যৌন হয়রানির মামলাআহসান উল্লাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ফেরদৌস লাপাত্তা!

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

যৌন হয়রানির অভিযোগে দায়ের করা মামলায় জামিন নিয়ে লাপাত্তা আহসান উল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বরখাস্ত করা শিক্ষক মাহফুজুর রশীদ ফেরদৌস। কলাবাগান থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে করা ওই মামলায় হাইকোর্ট থেকে জামিন নিয়ে তিনি পালিয়েছেন। মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) কালের কণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন আশরাফ-উল-আলম।

ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭-এ বিচারাধীন এই মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করলেও তাঁকে গ্রেপ্তার করা যাচ্ছে না। আবার ছাত্রীকে যৌন হয়রানির তিন বছর পার হলেও মামলার বিচারকাজ শেষ করা যাচ্ছে না সাক্ষীরা উপস্থিত না হওয়ায়।

মামলার নথি থেকে জানা যায়, হাইকোর্ট থেকে জামিন পেয়ে ২০১৭ সালের ১৮ এপ্রিল ট্রাইব্যুনালে জামিননামা দাখিল করেন শিক্ষক ফেরদৌস। পরদিন তিনি কারাগার থেকে মুক্তি পান। এরপর আর তিনি ট্রাইব্যুনালে হাজির হননি। ২০১৭ সালের ১ জুন তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন ট্রাইব্যুনাল। দেড় বছরেরও বেশি সময় আগে জারি করা গ্রেপ্তারি পরোয়ানাবলে ওই শিক্ষককে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। এমনকি এসংক্রান্ত কোনো প্রতিবেদনও ট্রাইব্যুনালে দাখিল করা হয়নি। নথি থেকে জানা যায়, মাহফুজুর রশীদ ফেরদৌসের বাসস্থান হোল্ডিং নম্বর ১২/এ, ইস্কাটন গার্ডেন, রমনা, ঢাকার ঠিকানায় পরোয়ানা পাঠানো হয়।

যৌন হয়রানির অভিযোগে ২০১৬ সালের ৪ মে রাতে কলাবাগান থানায় ফেরদৌসের বিরুদ্ধে মামলা করেন ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আসাদুল্লাহ আল সায়েম। মামলার পর ওই দিনই কলাবাগানের বাসা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের পর তিনি যৌন হয়রানির কথা স্বীকার করে আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিও দেন।

শিক্ষক ফেরদৌস আহসান উল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ ছাত্রীকে বিভিন্ন সময় ভয়ভীতি ও পরীক্ষার আগে প্রশ্নপত্র সরবরাহ এবং মৌখিক পরীক্ষায় বেশি নম্বর পাইয়ে দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে যৌন সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা করেন। এক ছাত্রীর সরলতার সুযোগে ভয়ভীতি দেখিয়ে নিজ বাসস্থানে নিয়ে ধর্ষণের চেষ্টাও করেন। ওই ছাত্রীর নগ্ন ছবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেন। এ ঘটনায় শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করে। বিচারের দাবিতে সোচ্চার হয়। পরে মামলা হয়। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শিক্ষক ফেরদৌসকে বহিষ্কার করে।

ঘটনাটি তদন্ত করেন পুলিশের নারী সহায়তা ও তদন্ত বিভাগের উপপরিদর্শক (এসআই) আফরোজা আইরিন কলি। ছাত্রীদের সঙ্গে যৌন হয়রানি, নগ্ন ছবি প্রকাশ, ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হওয়ায় ফেরদৌসের বিরুদ্ধে ২০১৬ সালের ১৪ আগস্ট অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দেওয়া হয়। মামলায় ২৮ জনকে সাক্ষী করা হয়। একই বছরের ৩ নভেম্বর ট্রাইব্যুনাল ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন।

মামলার নথি থেকে আরো জানা যায়, ২৮ জন সাক্ষীর মধ্যে এ পর্যন্ত মাত্র সাতজন সাক্ষী সাক্ষ্য দিয়েছেন। অন্যদের ট্রাইব্যুনাল থেকে বারবার সমন দেওয়া হয়। পরে তাঁদের বিরুদ্ধে অজামিনযোগ্য গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করলেও কোনো সাক্ষীকে হাজির করতে পারেনি সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ। ট্রাইব্যুনাল সূত্রে জানা গেছে, ফের আগামী ৯ মে এই মামলার শুনানির দিন ধার্য রয়েছে।

ট্রাইব্যুনালের বেঞ্চ সহকারী মতিয়ার রহমান জানান, আসামি ফেরদৌসের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়ে আছে। তিনি জামিনে গিয়ে পলাতক হয়েছেন। এ মামলায় সাতজন সাক্ষীর সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। অন্য সাক্ষীরা হাজির না হওয়ায় তাঁদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।

ঢাকার আদালতের ফৌজদারি মামলা পরিচালনাকারী আইনজীবী দেলোয়ার হোসেন বলেন, যৌন হয়রানি একটি মারাত্মক অপরাধ। শিক্ষক কর্তৃক ছাত্রী হয়রানি আরো মারাত্মক। নৈতিকতাবিবর্জিত এসব শিক্ষকের বিচার দ্রুত হলে কিছুটা হলেও যৌন হয়রানির পরিমাণ হ্রাস পেত।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
কাল থেকে শিক্ষা বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী চলবে সব প্রাথমিক বিদ্যালয় - dainik shiksha কাল থেকে শিক্ষা বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী চলবে সব প্রাথমিক বিদ্যালয় বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার মান বাড়ানোর নির্দেশ রাষ্ট্রপতির - dainik shiksha বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার মান বাড়ানোর নির্দেশ রাষ্ট্রপতির ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার দাবিতে দেশজুড়ে সংহতি সমাবেশ - dainik shiksha ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার দাবিতে দেশজুড়ে সংহতি সমাবেশ সব মাদরাসার ওয়েবসাইট ও তথ্য হালনাগাদের নির্দেশ - dainik shiksha সব মাদরাসার ওয়েবসাইট ও তথ্য হালনাগাদের নির্দেশ অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক : দুই মন্ত্রণালয় যা করবে - dainik shiksha অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক : দুই মন্ত্রণালয় যা করবে নার্সিং-মিডওয়াইফারি ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ - dainik shiksha নার্সিং-মিডওয়াইফারি ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় সিনিয়র আইনজীবীরা বিচার বিভাগের স্বার্থে কথা বলবেন, আশা প্রধান বিচারপতির - dainik shiksha সিনিয়র আইনজীবীরা বিচার বিভাগের স্বার্থে কথা বলবেন, আশা প্রধান বিচারপতির দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0028150081634521