অনার্সে নামমাত্র ক্লাস, তবে পরীক্ষায় বাধা নেই

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

উচ্চ মাধ্যমিকে ভালোই ক্লাস হয়। তবে অধিকাংশ শিক্ষার্থীকে প্রাইভেট পড়তে হয়। স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষে ক্লাস হয় ‘মোটামুটি’। কিন্তু দ্বিতীয় বর্ষ থেকেই কমে যায় ক্লাসের সংখ্যা। আর তৃতীয় ও চতুর্থ বর্ষে গিয়ে ক্লাস হয় না বললেই চলে। আজ বুধবার (২৭ মার্চ) প্রথম আলোয় প্রকাশিত প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন মোশতাক আহমেদ ও মুক্তার হোসেন

প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, ৬৩ বছরের পুরোনো নাটোরের নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা (এনএস কলেজ) সরকারি কলেজের খণ্ডচিত্র এটি। নানামুখী সমস্যায় জর্জরিত এই কলেজে ঠিকমতো ক্লাস হয় না। বিজ্ঞানের শিক্ষকদের আগ্রহ মূল ক্লাসের চেয়ে অতিরিক্ত ক্লাসের দিকে। কারণ, তাতে অতিরিক্ত টাকা পাওয়া যায়। নিষিদ্ধ হলেও নিজ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের সেখানে প্রাইভেট পড়ানো হয়। সুযোগ-সুবিধা না বাড়িয়েই অনেক বেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়েছে। শিক্ষক ও শ্রেণিকক্ষের সংকট তো আছেই। আবাসনসংকটের কারণে পরিত্যক্ত ছাত্রাবাসেই ঝুঁকি নিয়ে ছাত্ররা বাস করছেন।

সরেজমিন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে এমন চিত্র পাওয়া গেছে। কলেজের অধ্যক্ষ মো. সামসুজ্জামানও বিভিন্ন সমস্যার কথা স্বীকার করে বলেন, এসব সমস্যা সমাধানের জন্য তিনি চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
নাটোর শহরে ১৯৫৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় কলেজটি। বর্তমানে উচ্চমাধ্যমিক ছাড়াও ১৩টি বিষয়ে স্নাতক (সম্মান) পড়ানো হয়। তিনটি বিষয় বাদে সব কটিতেই স্নাতকোত্তর আছে। বাকি তিনটিরও স্নাতকোত্তরের অনুমোদন পাওয়া গেছে। মোট শিক্ষার্থী প্রায় ১৪ হাজার।

ওপরের শ্রেণিতে কম ক্লাস
পদার্থবিজ্ঞানের স্নাতক (সম্মান) তৃতীয় বর্ষে লিখিত পরীক্ষা দিয়ে এখন ব্যবহারিক পরীক্ষার জন্য অপেক্ষারত একজন ছাত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, দ্বিতীয় ও তৃতীয় বর্ষে তিনি একটি ক্লাসও পাননি। প্রথম বর্ষে কিছু ক্লাস হয়েছিল। ঘাটতি মেটাতে তাঁকে প্রতি বর্ষেই প্রাইভেট পড়তে হয়। রসায়ন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষা দেওয়া একজন ছাত্রও বলেন, তিনিও তৃতীয় বর্ষে একটি ক্লাসও পাননি।
জানা গেল, অর্থনীতি, ব্যবস্থাপনা, হিসাববিজ্ঞান ছাড়া বাকি বেশির ভাগ বিভাগেই সময়সূচি অনুযায়ী ক্লাস হয় না। তবে ক্লাস না হলেও পরীক্ষা দিতে কলেজ থেকে বাধা নেই। অর্থনীতির শিক্ষক ফরহাদ হোসেন বলেন, এই সমস্যার জন্য শিক্ষক ও শিক্ষার্থী উভয় পক্ষই দায়ী।
পর্যাপ্ত শ্রেণিকক্ষ ও শিক্ষক না থাকলেও প্রতি বিষয়ে অনেক শিক্ষার্থী ভর্তি করা হচ্ছে। যেমন আলাদা শাখা ছাড়াই অর্থনীতিতে স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষে ১৬০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়।

