অনুদানমুখী পাঠশালা নয় প্রয়োজন কর্মমুখী শিল্প-শিক্ষা

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

বড় আকালের সময় পার করছি আমরা। এখানে এখন সঙ্গীত সাধক, দার্শনিক, চলচ্চিত্র নির্মাতা, গবেষক, উদ্ভাবক কিংবা প্রকৃতিগতভাবে মনের দুয়ার খোলা মানুষজনের বড় সঙ্কট। চারদিকে শুধু কপি পেস্ট এবং বন্দনার মিছিল। অথচ নিজের পরিবার, ছেলেদের স্বপ্ন এবং পেটের খবর নেই। উল্টো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম খুললেই সমাজসেবার বাজার সংস্কৃতি দৃশ্যমান। তবে তামাসার বিষয় হলো এই এসবের ভেতরই আবার অল্পতেই জাতে ওঠা এবং গুষ্ঠি উদ্ধারের চর্চাও বয়ে চলেছে। কারণ কিছু কিছু ক্ষেত্রে এদের আচরণ সিনেমার সমাপ্তির মতো। অর্থাৎ সিনেমায় যেমন শেষটায় মিলন দেখিয়ে হাততালি জড় করা হয়। এদের মাঝেও কিছু কিছু আছেন যারা শুধু সমাজসেবার পোস্টার অর্থাৎ এককালীন সেবক ধর্মের ছবি তুলেই নিজের বারান্দায় হাঁটা ধরেন। যদিও এই সহায়তার বিষয়টিরও একটা নিরীক্ষণ দৃষ্টিভঙ্গি আছে। তা হলো, যেখানটায় বেশি বেশি ত্রাণের ছবি প্রকাশ পেয়েছে সাধারণ জ্ঞানে দাঁড়ায় সেখানকার মানুষ বেশি অসহায়। আর এখানেই মূল গিমিক। সোমবার (১৫ জুন) জনকণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত উপসম্পাদকীয়তে এ তথ্য জানা।

উপসম্পাদকীয়তে আরও জানা,  কারণ নিজের কোন আত্মীয়স্বজন সামাজিক, অর্থনৈতিক কিংবা পেশাগতভাবে খানিক নিচু অবস্থায় থাকলে সেটাকে কিন্তু ঢালাওভাবে প্রকাশ করা হয় না। কাজেই মুখে আপনজন বললেও ব্যক্তিগতভাবে সহায়তাকারী ‘কিছুজনেরা’ যে এই সহায়তা প্রার্থীদের আপনজন ভাবছেন না এবং এটা তার ব্যক্তিগত ব্র্যান্ডিং, এমন চিন্তা এসেই যায়। তবে রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে এটা সম্পূর্ণ ভিন্ন। আর সেটা বর্তমান রাষ্ট্রপ্রধান শেখ হাসিনা নিজেই স্পষ্ট করেছেন। তিনি স্পষ্ট জানিয়েছেন এই নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যাদি যা ঘরে ঘরে পৌঁছানো হয়েছে এবং হচ্ছে, সেটা জনগণের দুর্যোগকালীন ব্যবহারের জন্য জনগণেরই সঞ্চিত রাজস্বের ফল। কাজেই এতে কোন লজ্জা বা আড়ষ্টের প্রয়োজন নেই। তবে ভবিষ্যত যে কোন বাস্তবতায় এই সুবিধা আরও সুশৃঙ্খলভাবে ঘরে ঘরে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে প্রাথমিকভাবে প্রার্থীদের ‘নির্বাচন নীতি’ গ্রহণ প্রয়োজন।

