সাহিত্যিক আহমদ ছফার ৭৭তম শুভ জন্মবার্ষিকী আজ

নিজস্ব প্রতিবেদক |

আজ ৩০ জুন, ২০২০ —মনীষী লেখক ও দার্শনিক আহমদ ছফার ৭৭তম জন্মবার্ষিকী। ১৯৪৩ খ্রিষ্টাব্দের এই দিনে চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার হাশিমপুর ইউনিয়নের গাছবাড়িয়া গ্রামে তাঁর জন্ম। পিতা মরহুম হেদায়েত আলী ওরফে ধন মিয়া। মা মরহুমা আসিয়া খাতুন। দুই ভাই চার বোনের মধ্যে ছফা ছিলেন দ্বিতীয়। তিনি ছিলেন একজন বাংলাদেশি লেখক, কবি ও সমাজবিজ্ঞানী। তার লেখায় বাংলাদেশি জাতিসত্তার পরিচয় নির্ধারণ প্রাধান্য পেয়েছে। প্রথাবিরোধী আচরণের পাশাপাশি নির্মোহ ও অকপট দৃষ্টিভঙ্গির জন্য আলোচিত ছিলেন।

আহমদ ছফা

বাংলাদেশের মাদরাসা শিক্ষা ও সাধারণ শিক্ষা সংস্কারে তার ভূমিকা অপরিসীম।

আহমদ ছফার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা শুরু হয় তার পিতার প্রতিষ্ঠিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দক্ষিণ গাছবাড়িয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। ১৯৬০ খ্রিষ্টাব্দে নিজের গ্রামের নিত্যানন্দ গৌরচন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন। ছাত্রাবস্থায় সুধাংশু বিমল দত্তের মাধ্যমে কৃষক সমিতি-ন্যাপ বা তৎকালীন গোপন কমিউনিস্ট পার্টির সাথে যুক্ত হন। মাস্টারদা সূর্যসেনের বিপ্লবী কর্মকাণ্ডে অনুপ্রাণিত হয়ে তারা কয়েকজন বন্ধু মিলে চট্টগ্রাম-দোহাজারী রেললাইন উপড়ে ফেলেন। পরে গ্রেফতার এড়াতে কিছুকাল পার্বত্য চট্টগ্রামে আত্মগোপন করেন।

১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দে পিএইচডি অভিসন্দর্ভের জন্য তিনি জাতীয় অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাকের সান্নিধ্যে আসেন। আমৃত্যু  তাঁদের মধ্যে সুসম্পর্ক বজায় থাকে। ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে ‘লেখক সংগ্রাম শিবির’ গঠন ও এর বিভিন্ন কার্যক্রমে সক্রিয় অংশ নেন। ৭ই মার্চ ‘স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম পত্রিকা’ হিসেবে প্রতিরোধ প্রকাশ করেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন এপ্রিল মাসে কলকাতা চলে যান। মুক্তিযুদ্ধের সমর্থনে সেখান থেকে দাবানল নামের পত্রিকা সম্পাদনা করেন। দেশ স্বাধীন হবার পর বাংলাদেশে ফিরে লেখালেখি করতে থাকেন। ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দে দৈনিক গণকণ্ঠ ধারাবাহিকভাবে ‘বুদ্ধিবৃত্তির নতুন বিন্যাস’ রচনা প্রকাশ করেন। ১৯৭৯ খ্রিষ্টাব্দে সিপাহী বিদ্রোহের ইতিহাস গ্রন্থ প্রকাশ পায়। ১৯৮০ খ্রিষ্টাব্দে দৈনিক ইত্তেফাকের সাংবাদিক নাজিমুদ্দিন মোস্তানের সহায়তায় কাঁটাবন বস্তিতে ‘শিল্পী সুলতান কর্ম ও শিক্ষাকেন্দ্র’ চালু করেন। বাংলা একাডেমি থেকে বাঙালি মুসলমানের মন প্রবন্ধগ্রন্থ প্রকাশ পায় ১৯৮১ খ্রিষ্টাব্দে।

