এবারের উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফলে দেখা যাচ্ছে জিপিএ-৫ ও পাসের হার কমেছে। বলা হচ্ছে এটা গত ১০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম। এর কারণ হিসেবে যেসব কথা বলা হচ্ছে, তার মধ্যে রয়েছে প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে কঠোর পদক্ষেপ, ‘অস্বাভাবিকভাবে’ উত্তরপত্র মূল্যায়নের ধারা বন্ধ করা এবং কোনো কোনো বিষয়ের প্রশ্নপত্র কঠিন হওয়া।
ফল প্রকাশের পর শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেছেন, তাঁরা এখন শিক্ষার গুণগত মানের ওপর জোর দিয়েছেন। তাঁর এই মন্তব্যে এমন ধারণা হতে পারে যে এর আগের বছরগুলোতে গুণগত মানের ওপর যথেষ্ট কিংবা যথাযথ জোর দেওয়া হয়নি। প্রশ্নপত্র ফাঁসের হিড়িকের সঙ্গে আরও একটি ধারণা ছিল যে উত্তরপত্র মূল্যায়ন এমনভাবে হতে হবে, যাতে পাসের হার বেশি হয়। যদিও এর সত্যতা যাচাইয়ে কখনো তদন্ত হয়েছে বলে জানা যায় না, তবু লোকমুখে এমন কথা কিছুটা বিশ্বাসযোগ্যতা পেয়েছিল।
সব ধরনের পাবলিক পরীক্ষায় পাসের হার ও জিপিএ-৫ পাওয়ার হার বৃদ্ধির প্রবণতার বিপরীত যে চিত্র এবারের এইচএসসির ফলাফলে লক্ষ করা গেল, তা যদি উল্লিখিত পদক্ষেপগুলোর কারণেই ঘটে থাকে, তাহলে এটাকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখা উচিত। কারণ, ভালো ফল ও বেশি নম্বর পাওয়ার সঙ্গে শিক্ষার্থীদের গুণগত মান সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল না। অনেক বিশেষজ্ঞের পর্যবেক্ষণ ছিল, গুণগত মান নিম্নগামী হয়েছে। এবারের পরীক্ষা ও এর মূল্যায়নের মধ্য দিয়ে আমাদের শিক্ষার যদি সঠিক দিকে যাত্রা শুরু হয়, তাহলেই মঙ্গল।
অবশ্য আমরা মনে করি, পরীক্ষার ফল ভালো হওয়া এবং শিক্ষার মান বাড়ানো—উভয়ই গুরুত্বপূর্ণ। এবার চার লাখের বেশি পরীক্ষার্থী অকৃতকার্য হয়েছেন; সংখ্যাটি বেশ বড়। এত বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অকৃতকার্য হলেন কেন? এটা কি স্বাভাবিক? তাঁদের ঘাটতি কোথায় ছিল? এসব বিষয় খতিয়ে দেখা উচিত এবং ঘাটতির জায়গাগুলো পূরণের উদ্যোগ নেওয়া একান্ত প্রয়োজন। উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে এক বছরে চার লাখের বেশি শিক্ষার্থীর আটকে যাওয়ার আরও একটি দিক হলো তাঁদের একটা বড় অংশের শিক্ষাজীবন এখানেই শেষ হয়ে যাবে। এটা রোধ করতে হবে। পরীক্ষায় কৃতকার্য হওয়ার উপযোগী শিক্ষা সব শিক্ষার্থীকে দিতে হবে।
পরীক্ষায় ভালো ফল করা ও বেশি নম্বর পাওয়া কোনো শিক্ষার্থীর প্রধান বা একমাত্র লক্ষ্য হওয়া উচিত নয়। এটা শিক্ষার্থীদের বোঝাতে হবে, তার আগে বুঝতে হবে অভিভাবক ও শিক্ষকদের। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি শুধু শিক্ষার সূচক বৃদ্ধির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে চলবে না। সবার প্রধান ও চূড়ান্ত লক্ষ্য হওয়া উচিত শিক্ষার্থীর উন্নত মানের শিক্ষা নিশ্চিত করার মাধ্যমে পরীক্ষায় ভালো ফল ও বেশি নম্বর পাওয়া। এ জন্য প্রয়োজন মুখস্থবিদ্যা, কোচিং, প্রাইভেট টিউশন, নোটবই, গাইড বই ইত্যাদি ত্যাগ করে পাঠ্যবই পড়া, আত্মস্থ করা এবং শ্রেণিকক্ষে পাঠদান ও পাঠ গ্রহণের ওপর জোর দেওয়া।
সূত্র: প্রথম আলো