উচ্চ মাধ্যমিকে এগিয়ে অনার্স-মাস্টার্সে পিছিয়ে সিদ্ধেশ্বরী গার্লস কলেজ

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরী গার্লস কলেজে ১০টি বিষয়ে স্নাতক (সম্মান) এবং ছয়টি বিষয়ে মাস্টার্স বা স্নাতকোত্তর পর্যায়ে পড়ালেখার সুযোগ থাকলেও এর ঐতিহ্য মূলত উচ্চ মাধ্যমিক ঘিরেই। কারণ উচ্চ মাধ্যমিকে ফল যতটা ভালো হয় ততটা ভালো হয় না স্নাতক ও স্নাতকোত্তরে। তবে মেয়েদের প্রতিষ্ঠান হিসেবে অনেক অভিভাবকেরই আস্থা আছে কলেজটির ওপর। নিউ বেইলি রোডে ১৯৬৬ খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত কলেজটিতে বর্তমানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার। শিক্ষক আছেন ১২১ জন। মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) কালের কণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন শরীফুল আলম সুমন ও তানজিদ বসুনিয়া।

প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, সম্প্রতি কলেজটিতে গিয়ে শিক্ষার্থীদের কাছে নানা সমস্যার কথাও শোনা যায়। সেখানে দূর-দূরান্ত থেকে ছাত্রীরা পড়তে গেলেও কোনো পরিবহনব্যবস্থা নেই। কলেজে ক্যান্টিন থাকলেও খাবারের মান নিয়ে বিস্তর অভিযোগ শিক্ষার্থীদের। সংস্কৃতিচর্চাসহ পাঠক্রমবহির্ভূত কার্যক্রমে উচ্চ মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ থাকলেও অনার্স-মাস্টার্সের তেমন নেই। 

কলেজের নিজস্ব পরিবহনব্যবস্থা না থাকায় প্রতিনিয়ত ছাত্রীদের নানা সমস্যায় পড়তে হয়। উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘এটা মেয়েদের কলেজ, তাই কর্তৃপক্ষের উচিত বাসের ব্যবস্থা করা। কিন্তু আমাদের সমস্যা নিয়ে তাদের ভাবার সময় কম।’

উত্তরা থেকে কলেজে যান ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষার্থী বদরুন নাহার পান্না। তিনি বলেন, ‘সকালের ক্লাস ধরার জন্য প্রতিদিন দুই-আড়াই ঘণ্টা আগে বাসা থেকে বের হতে হয়। কিন্তু তার পরও জ্যামে আটকে থাকায় মাঝেমধ্যে ক্লাস মিস হয়ে যায়। তা ছাড়া লোকাল বাসে যাতায়াত করতে নানা সমস্যায় পড়তে হয় মেয়েদের।’

বাসাবো থেকে নিয়মিত কলেজে গিয়ে ক্লাস করেন স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী প্রিয়াংকা বাউল। কলেজে রিকশায় যাতায়াত করতে প্রতিদিন তাঁর খরচ হয় ২০০ টাকা। তিনি বলেন, ‘আমাদের মেয়েদের জন্য পরিবহনব্যবস্থাটা খুবই দরকার।’

এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের জন্য ক্যান্টিন থাকলেও সেখানকার খাবার নিয়ে হতাশা ব্যক্ত করেছেন অনেক শিক্ষার্থী। ব্যবস্থাপনা বিভাগের স্নাতকোত্তর স্তরের শিক্ষার্থী সাদিয়া রহমান বলেন, ‘আমাদের ক্যান্টিনের পরিবেশ যতটা সুন্দর, ক্যান্টিনের খাবারের মান ততটাই খারাপ।’ একই বিভাগের শিক্ষার্থী শিমু আক্তার বলেন, ‘ক্যান্টিনের খাবারের মান সাধারণ মানেরও নিচে। এই দিকে আমাদের কলেজ কর্তৃপক্ষের একটু দৃষ্টিপাত করা উচিত।’

কলেজটিতে গার্লস গাইড, রোভার স্কাউট, বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর (বিএনসিসি), ইংলিশ ল্যাঙ্গুয়েজ ক্লাব, বাংলা সংঘ ও মাদকবিরোধী সংগঠন আছে। তবে এসব সংগঠনের সদস্যদের প্রায় সবাই উচ্চ মাধ্যমিকের শিক্ষার্থী। উচ্চ মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীরা সংস্কৃতিচর্চায় এগিয়ে থাকলেও স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের তেমন কোনো অংশগ্রহণ নেই।