ছফা মহাকবি গ্যোতের ফাউস্ট অনুবাদ শুরু করেন ১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দে। মুক্তধারা থেকে ফাউস্টের অনুবাদ বের হয় ১৯৮৬ খ্রিষ্টাব্দে। ১৯৯৩ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক উপন্যাস অলাতচক্র। স্বাধীন বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ গতিপ্রকৃতির গোপন-রহস্য, শৌর্য মৃত্যু ও কপটতার গীতিকা এই উপন্যাস। ১৯৯৬ খ্রিষ্টাব্দে পুষ্প বৃক্ষ এবং বিহঙ্গপুরাণ এবং অর্ধেক নারী অর্ধেক ঈশ্বরী প্রকাশিত হয়। ‘অর্ধেক নারী অর্ধেক ঈশ্বরী’ পূর্বে একটা সাপ্তাহিক পত্রিকায় প্রাণপূর্ণিমার চান নামে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হচ্ছিল। জাপানী ভাষায় পুষ্প বৃক্ষ এবং বিহঙ্গপুরাণ উপন্যাসের অনুবাদ প্রকাশ পায় ১৯৯৮ খ্রিষ্টাব্দে। বাংলাদেশের জাতীয় অধ্যাপক ও সমসাময়িক কালের বিশিষ্ট পণ্ডিত অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাকের প্রসঙ্গে রচিত ‘যদ্যপি আমার গুরু’ প্রকাশিত হয় ১৯৯৮ খ্রিষ্টাব্দে।

তার জীবদ্দশায় আহমদ ছফা রচনাবলি প্রকাশ শুরু হয়। ২০০১ খ্রিষ্টাব্দে আহমদ ছফা রচনাবলি দ্বিতীয় খণ্ড প্রকাশ পায়। জীবিত থাকাকালীন আহমদ ছফা বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় কলাম লিখতেন। তিনি লেখক শিবির পুরস্কার ও বাংলা একাডেমির সাদত আলী আখন্দ পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করেছেন। ১৯৮০ খ্রিষ্টাব্দে ইতিহাস পরিষদ পুরস্কার গ্রহণ করেছেন বলে জানা যায়। ২০০২ খ্রিষ্টাব্দে তাকে সাহিত্যে (মরণোত্তর) একুশে পদক প্রদান করা হয় ।

১৯৬২ খ্রিষ্টাব্দে চট্টগ্রাম নাজিরহাট কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন ছফা। একই বছরে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে। পরে বাংলা বিভাগে ক্লাস করা অব্যাহত রাখেননি। ১৯৬৭ খ্রিষ্টাব্দে ব্রাহ্মণবাড়িয়া কলেজ থেকে প্রাইভেটে পরীক্ষা দিয়ে দ্বিতীয় শ্রেণিতে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দে এমএ পরীক্ষা দেয়ার আগেই বাংলা একাডেমির পিএইচডি গবেষণা বৃত্তির জন্য আবেদন করেন এবং তিন বছরের ফেলোশিপ প্রোগ্রামের জন্য মনোনীত হন।

ছফার গবেষণার বিষয় ছিল ‘১৮০০ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ১৯৫৭ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত বাংলার মধ্যবিত্ত শ্রেণির উদ্ভব, বিকাশ, এবং বাংলার সাহিত্য-সংস্কৃতি ও রাজনীতিতে তার প্রভাব’। ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে প্রাইভেটে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে এমএ পরীক্ষা দেন। ১৯৮৬-তে জার্মান ভাষার ওপর গ্যোটে ইনস্টিটিউটের ডিপ্লোমা ডিগ্রিও লাভ করেন তিনি, যে জ্ঞান তাঁকে পরবর্তী সময়ে গ্যাটের অমর সাহিত্যকর্ম ফাউস্ট অনুবাদে সাহস জুগিয়েছিল।

সাহিত্যের প্রায় প্রতিটি শাখায় তিনি প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন। গল্প, গান, উপন্যাস, কবিতা, প্রবন্ধ, অনুবাদ, ইতিহাস, ভ্রমণকাহিনী মিলিয়ে তিরিশটির অধিক গ্রন্থ রচনা করেছেন। আহমদ ছফার প্রথম গ্রন্থ একটি উপন্যাস- সূর্য তুমি সাথী। প্রকাশিত হয় ১৯৬৭ খ্রিষ্টাব্দে।স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম গ্রন্থ হিসেবে মুক্তধারা থেকে প্রকাশ পায় তার প্রবন্ধ গ্রন্থ জাগ্রত বাংলাদেশ। প্রকাশকাল শ্রাবণ ১৩৭৮ বা জুলাই ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে।

