করোনা : জুমার নামাজে ঝুঁকি এড়ানোর নির্দেশনা মানেননি মুসল্লিরা

নিজস্ব প্রতিবেদক |

জুমার নামাজ আদায়ের সময় গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন মসজিদে অনুসরণ করা হয়নি ইসলামী ফাউন্ডেশনের নির্দেশনা। করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে বাসা থেকে অজু ও সুন্নাত নামাজ আদায় করার নির্দেশনা দিয়েছিল ইসলামী ফাউন্ডেশন। কিন্তু এই নির্দেশনা মানেননি অনেক মুসল্লি। তবে জুমার নামাজের খুতবায় ইসলামিক ফাউন্ডেশন এই দিকনির্দেশনা স্মরণ করিয়ে দেয়া হয় বলে মসজিদের খতিবরা জানান।

আলেমদের পরামর্শে ইসলামিক ফাউন্ডেশন জুমার নামাজ ও জামাতে মুসল্লিদের অংশগ্রহণ সীমিত করার কথা বললেও তা মানা হচ্ছে না। বরং অনেক মসজিদের ভেতরে মুসল্লিদের জায়গা না হওয়ায় রাস্তায় নামাজ পড়তেও দেখা গেছে। এছাড়া, জুমার বয়ান, খুতবা, জামাত ও দোয়া সংক্ষিপ্ত করা, জামাতের কাতারে ফাঁকাভাবে দাঁড়ানোর পরামর্শ দেয়া হলেও তা মানা হচ্ছে না। তবে কোন কোন মসজিদের প্রবেশমুখে মুসল্লিদের হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিতে দেখা গেছে। কোথাও কোথাও ওজু খানায় সাবানও দেয়া হয়।

গত ২৪ মার্চ ইসলামিক ফাউন্ডেশন দেশের খ্যাতনামা আলেমদের সঙ্গে করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে বিরাজমান পরিস্থিতিতে জনগণের সুরক্ষা বিষয়ে বৈঠক করে। সেই বৈঠকে আলেমরা মসজিদগুলোতে জুমার নামাজ ও জামাতে মুসল্লিদের সীমিত রাখার পরামর্শ দেন। এরপর ২৯ মার্চ আলেমদের নিয়ে ফের বৈঠক করে ইফা। পরে ইফার পক্ষ থেকে জানানো হয়, মসজিদে নিয়মিত আজান, ইকামত, জামাত ও জুমার নামাজ অব্যাহত থাকবে। যারা জুমা ও জামাতে যাবেন তারা সবাই যেন যাবতীয় সুরক্ষা ব্যবস্থা অবলম্বন করেন। ওযু করে নিজ নিজ ঘরে সুন্নাত ও নফল আদায় করবেন। শুধু জামাতের সময় মসজিদে যাবেন এবং ফরজ নামাজ শেষে দ্রুত ঘরে চলে আসবেন। তবে এসবের তেমন কোন প্রতিফলন দেখা না যাওয়ায় করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

সংক্ষিপ্ত খুতবা ও সুরার মাধ্যমে গতকাল রাজধানীর বায়তুল মোকাররম জাতীয়সহ দেশের বিভিন্ন মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করা হয়। তবে মসজিদে মুসল্লিদের উপস্থিতি ছিল বেশি। মসজিদে জায়গা সংকট হওয়া অনেক এলাকায় রাস্তায় নামাজ পড়তে দেখা গেছে মুসল্লিদের। তবে যারা নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের সংস্পর্শে এসেছেন; যাদের মধ্যে উপসর্গ আছে; যারা উপদ্রুত অঞ্চল থেকে এসেছেন; যারা উপসর্গওয়ালা মানুষের সংস্পর্শে ছিলেন, তারা ছাড়াও অসুস্থ, অসুস্থদের সেবায় নিয়োজিত, বয়োবৃদ্ধ, দুর্বল, নারী ও শিশু এবং যারা মসজিদে গিয়ে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা করেন তাদেরকে মসজিদে না যাওয়ার আহ্বান জানানো হয় খুতবায়।

