আর্থিক খাতের অপরাধ ও গোয়েন্দা কার্যক্রম

মনোয়ার হোসেন |

বাইশ বছর ধরে আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বা বাংলাদেশ ফিনান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট বিএফআইইউ (পূর্বেকার অ্যন্টি মানিলন্ডারিং বিভাগ) কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে অতি সাবধানতায়, যাদের অনেক কিছুই সব সময় দৃশ্যমান নয়। মাঝারি আকারের লোকবল নিয়ে এবং বিভিন্ন সূত্র (ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, রাজস্ব বোর্ড, সংবাদপত্র প্রভৃতি) থেকে প্রাপ্ত তথ্য বা রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করে তাদের অনুসন্ধান/তদন্ত পরিচালিত হয় এবং শেষে সংশ্লিষ্ট সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের কাছে সুপারিশ পেশ করা হয় তাদের করণীয় নির্দিষ্ট করে। তবে এই সংস্থার সুপারিশ বা পরামর্শ অনুযায়ী পদক্ষেপ ওই প্রতিষ্ঠানগুলো নেয় কি না তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। 

ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা আমদানি-রপ্তানি সংস্থা বা বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠানগুলো এখন পর্যন্ত সর্বক্ষেত্রে প্রচণ্ড ক্ষমতাবান। ফলে জাতীয় স্বার্থ সংশ্লিষ্ট সুপারিশগুলোর বাস্তবায়ন সরকারের প্রবল রাজনৈতিক সদিচ্ছার ওপর নির্ভরশীল হয়ে থাকে। অর্থাৎ সংস্থাটি স্বশাসিত হলেও তার সুপারিশ বাস্তবায়ন সরকারের সদিচ্ছার ওপর নির্ভরশীল থাকছে।

আর্থিক খাতে, বিশেষ করে ব্যাংকিং উপখাতে, সেবার ধরন প্রযুক্তি উন্নয়ন ও ব্যবহারের সঙ্গে সঙ্গে দ্রুত পাল্টাচ্ছে। দ্রুত পরিবর্তনশীল ডিজিটাল কৌশল অবলম্বন করে যতো রকম অপরাধ আর্থিক খাতে হচ্ছে ততো রকম অপরাধ রোধ করার সক্ষমতা থেকে বিএফআইইউ কিছু পিছিয়ে থাকলেও অপরাধের ধরন/পরিমাণ ইত্যাদি নির্দিষ্টকরণের ক্ষেত্রে সংস্থাটি পিছিয়ে আছে তা বলা যাবে না। ডিজিটাল প্রযুক্তিগত জ্ঞান আহরণ এবং অপরাধে প্রযুক্তির ব্যবহার সম্বন্ধে সংস্থাটি পিছিয়ে নেই। তবে যারা এই অপরাধ করেন তারা অবশ্যই অতি সতর্ক, অগ্রসর এবং শক্তিশালী।

আর্থিক খাতের অপরাধ অনিয়ম ইত্যাদি বিষয়ে বিএফআইইউ’র গত অর্থবছরের প্রতিবেদনে (২০২২-২৩) যে চিত্র ফুটে উঠেছে তা ভয়ংকর। প্রতিবেদনটির প্রকাশ উপলক্ষে পত ২০ ফেব্রুয়ারিতে আয়োজিত এক মতবিনিময় অনুষ্ঠানে যে বিষয়টি পরিষ্কারভাবে উঠে এসেছে তা হচ্ছে আর্থিক খাতের চরম অনিয়ম ও বিশংখলায় কাদের অবদান বা ভূমিকা, সাংস্থাটির সঙ্গে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের তুলনামূলক সহযোগিতা, ডিজিটাল অপরাধের প্রবণতা বৃদ্ধি, আমদানি-রপ্তানির আড়ালে অর্থপাচার, বর্হিদেশে সম্পদ স্থানান্তর, এবং বর্ধিতহারে সন্দেহজনক আর্থিক লেনদেন, সন্দেহজনক -অর্থপাচারের ঘটনা প্রতিবেদন অনুযায়ী পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় অনেক বেড়েছে। সহায়তা সহযোগিতা চুক্তির অভাব থাকায় অনেক দেশে থেকে সহায়তা (তথ্য) প্রাপ্তির সমস্যা রয়ে গেছে। 

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তাদের কাছে পাঠানো ঋণ সংক্রান্ত সন্দেজনক লেনদেনের সংখ্যা ৩৪১ (২০২১-২২) থেকে বেড়ে দাড়িয়েছে ৫২০টি। ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বিমা, ব্রোকারেজ হাউজসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বিএফআইইউতে সব মিলিয়ে সন্দেজনক লেনদেন প্রতিবেদন পাঠিয়েছিলো ১৪ হাজার ১০৬টি। পূর্ববর্তী বছরে ছিলো ৮ হাজার ৫৭১টি।

বাংলাদেশের অর্থনীতি ক্রমবর্ধমান। এই অর্থনীতিতে আর্থিক খাতের অপরাধও ক্রমবর্ধমান। যারা আর্থিক অনিয়ম ও অপরাধের সঙ্গে জড়িত তারা শক্তিশালী এবং প্রভাবশালী। এই প্রেক্ষিতে বিএফআইইউ’র কার্যক্রম পরিচালনা কঠিন এবং ঝুকিপূর্ণ। ভবিষ্যতে তা কঠিনতর হবে এই ধারণা অর্থনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট চিন্তাকোষ এবং সুচিন্তার অধিকারী সকলের। তাদের আশঙ্কা, অনিয়মের এই সামান্য চিত্র প্রকাশ সংস্থাটির কার্যক্রম আরো সীমাবদ্ধ করে দেয় কি না। 

শিক্ষাসহ সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গেই থাকুন। ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।

দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
প্রধানমন্ত্রীর কাছে এসএসসির ফল হস্তান্তর - dainik shiksha প্রধানমন্ত্রীর কাছে এসএসসির ফল হস্তান্তর এসএসসি পরীক্ষার ফল জানবেন যেভাবে - dainik shiksha এসএসসি পরীক্ষার ফল জানবেন যেভাবে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের জন্য সুখবর - dainik shiksha এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের জন্য সুখবর চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের অভিযুক্ত নারায়ণ চন্দ্র নাথের কাহিনী - dainik shiksha চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের অভিযুক্ত নারায়ণ চন্দ্র নাথের কাহিনী সনদ জালিয়াতিতে জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে - dainik shiksha সনদ জালিয়াতিতে জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে শিক্ষার্থীদের প্রযুক্তির উদ্ভাবক হওয়ার আহ্বান শিক্ষামন্ত্রীর - dainik shiksha শিক্ষার্থীদের প্রযুক্তির উদ্ভাবক হওয়ার আহ্বান শিক্ষামন্ত্রীর শিক্ষকদের বেতন আটকে সর্বজনীন পেনশন যোগ দিতে চাপের অভিযোগ - dainik shiksha শিক্ষকদের বেতন আটকে সর্বজনীন পেনশন যোগ দিতে চাপের অভিযোগ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে উপবৃত্তির সব অ্যাকাউন্ট নগদ-এ রূপান্তরের সময় ফের বৃদ্ধি - dainik shiksha উপবৃত্তির সব অ্যাকাউন্ট নগদ-এ রূপান্তরের সময় ফের বৃদ্ধি দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0027110576629639