কর্তাদের খুশি না করলে নড়ে না এমপিও ফাইল

নিজস্ব প্রতিবেদক |

নতুন শিক্ষক-কর্মচারীদের এমপিওভুক্তি, সহকারী অধ্যাপক বা জ্যেষ্ঠ প্রভাষক পদে পদোন্নতি বা উচ্চতর গ্রেড ইত্যাদি সুবিধা পেতে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে রাজশাহী অঞ্চলের কলেজ পর্যায়ের শিক্ষক-কর্মচারীদের। আবেদন করে যোগাযোগ না করলে মাসের পর মাস ফাইল পড়ে থাকছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের আঞ্চলিক কার্যালয়ে। কিন্তু একই কলেজের যেসব শিক্ষক-কর্মচারী যোগাযোগ করে কর্তাবাবুদের তুষ্ট করছেন, তাদের আবেদন অনুমোদন যথারীতিই হচ্ছে। কর্তাদের সন্তুষ্টি অর্জনে জেলা ও উপজেলায় সক্রিয় রয়েছে বিশেষ সিন্ডিকেট। এ নিয়ে এমপিও বঞ্চিতদের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি হয়েছে।

এমপিও নীতিমালা অনুসারে, প্রতি জানুয়ারি, মার্চ, মে, জুলাই, সেপ্টেম্বর ও নভেম্বর মাসে নতুন এমপিওভুক্তি, সহকারী অধ্যাপক বা জ্যেষ্ঠ প্রভাষক পদে পদোন্নতি, উচ্চতর গ্রেড দেয়া হয়। বেজোড় মাসগুলোতে এমপিও কমিটির সভা করে শিক্ষক কর্মচারীদের এসব সুবিধার অনুমোদন দেয় মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের এমপিও কমিটি। এজন্য প্রতি এমপিও মাসের আগের মাসে, যেমন- জানুয়ারি মাসের এমপিও জন্য ডিসেম্বর মাসের ৮ তারিখের মধ্যে আঞ্চলিক পরিচালক বরাবর প্রতিষ্ঠান প্রধানদের আবেদন করতে হয়। আর আঞ্চলিক পরিচালকরা এমপিও মাসের অর্থাৎ জানুয়ারি মাসের ১০ তারিখের মধ্যে আবেদন নিষ্পত্তি করে ইএমআইএস সেলে পাঠান। 

শিক্ষকরা বলছেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে জারি করা একাধিক আদেশ ও এমপিও নীতিমালায় শিক্ষকদের হয়রানি না করতে বা ফাইল পাঠাতে দেরি না করতে নির্দেশনা দেয়া আছে। সরকারি নির্দেশনা অনুসারে, অনলাইনে আবেদন পাওয়ার পর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা তা দ্রুত সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করবেন এবং নিষ্পত্তি, অনুমোদন ও প্রক্রিয়াকরণ শেষে পরবর্তী পর্যায়ে তা পাঠাবেন বা রিজেক্ট করবেন। ডিসেম্বর মাসে আবেদন করা শিক্ষকদের আর্থিক সুবিধা জানুয়ারি মাসে নিষ্পত্তি হওয়ার কথা। কিন্তু মার্চ মাসেও তাদের আবেদন নিষ্পত্তি হয়নি। মে মাসের এমপিওর জন্য আবেদন গ্রহণ করা হলেও যেসব শিক্ষক গত ডিসেম্বর মাসে এমপিও আবেদন করেছিলেন তাদের আবেদন আগের মতই আছে। আবেদনে হাতও দেয়া হয়নি। 

