ইউএনও নিয়োগ পেতে চাকরির বয়স ১০ বছর হতে হবে

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

সরকারের মাঠ প্রশাসনে দক্ষতা নিশ্চিত করতে ও শৃঙ্খলা অক্ষুণ্ন রাখতে সংশ্লিষ্ট নীতিমালায় আনা হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ সংশোধন। নীতিমালা সংশোধন হলে কারো চাকরি ১০ বছর পূর্ণ না হলে তিনি ইউএনও হিসেবে নিয়োগলাভের যোগ্য হবেন না। এছাড়া সহকারী কমিশনার (ভূমি) থেকে সরাসরি কোনো কর্মকর্তা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ পাবেন না। এ ক্ষেত্রে সহকারী কমিশনার পদের কার্যকাল শেষ হলে তাকে জেলা প্রশাসনের কার্যালয়ে শিক্ষানবিশ হিসেবে অন্তত এক বছর কাজ করার অভিজ্ঞতা অর্জন করতে হবে। জেলা প্রশাসক নিয়োগের ক্ষেত্রেও অন্যান্য যোগ্যতার সঙ্গে মাঠ প্রশাসনে ইউএনও এবং অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক হিসেবে দুই বছরের কাজের অভিজ্ঞতাসহ মোট পাঁচ বছরের অভিজ্ঞতার বিধান যুক্ত করা হচ্ছে। অবশ্য এই বিধান আগেও ছিল। পদোন্নতির ধাক্কায় মাঠ প্রশাসনে কর্মকর্তার সংকট মোকাবিলা করতে গিয়ে পরবর্তী সময় এই শর্ত শিথিল করা হয় বলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে। বৃহস্পতিবার (৩১ ডিসেম্বর) ইত্তেফাক পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন শ্যামল সরকার।

প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, সম্প্রতি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব শেখ মো. ইউসুফ হারুন ঢাকা বিভাগীয় কর্মকর্তাদের সভায় মাঠ প্রশাসনের কিছু কর্মকর্তার ব্যক্তিগত আচার-আচরণ ও যোগ্যতা-দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তার ঐ বক্তব্যে মাঠ প্রশাসনে রীতিমতো ধাক্কা লাগে। সেদিনের সভায় বিরক্তি প্রকাশ করে সচিব বলেছিলেন, মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের মধ্যে শৃঙ্খলা ভঙ্গ করার প্রবণতা দিন দিন বাড়ছে। প্রতিদিন তিন থেকে চার জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের শুনানি করতে হয়। পেকুয়ার যে ইউএনওর বিরুদ্ধে তিনি তোপ দেগেছিলেন সেই ইউএনও জনপ্রশাসনে চিঠি দিয়ে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়েছেন। ভাঙ্গার ইউএনওর বন্দুক দিয়ে ঊর্ধ্বমুখী গুলি করার ঘটনায় বিস্ময় প্রকাশ করেন তিনি। এখন ঐ ইউএনওর অপসারণ দাবিতে এলাকায় চলছে আন্দোলন কর্মসূচি। বহিরাঙ্গনে সংগীত পরিবেশন, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অধস্তন কর্মকর্তার অফিস পরিদর্শন ইত্যাদি কর্মকাণ্ড মোবাইলে ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ারও সমালোচনা করেন সচিব। এক্ষেত্রে নাম চলে আসে ডিসিদের। কথা আসে ব্যাচভিত্তিক সমিতি গঠন আর এর পদধারীদের ঢাকায় পোস্টিংয়ের তদবির নিয়ে।

প্রশাসনের দীর্ঘ ইতিহাসে অধস্তন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সতর্কতামূলক এ ধরনের কঠোর সমালোচনা খোদ সচিবের গলায় এই প্রথম। তাই এটি নিয়ে প্রশাসনের সর্বস্তরে ইতিবাচক আলোচনা অব্যাহত রয়েছে। সচিবের বক্তব্য সংক্রান্ত ভিডিও ইউটিউবে ভাইরাল হয়েছে। এ প্রসঙ্গে গতকাল বুধবার কথা হয় সচিব ইউসুফ হারুনের সঙ্গে। তার জবাব সভাটি অভ্যন্তরীণ ছিল। কীভাবে তা প্রকাশ্যে এসেছে সেটি তিনি খতিয়ে দেখছেন। তবে তিনি বিশ্বাস করেন, অধস্তন কর্মকর্তাদের ভুলত্রুটি ধরিয়ে দেওয়া তার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। 