১৯৬২ খ্রিষ্টাব্দে চট্টগ্রাম নাজিরহাট কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন ছফা। একই বছরে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে। পরে বাংলা বিভাগে ক্লাস করা অব্যাহত রাখেননি। ১৯৬৭ খ্রিষ্টাব্দে ব্রাহ্মণবাড়িয়া কলেজ থেকে প্রাইভেটে পরীক্ষা দিয়ে দ্বিতীয় শ্রেণিতে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দে এমএ পরীক্ষা দেয়ার আগেই বাংলা একাডেমির পিএইচডি গবেষণা বৃত্তির জন্য আবেদন করেন এবং তিন বছরের ফেলোশিপ প্রোগ্রামের জন্য মনোনীত হন।

ছফার গবেষণার বিষয় ছিল ‘১৮০০ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ১৯৫৭ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত বাংলার মধ্যবিত্ত শ্রেণির উদ্ভব, বিকাশ, এবং বাংলার সাহিত্য-সংস্কৃতি ও রাজনীতিতে তার প্রভাব’। ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে প্রাইভেটে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে এমএ পরীক্ষা দেন। ১৯৮৬-তে জার্মান ভাষার ওপর গ্যোটে ইনস্টিটিউটের ডিপ্লোমা ডিগ্রিও লাভ করেন তিনি, যে জ্ঞান তাঁকে পরবর্তী সময়ে গ্যাটের অমর সাহিত্যকর্ম ফাউস্ট অনুবাদে সাহস জুগিয়েছিল।

সাহিত্যের প্রায় প্রতিটি শাখায় তিনি প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন। গল্প, গান, উপন্যাস, কবিতা, প্রবন্ধ, অনুবাদ, ইতিহাস, ভ্রমণকাহিনী মিলিয়ে তিরিশটির অধিক গ্রন্থ রচনা করেছেন। আহমদ ছফার প্রথম গ্রন্থ একটি উপন্যাস- সূর্য তুমি সাথী। প্রকাশিত হয় ১৯৬৭ খ্রিষ্টাব্দে।স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম গ্রন্থ হিসেবে মুক্তধারা থেকে প্রকাশ পায় তার প্রবন্ধ গ্রন্থ জাগ্রত বাংলাদেশ। প্রকাশকাল শ্রাবণ ১৩৭৮ বা জুলাই ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে।

২০০১ খ্রিষ্টাব্দের ২৮ জুলাই ৫৮ বছর বয়সে অসুস্থ অবস্থায় ঢাকা কমিউনিটি হাসপাতালে নেয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। পরদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদে জানাজা শেষে মিরপুরের শহীদ বুদ্ধজীবী গোরস্থানে তার দাফন হয়।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
কাল খুলছে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শনিবারও চালু ক্লাস - dainik shiksha কাল খুলছে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শনিবারও চালু ক্লাস সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি - dainik shiksha সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি উপবৃত্তির সব অ্যাকাউন্ট নগদ-এ রূপান্তরের সময় বৃদ্ধি - dainik shiksha উপবৃত্তির সব অ্যাকাউন্ট নগদ-এ রূপান্তরের সময় বৃদ্ধি শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি - dainik shiksha বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে ১৩ বছরের কম বয়সী শিশুদের হাতে স্মার্টফোন নয় - dainik shiksha ১৩ বছরের কম বয়সী শিশুদের হাতে স্মার্টফোন নয় একই স্কুলের দুই ছাত্রীকে বিয়ের পর আরেক ছাত্রীকে ল্যাব সহকারীর অনৈতিক প্রস্তাব - dainik shiksha একই স্কুলের দুই ছাত্রীকে বিয়ের পর আরেক ছাত্রীকে ল্যাব সহকারীর অনৈতিক প্রস্তাব দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ ১২ মে - dainik shiksha এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ ১২ মে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0028538703918457