বিজ্ঞানের শিক্ষকদের প্রাইভেট ও ‘এক্সট্রা ক্লাসে’ ঝোঁক
প্রাণিবিদ্যা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের চারজন শিক্ষার্থী বলেন, শিক্ষকেরা টাকার বিনিময়ে ‘এক্সট্রা ক্লাস’ নেন। কোর্স শেষ করতে লাগে সাড়ে তিন হাজার টাকা। গত শনিবার সাড়ে নয়টার দিকে কলেজে গিয়ে দেখা যায়, ‌‘এক্সট্রা ক্লাস’ করে বের হয়ে আসছেন শিক্ষার্থীরা। সরকারি নিয়মে প্রতি বিষয়ে মাসে জেলা পর্যায়ে ২০০ টাকা করে নেওয়া যাবে। সব বিষয় মিলিয়ে মাসে ১ হাজার ২০০ টাকার বেশি নেওয়া যাবে না। কিন্তু এই বিভাগের শিক্ষকেরা নিয়ম মানছেন না।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নীতিমালা অনুযায়ী কোনো শিক্ষক নিজ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীকে পড়াতে পারবেন না। কিন্তু রসায়নের একজন শিক্ষক নিজ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের পড়ান। গত শনিবার নয়টার দিকে শহরের বুড়া দরগাহ মাঠসংলগ্ন একটি বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ওই শিক্ষক প্রাইভেট পড়াচ্ছেন। তিনি বলেন, কলেজের ভেতর জায়গা না পাওয়ায় এখানে পড়াচ্ছেন।
বিজ্ঞানের আরও একাধিক শিক্ষকের বিরুদ্ধে নিয়ম ভেঙে প্রাইভেট পড়ানোর অভিযোগ রয়েছে। অধ্যক্ষ মো. সামসুজ্জামান বলেন, তিনি এসব বিষয় জানেন না। হয়ে থাকলে ব্যবস্থা নেবেন।

অতিথি শিক্ষক দিয়ে ক্লাস
কলেজে ১৪ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য শিক্ষক আছেন ৬৬ জন। এই হিসাবে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর অনুপাত ১: ২১২। অথচ দেশের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর অনুপাত ১: ২১।
কলেজ প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, উচ্চমাধ্যমিকে সমাজবিজ্ঞান, সমাজকর্ম, ভূগোল, মনোবিজ্ঞান, পরিসংখ্যান, মার্কেটিং এবং ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং বিষয় চালু করা হলেও এই বিষয়ে নিজস্ব শিক্ষক নেই। অতিথি শিক্ষক দিয়ে ক্লাস চালিয়ে নেওয়া হচ্ছে।
এতগুলো বিষয়ে স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর পড়ানো হলেও কলেজটিতে অধ্যাপকের পদই আছে মাত্র চারটি, কর্মরত তিনজন। বিজ্ঞানের বিষয়গুলোতে শিক্ষক-সংকট বেশি।
১৯৮৪ সালে করা প্রশাসনিক সংস্কার-সংক্রান্ত এনাম কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী যেসব বিভাগে স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর পড়ানো হয়, সেগুলোতে কমপক্ষে ১২ জন করে শিক্ষক থাকার কথা। কিন্তু এই কলেজে সে অনুযায়ী পদই সৃষ্টি হয়নি। বর্তমানে অনুমোদিত ৭০টি পদের মধ্যে ৪টি শূন্য।

পরিত্যক্ত ভবনে ঝুঁকি নিয়ে বাস
কলেজে ১৪ হাজার শিক্ষার্থীর মধ্যে প্রায় অর্ধেক ছাত্রী। মাত্র ১০৪ আসনের একটি ছাত্রীনিবাস আছে। ছাত্রদের জন্য শের-ই-বাংলা নামে পুরোনো ছাত্রাবাসটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় পরিত্যক্ত ঘোষণা করলেও বেশ কিছু ছাত্র থাকছেন।
শ্রেণিকক্ষেরও সংকট আছে। বর্তমানে সব মিলিয়ে ৩১টি শ্রেণিকক্ষ আছে। অথচ দরকার প্রায় ৮০টি। কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ দিলীপ কুমার ভদ্র  বলেন, অবশ্যই শিক্ষক ও শ্রেণিকক্ষ বাড়াতে হবে। তবে ঠিকমতো তদারক করলে যা আছে, তা দিয়েও অনেক ভালো করা সম্ভব।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
কাল খুলছে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শনিবারও চালু ক্লাস - dainik shiksha কাল খুলছে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শনিবারও চালু ক্লাস সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি - dainik shiksha সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি উপবৃত্তির সব অ্যাকাউন্ট নগদ-এ রূপান্তরের সময় বৃদ্ধি - dainik shiksha উপবৃত্তির সব অ্যাকাউন্ট নগদ-এ রূপান্তরের সময় বৃদ্ধি শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি - dainik shiksha বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে ১৩ বছরের কম বয়সী শিশুদের হাতে স্মার্টফোন নয় - dainik shiksha ১৩ বছরের কম বয়সী শিশুদের হাতে স্মার্টফোন নয় একই স্কুলের দুই ছাত্রীকে বিয়ের পর আরেক ছাত্রীকে ল্যাব সহকারীর অনৈতিক প্রস্তাব - dainik shiksha একই স্কুলের দুই ছাত্রীকে বিয়ের পর আরেক ছাত্রীকে ল্যাব সহকারীর অনৈতিক প্রস্তাব দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ ১২ মে - dainik shiksha এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ ১২ মে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0028491020202637