শিক্ষকদের অনেকে বলছেন, ডিসেম্বর মাসে এমপিও, উচ্চতর গ্রেড বা পদোন্নতির আবেদন করে যেসব শিক্ষক কর্মকতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের ‘চাহিদা পূরণ’ করেছেন, তাদের আবেদন নিষ্পত্তি হয়েছে। তাদের বিষয়টি নিষ্পত্তি হয়েছে জানুয়ারি মাসেই। কিন্তু যারা যোগাযোগ করতে পারেননি তাদের ফাইল এখনো পড়ে আছে। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে এক শিক্ষক দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, আঞ্চলিক পরিচালকের মাধ্যমেই এমপিওভুক্ত হতে হবে। এ বিষয়ে মন্তব্য করে বিপদে পড়তে চাই না। নাম প্রকাশ না করার শর্ত দিলে তিনি বলেন, এক এমপিও মাস মিস হওয়া মানে দুই মাস পিছিয়ে যাওয়া। আর তিন এমপিও মিস মানে হলো ছয় মাস পেছানো। কিন্তু, আর্থিক সুবিধা না দিলে কাজ এগুবে না। 

দৈনিক আমাদের বার্তার অনুসন্ধানে জানা গেছে, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের রাজশাহী অঞ্চলের পরিচালক ড. কামাল হোসেন। তার বিরুদ্ধে ঘুষ বাণিজ্যসহ নানা অভিযোগ আছে। তিনি ১২ কোটি টাকা এমপিও বাণিজ্য করেছেন বলে অভিযোগ আছে। শিক্ষকদের হয়রানি করেন বলেও অভিযোগ আছে। 
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন শিক্ষক দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, একটি ডিগ্রি কলেজে ২ জন তৃতীয় শিক্ষক তাদের এমপিওভুক্তির জন্য ২ লাখ ৫৫ হাজার করে মোট পাঁচ লাখ ১০ হাজার টাকা দিয়েছেন। ওই কলেজে ইতোমধ্যে অন্তত ১৫ জন প্রভাষক সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পেয়েছেন। যারা জন প্রতি ১৫ হাজার টাকা করে উৎকোচ দিয়েছেন তাদেরই এক সহকর্মীর মাধ্যমে।

অপর এক কর্মচারী দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, আমি সামান্য ল্যাব সহকারী পদে চাকরি নিয়েছি। ডিসেম্বরে আবেদন করেছি। ৮ এপ্রিল পর্যন্ত আমার আবেদন মূল্যায়ন হয়নি। এখন যদি রিজেক্ট করে তাহলে গত তিন এমপিও মাস হারালাম। মানে ছয় মাস বেতন বঞ্চিত। 

এ বিষয়ে রাজশাহীর আঞ্চলিক পরিচালক ড. কামাল হোসেনের যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেন নি। মোবাইল ফোনে মেসেজ পাঠালেও সাড়া দেননি।  

সম্প্রতি দৈনিক শিক্ষাডটকম ও দেশ টিভির উদ্যোগে আয়োজিত ‘শিক্ষা বৈঠকী’ অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ বলেন, শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির জন্য যদি কেউ হয়রানি করে থাকেন, তাকে পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে। শিক্ষকদের হয়রানি করার কোনো অভিযোগের প্রমাণ পেলে কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। আমি ডিজি থাকতে কেউ শিক্ষকদের এমপিওভুক্তি নিয়ে হয়রানি করে পার পাবেন না।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
নিবন্ধিত শিক্ষক নিয়োগে এনটিআরসির নতুন নির্দেশনা - dainik shiksha নিবন্ধিত শিক্ষক নিয়োগে এনটিআরসির নতুন নির্দেশনা জাল সনদে চাকরি করছে কয়েক হাজার হেলথ টেকনোলজিস্ট - dainik shiksha জাল সনদে চাকরি করছে কয়েক হাজার হেলথ টেকনোলজিস্ট কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ফের আন্দোলনের হুশিয়ারি চুয়েট শিক্ষার্থীদের - dainik shiksha ফের আন্দোলনের হুশিয়ারি চুয়েট শিক্ষার্থীদের আইনি লড়াইয়ে যাচ্ছেন শিক্ষক নেতা কাওছার শেখ - dainik shiksha আইনি লড়াইয়ে যাচ্ছেন শিক্ষক নেতা কাওছার শেখ দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না - dainik shiksha সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় - dainik shiksha প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট - dainik shiksha রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0047609806060791