মসজিদের খতিবরা মুসল্লিদের উদ্দেশ্যে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের দেয়া এই দিকনির্দেশনাগুলোও তুলে ধরেন। এ বিষয়ে রামপুরার ছালামবাগ জামে মসজিদে জুমার নামাজের আগে খুতবায় ইমাম বলেন, ওই সমস্ত সমস্যায় যারা ভুগছেন তারা যদি জেনেশুনে মসজিদে আসেন, কোরআর-সুন্নাহের কথামত আলেম-ওলামাদের দিকনির্দেশনা অমান্য করেন তাহলে গুনাহ হবে। আপনার (আক্রান্ত) দ্বারা যদি কোন সুস্থ মানুষ আক্রান্ত হয় তাহলে এর জন্য আপনি দায়ী থাকবেন, তা আল্লাহর কাছে ক্ষমার অযোগ্য গুনাহ হবে।

এছাড়া বাকিরা মসজিদে জুমা ও পাঁচ ওয়াক্তের জামাতে অংশ নিতে চাইলে তাদের সতর্কতা হিসেবে সবসময় সব ধরনের সুরক্ষা ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানানো হয়। সুন্নাত ও নফল নামাজ আদায় করে শুধুমাত্র ফরজ নামাজ নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে কাতারবন্দী হয়ে জামাতে আদায় করে দ্রুত মসজিদ থেকে বের হওয়ার আহ্বান জানানো হয়। সাবান দিয়ে বার বার হাত ধোয়া, মাস্ক পরা, জীবাণুনাশক দিয়ে মসজিদ ও ঘরের মেঝে পরিষ্কার রাখার কথাও বলা হয়েছে।

গতকাল বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদসহ ঢাকার বিভিন্ন মসজিদে অধিকাংশ মুসল্লিরা মুখে মাস্ক পরে জুমার নামাজ আদায় করেছেন। মসজিদের ইমামও সংক্ষিপ্ত খুতবা ও ছোট সুরার মাধ্যমে অল্প সময়ে জুমার নামাজ আদায় করেন। বায়তুল মোকাররম মসজিদে জুমার নামাজের পর শান্তিনগরের বাসিন্দা আনোয়ার পারভেজ বলেন, ‘করোনাভাইরাসের এই ক্রান্তিকালে মানুষ অনেকটা ভয়-আতঙ্কে আছে। আজকে মসজিদে মুসল্লিদের উপস্থিতি আমার কাছে আগের চেয়ে একটু কম মনে হয়েছে। তারপরও যারা জুমার নামাজ আদায় করেছেন তাদের প্রায় সবার মুখে মাস্ক পরা ছিল। জুমার নামাজ ছাড়া অন্যান্য ওয়াক্তের নামাজ গত ১০ দিন ধরে তিনি বাসাতেই আদায় করছেন বলে জানান।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
এসএসসি পরীক্ষার ফল জানবেন যেভাবে - dainik shiksha এসএসসি পরীক্ষার ফল জানবেন যেভাবে সনদ জালিয়াতিতে জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে - dainik shiksha সনদ জালিয়াতিতে জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে শিক্ষার্থীদের প্রযুক্তির উদ্ভাবক হওয়ার আহ্বান শিক্ষামন্ত্রীর - dainik shiksha শিক্ষার্থীদের প্রযুক্তির উদ্ভাবক হওয়ার আহ্বান শিক্ষামন্ত্রীর নবম পে-স্কেলসহ সরকারি কর্মচারীদের ১০ দাবি - dainik shiksha নবম পে-স্কেলসহ সরকারি কর্মচারীদের ১০ দাবি শিক্ষকদের বেতন আটকে সর্বজনীন পেনশন যোগ দিতে চাপের অভিযোগ - dainik shiksha শিক্ষকদের বেতন আটকে সর্বজনীন পেনশন যোগ দিতে চাপের অভিযোগ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে উপবৃত্তির সব অ্যাকাউন্ট নগদ-এ রূপান্তরের সময় ফের বৃদ্ধি - dainik shiksha উপবৃত্তির সব অ্যাকাউন্ট নগদ-এ রূপান্তরের সময় ফের বৃদ্ধি দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0047409534454346