এমপিওভুক্তির দাবিতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে দুই প্রস্তাব

নিজস্ব প্রতিবেদক |
স্বীকৃতিপ্রাপ্ত সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান একযোগে এমপিওভুক্তির দাবির স্বপক্ষে প্রধানমন্ত্রীর কাছে  লিখিত দুই প্রস্তাবনা দিয়েছেন অনশনরত ননএমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা। রোববার (১ জুলাই) দুপুর ২টার দিকে  ননএমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক কর্মচারী ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ ড. বিনয় ভুষণ রায় এবং  সিনিয়র যুগ্ম  সম্পাদক মোঃ আনোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল  প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে গিয়ে লিখিত এ প্রস্তাবনা দেন। প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব-২ ওয়াহিদা আক্তার  এটি গ্রহণ করেন।
 
প্রধানমন্ত্রীর কাছে দেওয়া প্রথম প্রস্তাবনায়  বরাদ্দকৃত অর্থ অপর্যাপ্ত হলে সকল নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওর আওতায় এনে আংশিক বেতন চালু করে পরবতী অর্থবছরে বেতনের সমন্বয়ের কথা বলা হয়েছে।

দ্বিতীয় প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, দীর্ঘ ১৫-২০ বছর এমপিওভুক্ত না হওয়ায় আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো দুর্বল হয়ে পড়েছে। এসকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা যাচাই করার উদ্দেশ্যে এমপিওভুক্তির পর ৩ বছর সময় প্রদান। এসময়কালে সক্ষমতা অর্জনে ব্যর্থ হলে বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ। এই প্রস্তাবের আলোকে সারাদেশের সকল নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান একযোগে যাতে এমপিওভুক্ত হয় তার জন্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করলে বঞ্চিত নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা চির কৃতজ্ঞতার বন্ধনে আবদ্ধ হবে।

এদিকে রোববার (১ জুলঅই) ৭ম দিনের মত জাতীয় প্রেসক্লাবের বিপরীত পাশের সড়কে আমরণ অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন শিক্ষকরা।শুক্রবার রাত পর্যন্ত অনশনে ১২৮ শিক্ষক অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাদের মধ্যে ৩৫ শিক্ষককে স্যালাইন দেয়া হয়েছে। রোববার দুপুরে অনশন স্থলে কথা হয়,রংপুর জেলার বদরগঞ্জের খামারপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিষয়ের সহকারী শিক্ষক মো: লাবলু মণ্ডলের সঙ্গে। তিনি দৈনিকশিক্ষা ডটকমের  এ প্রতিবেদকের কাছে হাউমাউ করে কেঁদে ফেলে বলেন, ১৫ বছর ধরে শিক্ষকতা পেশায় আছেন। কোনো বেতনকড়ি পান না। সংসার চালাত অভাবের তাড়নায় তিনি রাতে ভ্যান চালান। বৃদ্ধ মা,স্ত্রী ও সন্তানসহ ৫ জনের ভরণ পোষণ চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন।লাবলু মণ্ডল বলেন,এখন যেভাবে বেঁচে আছি, এর থেকে মরে যাওয়া ভাল। ঢাকার রাস্তায় যখন এসেছি। এমপিওর দাবি পূরণ না হলে আর জীবিত ঘরে ফিরতে চাই না। এরপর আবার হাউমাউ করে কেঁদে ওঠেন ননএমপিও এ শিক্ষক।

২০১০ খ্রিস্টাব্দের পর কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হয়নি। গত বছরের ডিসেম্বর ও চলতি বছরের জানুয়ারির শুরুতে এসব শিক্ষক-কর্মচারী জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে টানা পাঁচদিন আমরণ অনশনের পর প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে তাঁর তৎকালীন একান্ত সচিব সাজ্জাদুল হাসান এমপিওভুক্তির আশ্বাস দিলে আন্দোলন স্থগিত করা হয়। কিন্তু অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ২০১৮-১৯ অর্থবছরের যে বাজেট বক্তৃতা দেন, সেখানে নতুন এমপিওভুক্তির বিষয়ে স্পষ্ট বক্তব্য না থাকায় শিক্ষক-কর্মচারীরা গত ১০ জুন থেকে ফের রাজপথে নেমেছেন।

বর্তমানে সারাদেশে এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা প্রায় ২৮ হাজার। এগুলোতে শিক্ষক কর্মচারী আছেন প্রায় ৫ লাখ। তাদের বেতন-ভাতা বাবদ মাসে খরচ হয় প্রায় সাড়ে ৯০০ কোটি টাকা। এর বাইরে স্বীকৃতি পাওয়া ননএমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে ৫ হাজার ২৪২টি। এগুলোতে শিক্ষক কর্মচারী আছেন ৭৫ থেকে ৮০ হাজার। স্বীকৃতির বাইরে আছে ২ হাজারেরও বেশি ননএমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা  অধিদপ্তরের সূত্রমতে, স্বীকৃতিপ্রাপ্ত সব প্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করা হলে এবং ওই সব প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৮০ হাজার শিক্ষক-কর্মচারীকে এমপিওভুক্ত করলে মাসে আরও প্রায় দেড়শ কোটি টাকা খরচ হবে। যদিও সরকারের পরিকল্পনা হলো হাজারখানেক প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা।

 

 

 

 

 


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
যতো লিখেছি, ছিঁড়েছি তার বেশি - dainik shiksha যতো লিখেছি, ছিঁড়েছি তার বেশি সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দুই কবির জন্মবার্ষিকী পালনের নির্দেশ - dainik shiksha সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দুই কবির জন্মবার্ষিকী পালনের নির্দেশ শিক্ষকদের চাকরির মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেই - dainik shiksha শিক্ষকদের চাকরির মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেই বিদ্যালয়ের ক্লাস থামিয়ে ভোট চাইলেন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী - dainik shiksha বিদ্যালয়ের ক্লাস থামিয়ে ভোট চাইলেন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে নতুন শিক্ষাক্রমের ৩১ পাঠ্যবইয়ে ১৪৭ ভুল - dainik shiksha নতুন শিক্ষাক্রমের ৩১ পাঠ্যবইয়ে ১৪৭ ভুল বজ্রপাতে মাদরাসার ২১ ছাত্র আহত, হাসপাতালে ১১ - dainik shiksha বজ্রপাতে মাদরাসার ২১ ছাত্র আহত, হাসপাতালে ১১ তত্ত্বাবধায়ককে বাধ্য করে ঢাবি শিক্ষকের পিএইচডি - dainik shiksha তত্ত্বাবধায়ককে বাধ্য করে ঢাবি শিক্ষকের পিএইচডি please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0025930404663086