ত্র।

রাষ্ট্রযন্ত্রের মূল চালিকাশক্তি আমলাশ্রেণি। একটি সৎ, দক্ষ, নির্মোহ-নিরপেক্ষ ও হৃদয়বান আমলাশ্রেণি দেশবাসীর দীর্ঘদিনের আকাঙ্ক্ষা।
স্বাধীনতার অব্যবহিত পর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অধিবেশনের উদ্বোধনী বক্তৃতায় দল ও সরকারপ্রধান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন, ‘সরকারি কর্মচারীরা যদি জনস্বার্থের সঙ্গে তাল মিলিয়ে তাঁদের মানসিকতার পরিবর্তন ঘটাতে না পারেন, তাহলে প্রয়োজনবোধে খোলনলচে সবই বদল করা হবে।’

সরকারি কর্মচারীদের ব্যাপারে বঙ্গবন্ধুর দৃঢ়তা-আস্থা-বিশ্বাস আমৃত্যু বজায় ছিল। তাঁদের বিশ্বাসও কম করেননি, আবার কখনো ছেড়ে দিয়েও তিনি কথা বলেননি।

ঘাতকদের হাতে প্রাণনাশের অল্প কিছুদিন আগে বঙ্গবন্ধুর দেওয়া একটি বক্তৃতায় আমলাদের দায়িত্ব-কর্তব্য, এমনকি নীতিবোধ ও মানবিকতা সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা রয়েছে। সরকারি কর্মচারীদের উদ্দেশে তিনি বলেন: ‘আপনি চাকরি করেন, আপনার মায়না দেয় ওই গরিব কৃষক। আপনার মায়না দেয় ওই গরিব শ্রমিক। আপনার সংসার চলে ওই গরিবের টাকায়। আমি গাড়ি চড়ি ওদের টাকায়।

ওদের সম্মান করে কথা বলেন, ওদের ইজ্জত করে কথা বলেন।...সরকারি কর্মচারীদের বলব, মনে রেখো, এই দেশ ব্রিটিশ কলোনি নয়, পাকিস্তানি কলোনি নয়। যে লোককে দেখবা তার চেহারাটা তোমার বাবার মতো, তোমার ভাইয়ের মতো। ওরাই সম্মান বেশি পাবে।’ 
অথচ দেশে বঙ্গবন্ধুর দল ক্ষমতায় থাকতে একটি জনবান্ধব আমলাশ্রেণি গড়ে ওঠার পরিবর্তে দেশের মালিক-মোক্তার বনে যাওয়ার যে মনোভাব দেখা যাচ্ছে, তা রুখে দিতে হবে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
সফটওয়্যারে কারিগরি ত্রুটি/ ইনডেক্সধারী শিক্ষকদের তথ্য ইমেইলে আহ্বান - dainik shiksha সফটওয়্যারে কারিগরি ত্রুটি/ ইনডেক্সধারী শিক্ষকদের তথ্য ইমেইলে আহ্বান শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বৈত নীতি! - dainik shiksha শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বৈত নীতি! হিটস্ট্রোকে শিক্ষকের মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে শিক্ষকের মৃত্যু লিখিততে প্রক্সি দিয়ে পার, মৌখিক পরীক্ষায় এসে ধরা - dainik shiksha লিখিততে প্রক্সি দিয়ে পার, মৌখিক পরীক্ষায় এসে ধরা কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে - dainik shiksha এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে শিক্ষক কেনো বদলি চান - dainik shiksha শিক্ষক কেনো বদলি চান ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের লিখিত পরীক্ষা হতে পারে জুলাইয়ে - dainik shiksha ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের লিখিত পরীক্ষা হতে পারে জুলাইয়ে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0045897960662842