কোটার সিদ্ধান্ত রাষ্ট্রপতির হাতে, চাকরিতে প্রবেশের বয়স বাড়ছে

শ্যামল সরকার |

সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত যাচ্ছে রাষ্ট্রপতির হাতে। আর চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩০ বছরের পরিবর্তে বাড়িয়ে ৩২ বছর করা হতে পারে। তবে একইসঙ্গে অবসরের বয়স বাড়ানোর বিষয়টিও বিবেচনায় রয়েছে। দুটি বিষয়েই সরকার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। চাকরিতে প্রবেশের বয়স বাড়ানোর বিষয়ে একটি সার্কুলার শিগগির জারি করা হবে। আর কোটার বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য রাষ্ট্রপতির রেফারেন্স চাওয়া হবে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা বলেন, সংসদীয় কমিটি চাকরির বয়স এন্ট্রি লেভেলে ৩৫ ও এক্সিট লেভেলে ৬৫ বছর করার প্রস্তাব দিয়েছে। এ প্রস্তাব পুরোপুরি রক্ষা করা যাবে কি না সেটি পর্যালোচনা করা হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত উভয় দিকে দুই বছর করে বাড়ানো হতে পারে। তবে অবসরের বয়স বাড়াতে গেলে ১৯৭৪ সালের গণকর্মচারী আইন সংশোধন করতে হবে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, শিগগির চাকরিতে প্রবেশের বয়স বাড়ানো সংক্রান্ত সার্কুলার জারির সম্ভাবনা রয়েছে।

এ দিকে কোটা বাতিল বিষয়ে সিদ্ধান্তের জন্য রাষ্ট্রপতির রেফারেন্স চাওয়া হচ্ছে। সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী যদি কোনো সময়ে রাষ্ট্রপতির নিকট প্রতীয়মান হয় যে আইনের এরূপ কোনো প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছে বা উত্থাপনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে যা এমন ধরনের বা এমন জনগুরুত্বপূর্ণ যে সেই সম্পর্কে সুপ্রিম কোর্টের মতামত গ্রহণ করা প্রয়োজন তা হলে তিনি প্রশ্নটি আপিল বিভাগের বিবেচনার জন্য প্রেরণ করতে পারবেন এবং উক্ত বিভাগ স্বীয় বিবেচনায় প্রশ্নটি সম্পর্কে রাষ্ট্রপতিকে স্বীয় মতামত জ্ঞাপন করতে পারবেন।

প্রসঙ্গত, সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি সম্পূর্ণ বাতিল করার ক্ষেত্রে ইতোমধ্যে গুরুতর আইনি প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। আপিল বিভাগ ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা সংরক্ষণের জন্য রায় প্রদান করেছেন। এ রায়ের বিরুদ্ধে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কোনো পক্ষ থেকে আপিল করা হয়নি। এমতাবস্থায় কি করণীয় সে বিষয়ে কোটা বাতিল ও সংরক্ষণ বিষয়ে সুপারিশ প্রণয়নের জন্য গঠিত সচিব কমিটি অ্যাটর্নি জেনারেলের কাছে পরামর্শ চেয়ে গত ১৬ আগস্ট চিঠি প্রেরণ করেন। ২০ আগস্ট ফিরতি চিঠিতে অ্যাটর্নি জেনারেল মতামতটি রাষ্ট্রপতির রেফারেন্সের জন্য প্রেরণের পরামর্শ দেন বলে জানা গেছে।

জানতে চাইলে সচিব কমিটির সভাপতি ও মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম গতকাল শনিবার বলেন, মুক্তিযোদ্ধা কোটার বিষয়ে করণীয় কি হবে সে বিষয়ে রাষ্ট্রপতির রেফারেন্স চাওয়া হবে। রেফারেন্সটি প্রস্তুত করবে আইন মন্ত্রণালয়। আইন সচিব দেশে ফিরলেই রাষ্ট্রপতির কাছে রেফারেন্স পাঠানো হবে।