অর্থাৎ নির্বাচনে যেমন ভোট চাইতে ঘরে ঘরে যান তেমনি সমস্ত সমাগম এড়িয়ে ঘরে ঘরে সামগ্রী পৌঁছে দেয়া। যা বেশ কিছুজনের ক্ষেত্রে দৃশ্যমানও হয়েছে। তবে এক্ষেত্রে তাদের হাতে নিজ নিজ এলাকার পুরো পরিবার, জনসংখ্যা, কর্মক্ষম ব্যক্তি এক কথায় সমস্ত পরিসংখ্যান থাকা প্রয়োজন। যা এখনও অধিকাংশেরই নখদর্পণে নেই। এই ধরনের দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপনের লক্ষ্য মানুষের পাশে দাঁড়ানো মানুষগুলোকে নিরুৎসাহিত করা নয়। বরং কাঠমোল্লাদের সাম্প্রদায়িক উস্কানি কিংবা পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় শুধুমাত্র ৪টা বিয়ের বেলায় ইসলামকে না টেনে মানুষকে সহায়তার সময়ও যে ডান হাত দিয়ে দিলে বাম হাতও না জানা, সেই নীতিকে আগ্রহী করে তোলা। তা ছাড়া বিশ্ব এখন যে দুর্যোগকালীন সময় পাড় করছে সেখানে এমন নিভৃতে কাজ করা মানুষজনেরই বড় প্রয়োজন। সাম্প্রতিক দুর্যোগ শিক্ষায় বিশ্ব ব্যবস্থায় আগামীতে বেশ পরিবর্তন আসবে। বিশেষ করে সামাজিক, রাজনৈতিক এবং উৎপাদনমুখী সংস্কৃতিতে। অর্থাৎ মেশিন বা রোবটের ব্যবহার। এটাকেই কাজে লাগাতে পারে বাংলাদেশ। কারণ এই ধ্বংসের প্লাবন সরিয়ে পথ চলায় বাংলাদেশে বেশ কিছু শুদ্ধ রক্তের উন্মেষ দেখেছে। যারা মানুষের জন্য কাজ করতে চান। যদিও এই ভিড়ে কিছু ব্যবসায়ীও আছেন। তবে এসব ফিল্টার করবার সুযোগ আছে। কারণ মানুষ এখন অনেক সচেতন। তারা বোঝেন কারা নেতার সাজার ভাব-অভিনয় করেন।

বৈশ্বিক ব্যবস্থার ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট ব্যবসা বেশ গুরুত্ববহ। সেখানে বলা হয় এর প্রায় ৬০-৭০ ভাগ প্ল্যানিং এবং বাকিটুকু মাঠে বাস্তবায়নের। যদিও শুধু এই ব্যবসার নয় বৈশ্বিক ভিশনারি পরিকল্পনাগুলোর প্রায় সবার ক্ষেত্রেও তাই। সে হিসাবে এই মহামারীর সময়ে সে অংশটুকু মনের বেদনায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন তাদের নিয়ে ভবিষ্যত বিশ্ব বাংলাদেশের সমস্যাগুলো নিয়ে কাজ করার সুযোগ আছে। যেমন বিএনপি জামায়াত-জোটের শাসনামলে ধর্ষণ সন্ত্রাসের শিকার পূর্ণিমা, তিনিও মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। ভবিষ্যত বিশ্ব পরিবারের অংশ হিসেবে বাংলাদেশেও শিশুশ্রম বন্ধ নিয়ে ধুয়া তোলার স্লোগান আছে। যদিও তা শুধুই দিবসকেন্দ্রিক উদযাপনের ঢঙেই। নইলে বিশ্ব জনসংখ্যায় এখনও শিশু শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় ১৫ কোটি ২০ লাখ হয় এবং এর মাঝে ৭ কোটি ৩০ লাখ অধিক ঝুঁকিপূর্ণও হয়! তবে এক্ষেত্রে বিশ্ব ‘সংখ্যায়’ না গিয়ে ‘আপনে ভাল তো জগত ভাল’ এই প্রবাদ নীতিতে পথচলা যৌক্তিক।

প্রাথমিক পরিকল্পনার অংশ হিসেবে বৃন্তহীন সন্তান উৎপাদন প্রক্রিয়া বন্ধ এবং ‘অনুদানমুখী পাঠশালা’ না খুলে ভবিষ্যত কর্মমুখী শিক্ষার আওতায় শিল্প বিপ্লবের জন্য বাংলাদেশকে প্রস্তুত করা প্রয়োজন। কারণ ভবিষ্যত বিশ্ব জগত শিল্প-সংস্কৃতিকে রোবটিক সায়েন্স, জেনেটিক সায়েন্স এবং মহাকাশ গবেষণা এসব নিয়ে সাজাবে। কাজেই সে গতিতে দেশের এ প্রজন্মকেও প্রস্তুত করতে সকল স্তর, শ্রেণির শিশু-কিশোরদের শিক্ষা ব্যবস্থাপনার আওতায় আনা জরুরী। এক্ষেত্রে শিশুশ্রমের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের নিয়ে সিজনাল মেকি কান্নায় না ভেসে, অনুদান নির্ভর পরিকল্পনাহীন শিক্ষা পথ ছেড়ে ভবিষ্যত বিশ্ব বাস্তবতার প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষা ব্যবস্থাপনা নির্মাণ প্রয়োজন।