এক প্রশ্নের জবাবে সচিব বলেন, চাকরির পাঁচ বছর হলেই ইউএনও হবার বিধান সংশোধন করে ১০ বছর করার চিন্তা চলছে। এসিল্যান্ড থেকে ইউএনও না করে ডিসি অফিসে ম্যাজিস্ট্রেসির ওপর শিক্ষানবিশ ছয় মাস থেকে এক বছরকাল নির্ধারণ করা হতে পারে। এখন অবশ্য এই বিধান আছে কিন্তু ক্ষেত্রবিশেষ এসিল্যান্ড থেকে সরাসরি ইউএনও পদে নিয়োগ প্রদানের নজিরও রয়েছে। খুব অল্প সময়ে মাঠ প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পাওয়ায় অনেকের কাছে এর গুরুত্ব যথাযথভাবে অনুসরণ করা সম্ভব হয় না। অন্যদিকে ডিসি হতে যে সব যোগ্যতা লাগে তার মধ্যে মাঠ প্রশাসনে কাজ করার অভিজ্ঞতার বিষয়টি অন্যতম। আগে মাঠ প্রশাসনে পাঁচ বছরের অভিজ্ঞতার বিধান ছিল। এখন দুই বছর করা হয়েছে। পুনরায় এটিকে পাঁচ বছর করার চিন্তা চলছে।

ব্যাচভিত্তিক সমিতি গঠন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কর্মকর্তাদের কর্মক্ষেত্র ছাড়া অন্যান্য ক্ষেত্রে স্ট্যাটাস প্রদান বন্ধ করা হবে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রণালয়ের এক জন পদস্থ কর্মকর্তা বলেন, সরকারি কর্মচারী শৃঙ্খলা ও আপিল বিধিমালাবহির্ভূত সব কর্মকাণ্ডই নিষিদ্ধ। কিন্তু এটা জেনেও যারা তা করেন তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে হয়। বিধিমালা অনুযায়ী প্রজাতন্ত্রের কোনো কর্মকর্তা এমন আচরণ করবেন না যা প্রকাশ্যে জনমানুষের দৃষ্টিতে কুরুচিপূর্ণ মনে হয়। যদি এমন কেউ করেন সেটি অসদাচরণ বলে গণ্য হবে; যার সর্বোচ্চ বিভাগীয় শাস্তি চাকরি থেকে বরখাস্ত।

সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. আকবর আলি খান এ প্রসঙ্গে বলেন, শুধু মাঠ প্রশাসন নয়, প্রশাসনের সর্বত্রই দক্ষতা ও যোগ্যতার অভাব স্পষ্ট। এটি এক দিনে হয়নি। নিয়োগ থেকে শুরু করে পদায়ন, বদলি, পদোন্নতি বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দলীয় বিবেচনা প্রাধান্য পাওয়ায় উপযুক্ত আমলা বেছে নেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। কোনো কর্মকর্তার জনসমক্ষে কী ধরনের আচরণ হওয়া উচিত তা বিভিন্ন নিয়ম বিধিতে উল্লেখ আছে। মোট কথা সব ক্ষেত্রে একটা ড্যাম কেয়ার ভাব দেখা যায়। এটি ঐ কর্মকর্তার ব্যক্তিগত জীবনের জন্য যেমন খারাপ তেমনি প্রশাসনের জন্যও খারাপ।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় - dainik shiksha স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটে প্রথম লামিয়া - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটে প্রথম লামিয়া প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত ফল আগামী সপ্তাহ - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত ফল আগামী সপ্তাহ ছাত্রলীগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিলিস্তিনের পতাকা উড়াবে কাল - dainik shiksha ছাত্রলীগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিলিস্তিনের পতাকা উড়াবে কাল চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী যা জানালেন - dainik shiksha চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী যা জানালেন গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাস ৩৬.৩৩ শতাংশ - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাস ৩৬.৩৩ শতাংশ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.002918004989624