সরকারি চাকরিতে কোনো ধরনের কোটা রাখতে চায় না সচিব কমিটি। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধা কোটা সংরক্ষণ করতে আপিল বিভাগের যে রায় রয়েছে, সম্পূর্ণ কোটা বাতিলের ক্ষেত্রে সেটা এখন বড় অন্তরায়। জামালউদ্দিন সিকদার বনাম রাষ্ট্র মামলায় হাইকোর্ট মুক্তিযোদ্ধা পোষ্যদের জন্য সংরক্ষিত ৩০ ভাগ কোটা সংরক্ষণের বিষয়ে রায় দেয়। ওই রায়ে বলা হয়, কোনো ক্ষেত্রে কোটা পূরণ সম্ভব না হলে তা খালি রাখতে হবে। এ রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। পরে আপিল বিভাগ তার রায়ের পর্যবেক্ষণে বলে, মুক্তিযোদ্ধা কোটা থাকবে। যদি কোটায় উপযুক্ত প্রার্থী না পাওয়া যায় তা হলে তা মেধা কোটা থেকে পূরণ করা যাবে।

সরকার গত ২ জুলাই মন্ত্রিপরিষদ সচিবের নেতৃত্বে সাত সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে। ওই কমিটি প্রথম শ্রেণিসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সৃষ্ট প্রায় ২৫৭ ধরনের কোটা  পর্যালোচনা করে কোটা সম্পূর্ণ উঠিয়ে দেওয়ার পক্ষে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। 

এ দিকে বর্তমানে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩০ বছর, মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের ক্ষেত্রে ৩২ বছর। আর সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের চাকরি থেকে অবসরের বয়স ৫৯ বছর। মুক্তিযোদ্ধাদের অবসরের বয়স ৬০ বছর। তবে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ৬৫ ও বিচারপতিরা ৬৭ বছর বয়সে অবসরের সুবিধা পাচ্ছেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব ফয়েজ আহম্মদ বলেন, স্থায়ী কমিটির সুপারিশ আমাদের পর্যালোচনা করতে হবে। আমরা কতটুকু, কী বাস্তবায়ন করতে পারব বা বাস্তবায়ন করতে পারব কি না সেটা দেখব। আমরা এ ব্যাপারে পেপার্স তৈরি করছি। আমাদের কিছু সময় দিতে হবে। তারপর যথাযথ কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত  নেবেন।

 

সৌজন্যে: ইত্তেফাক


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
কাল থেকে শিক্ষা বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী চলবে সব প্রাথমিক বিদ্যালয় - dainik shiksha কাল থেকে শিক্ষা বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী চলবে সব প্রাথমিক বিদ্যালয় বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার মান বাড়ানোর নির্দেশ রাষ্ট্রপতির - dainik shiksha বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার মান বাড়ানোর নির্দেশ রাষ্ট্রপতির ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার দাবিতে দেশজুড়ে সংহতি সমাবেশ - dainik shiksha ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার দাবিতে দেশজুড়ে সংহতি সমাবেশ সব মাদরাসার ওয়েবসাইট ও তথ্য হালনাগাদের নির্দেশ - dainik shiksha সব মাদরাসার ওয়েবসাইট ও তথ্য হালনাগাদের নির্দেশ অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক : দুই মন্ত্রণালয় যা করবে - dainik shiksha অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক : দুই মন্ত্রণালয় যা করবে নার্সিং-মিডওয়াইফারি ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ - dainik shiksha নার্সিং-মিডওয়াইফারি ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় সিনিয়র আইনজীবীরা বিচার বিভাগের স্বার্থে কথা বলবেন, আশা প্রধান বিচারপতির - dainik shiksha সিনিয়র আইনজীবীরা বিচার বিভাগের স্বার্থে কথা বলবেন, আশা প্রধান বিচারপতির দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0027279853820801