এক্ষেত্রে ত্রাণ সহযোগিতায় ব্যক্তি উদ্যোগের মতো ব্যক্তিগত এবং সমবায় ভিত্তিতে ছোট ছোট ‘শিল্প-শিক্ষা প্রতিষ্ঠান’ গড়ে ওঠা জরুরী। যেখানে অংশগ্রহণের মাধ্যমে নির্মাণ হবে তার ভবিষ্যত জীবিকা নির্বাহের পন্থা। মৃত্যু ব্যতীত সবটাই অনিশ্চিত। তবু ওই অনিশ্চিত যাত্রার পূর্ব পর্যন্ত মানুষের জন্য কিছু কিছু সমাধান নির্মাণ সম্ভব। সে হিসেবে সহায়তার সংস্কৃতি ছেড়ে স্বাবলম্বী করে তোলার পথ নির্মাণ প্রয়োজন। আর এক্ষেত্রে দিসবকেন্দ্রিক শিশুশ্রমের প্যাকেজ প্রোগ্রাম যেমন কারা শিশু, কাকে শিশুশ্রম বলে, এসব প্রত্যাখ্যান করে বিশ্বব্যাপী প্রথাবিরোধী সংলাপের অংশ হিসেবে ছিন্নমূলের এই অংশটুকুকে ভবিষ্যত বিশ্ব বাস্তবতার চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় শিল্প উপযোগী শিক্ষার সারথী করার সংগ্রাম প্রয়োজন। কারণ এত বড় একটা অংশকে পাশ কাটিয়ে ভবিষ্যত বিশ্ব নেতৃত্বের মিছিলে টিকে থাকা অসম্ভব।

লেখক : হায়দার মোহাম্মদ জিতু, ছাত্রনেতা


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
রোববার থেকে সরকারি প্রাথমিকে মর্নিং স্কুল, খোলার প্রজ্ঞাপন জারি - dainik shiksha রোববার থেকে সরকারি প্রাথমিকে মর্নিং স্কুল, খোলার প্রজ্ঞাপন জারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শনিবারের ছুটি বহাল থাকছে - dainik shiksha প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শনিবারের ছুটি বহাল থাকছে ফের আন্দোলনের হুশিয়ারি চুয়েট শিক্ষার্থীদের - dainik shiksha ফের আন্দোলনের হুশিয়ারি চুয়েট শিক্ষার্থীদের গরমে কলেজে কোচিং, দুদিনে অসুস্থ ৮ ছাত্রী - dainik shiksha গরমে কলেজে কোচিং, দুদিনে অসুস্থ ৮ ছাত্রী কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে নিবন্ধিত শিক্ষক নিয়োগে এনটিআরসির নতুন নির্দেশনা - dainik shiksha নিবন্ধিত শিক্ষক নিয়োগে এনটিআরসির নতুন নির্দেশনা দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে জাল সনদে চাকরি করছে কয়েক হাজার হেলথ টেকনোলজিস্ট - dainik shiksha জাল সনদে চাকরি করছে কয়েক হাজার হেলথ টেকনোলজিস্ট ফের আন্দোলনের হুশিয়ারি চুয়েট শিক্ষার্থীদের - dainik shiksha ফের আন্দোলনের হুশিয়ারি চুয়েট শিক্ষার্থীদের আইনি লড়াইয়ে যাচ্ছেন শিক্ষক নেতা কাওছার শেখ - dainik shiksha আইনি লড়াইয়ে যাচ্ছেন শিক্ষক নেতা কাওছার শেখ please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0064051151275635