অনার্সের কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আগে স্নাতক শেষ করতে চার বছরে মোট খরচ হতো প্রায় এক লাখ ২০ হাজার টাকা। এর মধ্যে মাসিক টিউশন ফি দিতে হতো ৬০০ টাকা, ফরম পূরণ বাবদ পাঁচ হাজার টাকা এবং প্রতিবছর ভর্তি ফি ১২ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা করে দিতে হতো। বর্তমানে তা বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। এখন মাসিক টিউশন ফি এক হাজার ২৭৫ টাকা। ফরম পূরণ ও ভর্তি ফিও বেড়েছে। অনার্স শেষ করতে দুই লাখ টাকা ব্যয় হয় এখন।

সিদ্ধেশ্বরী গার্লস কলেজ থেকে ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় বিজ্ঞান, ব্যবসায় শিক্ষা ও মানবিক শাখা থেকে মোট এক হাজার ৪০ শিক্ষার্থী অংশ নিয়ে কৃতকার্য হয়েছে এক হাজার ২৮ জন, পাসের হার ছিল ৯৮ দশমিক ৮৫ শতাংশ। ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় তিন শাখা থেকে মোট এক হাজার ৩৯ জন অংশ নিয়ে পাস করে ৮৯১ শিক্ষার্থী। সে বছর পাসের হার ছিল ৮৫ দশমিক ৭৬ শতাংশ।

সর্বশেষ স্নাতক (সম্মান) চূড়ান্ত পরীক্ষার প্রকাশিত (২০১৭ খ্রিষ্টাব্দে) ফলে ছয়টি বিভাগে ৩২৪ জনের মধ্যে সিজিপিএ ৩-এর ওপরে পেয়েছেন ১৫৪ জন এবং এর নিচে পেয়েছেন ১৭০ জন। ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দের প্রকাশিত ফলেও ছয়টি বিভাগ থেকে মোট ৩২৯ জনের মধ্যে সিজিপিএ ৩-এর ওপরে পান ১১৮ জন, এর নিচে পেয়েছেন ২১০ জন।

২০১৭ খ্রিষ্টাব্দের স্নাতকোত্তর পর্যায়ে মোট পাঁচটি বিভাগ থেকে ১৬২ জন পরীক্ষার্থী অংশ নেন। তাঁদের মধ্যে ১৩৭ শিক্ষার্থীর ফল সিজিপিএ ৩-এর ওপরে আর বাকি ২৫ জনের ফল তিনের নিচে।

কলেজের অধ্যক্ষ কানিজ মাহমুদা আক্তার বলেন, ‘আমরা কোয়ান্টিটির চেয়ে কোয়ালিটির ওপর বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকি। তাই গুণগত শিক্ষা নিশ্চিত করতে আপাতত বিভাগের সংখ্যা কম। তবে এই সংখ্যা ভবিষ্যতে বাড়বে। এ ছাড়া ভালো শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার পাশাপাশি শিক্ষকদের বছরে দুটি সেশনে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করি। এ জন্য পর পর দুইবার সেরা মহিলা কলেজের গৌরব আমরা অর্জন করেছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের শুধু উচ্চ মাধ্যমিকেই নয়, স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষার্থীরাও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করে। তা ছাড়া আমরা বার্ষিক পিকনিক এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকি।’ শিক্ষার্থীদের পরিবহনের দাবির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে চাননি।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
কাল থেকে শিক্ষা বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী চলবে সব প্রাথমিক বিদ্যালয় - dainik shiksha কাল থেকে শিক্ষা বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী চলবে সব প্রাথমিক বিদ্যালয় বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার মান বাড়ানোর নির্দেশ রাষ্ট্রপতির - dainik shiksha বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার মান বাড়ানোর নির্দেশ রাষ্ট্রপতির ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার দাবিতে দেশজুড়ে সংহতি সমাবেশ - dainik shiksha ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার দাবিতে দেশজুড়ে সংহতি সমাবেশ সব মাদরাসার ওয়েবসাইট ও তথ্য হালনাগাদের নির্দেশ - dainik shiksha সব মাদরাসার ওয়েবসাইট ও তথ্য হালনাগাদের নির্দেশ অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক : দুই মন্ত্রণালয় যা করবে - dainik shiksha অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক : দুই মন্ত্রণালয় যা করবে নার্সিং-মিডওয়াইফারি ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ - dainik shiksha নার্সিং-মিডওয়াইফারি ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় সিনিয়র আইনজীবীরা বিচার বিভাগের স্বার্থে কথা বলবেন, আশা প্রধান বিচারপতির - dainik shiksha সিনিয়র আইনজীবীরা বিচার বিভাগের স্বার্থে কথা বলবেন, আশা প্রধান বিচারপতির দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.011230945587158